দুইবার বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়ে উড়োজাহাজটির খোঁজে তল্লাশি চালানো হলেও উল্লেখ করার মতো কিছু পাওয়া যায়নি।
Published : 09 Mar 2024, 02:18 PM
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। ঘটনাটি বিশ্বের বিমান চলাচলের ইতিহাসে অন্যতম রহস্যময় ঘটনা হয়ে আছে।
২০১৪ সালের ৮ মার্চ কুয়ালালামপুর থেকে চীনের রাজধানী বেইজিং যাওয়ার সময় ২৩৯ জন যাত্রীসহ বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটি পথ থেকে হারিয়ে যায়।
যা ঘটেছিল
স্যাটেলাইট তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, উড়োজাহাজটি সম্ভবত ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাঞ্চলে অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলের কাছাকাছি কোথাও বিধ্বস্ত হয়েছে। কিন্তু দুইবার বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়ে উড়োজাহাজটির খোঁজে তল্লাশি চালানো হলেও উল্লেখ করার মতো কিছু পাওয়া যায়নি।
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিংয়ের পথে যাত্রা শুরু করার প্রায় ৪০ মিনিট পর এর থেকে শেষ বার্তাটি পাওয়া গিয়েছিল।
উড়োজাহাজটি ভিয়েতনামের আকাশসীমায় ঢোকার পর ক্যাপ্টেন জাহারি আহমদ শাহ্ এক বার্তায় বলেছিলেন, “শুভরাত্রি, মালয়েশীয় থ্রি সেভেন জিরো।”
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই এর রেডিও সংকেত গ্রহণ-প্রেরণের যন্ত্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়; এর অর্থ উড়োজাহাজটিকে আর সহজে অনুসরণ করা যাবে না।
সামরিক রাডারে দেখা গেছে, উড়োজাহাজটি এর গমণপথ ছেড়ে উল্টো পথে মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চল ও পেনাং দ্বীপের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে আন্দামান সাগর হয়ে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের উত্তরপাশ দিয়ে এগিয়ে যায়, এরপর দক্ষিণ দিকে বাঁক নেওয়ার পর থেকে সব যোগাযোগ হারিয়ে যায়।
পানির নিচে অনুসন্ধান
উড়োজাহাজটির খোঁজে মালয়েশিয়া, চীন ও অস্ট্রেলিয়া ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাঞ্চলের ১ লাখ ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে পানির নিচে অনুসন্ধান শুরু করে। ইনমারসাট স্যাটেলাইট ও উড়োজাহাজটির মধ্যে হওয়া স্বয়ংক্রিয় সংযোগের তথ্যের ওপর নির্ভর করে অনুসন্ধানটি শুরু করা হয়।
এ অনুসন্ধানে ১৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার ব্যয় করা হয়। কিন্তু দুই বছর অনুসন্ধানের পরও উড়োজাহাজটির কোনো চিহ্নের খোঁজ না পেয়ে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
২০১৮ সালে মালয়েশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের অনুসন্ধান সংস্থা ঔশন ইনফিনিটির ‘ফল না পেলে ফি নেই’ ভিত্তিতে তিন মাসের একটি অনুসন্ধান প্রস্তাব গ্রহণ করে। চুক্তি অনুযায়ী, শুধু উড়োজাহাজটির খোঁজ পেলেই কোম্পানিটেকে অর্থ দেওয়ার কথা ছিল মালয়েশিয়ার।
এই অনুসন্ধানে মূল সন্দেহভাজন এলাকার উত্তরে ভারত মহাসাগরের ১ লাখ ১২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অনুসন্ধান চালানো হয়। এই অনুসন্ধানেও কোনো ফল না মেলার পর ২০১৮ সালের মে-তে খোঁজাখুঁজি বন্ধ করা হয়।
যেসব ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে
এ পর্যন্ত আফ্রিকা ও ভারত মহাসাগরের উপকূল বরাবর সাগরজলে ভেসে আসা উড়োজাহাজের ৩০টি খণ্ডাংশ সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু এরমধ্যে মাত্র তিনটি পাখার খণ্ডাংশ নিখোঁজ উড়োজাহাজ এমএইচ৩৭০-র বলে নিশ্চিত হয়।
উড়োজাহাজটির সম্ভাব্য অবস্থান এলাকার আয়তন হ্রাস করার আশায় অধিকাংশ ধ্বংসাবশেষ বিশ্লেষণে ড্রিফট প্যাটার্ন ব্যবহার করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন
এমএইচ৩৭০ ফ্লাইটের নিখোঁজের বিষয়ে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ৪৯৫ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, বোয়িং ৭৭৭-কে অন্যপথে নিতে সম্ভবত ইচ্ছাকৃতভাবে এর কন্ট্রোল উদ্দেশ্য হাসিলে কাজে লাগানো হয়। কিন্তু কে এর জন্য দায়ী তদন্তকারীরা তা নির্ধারণ করতে পারেননি।
প্রতিবেদনে কুয়ালালামপুর ও হো চি মিন সিটির এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল কেন্দ্র যে ভুলগুলো করেছে তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে সেগুলো এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তবে উড়োজাহাজটির কী হয়েছে, প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত টানা হয়নি। উড়োজাহাজের ধ্বংসবশেষ পাওয়া গেলে তার ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে জানিয়েছে।
ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
এমএইচ৩৭০ ফ্লাইটটির ধ্বংসাবশেষের স্থান খুঁজে না পাওয়ায় বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ডানপালা মেলেছে। এগুলোর মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটি থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বিধ্বস্ত করা থেকে শুরু করে অন্য গ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীরা উড়োজাহাজটি নিয়ে গেছে এমন উদ্ভট তত্ত্বও আছে।
সম্প্রতি কিছু বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ বলেছেন, সবচেয়ে সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হচ্ছে সম্ভবত একজন অভিজ্ঞ পাইলট উড়োজাহাজটিকে ইচ্ছাকৃতভাবে ঘুরিয়ে নিয়ে গেছেন। তদন্তকারীরা বলেছেন, উড়োজাহাজটির পাইলট ও সহকারী পাইলটের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, আর্থিক, প্রশিক্ষণ বা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সন্দেহজনক কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি।
নতুন করে অনুসন্ধান করা হবে?
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম গত সপ্তাহে জানিয়েছেন, যদি এটি করার জন্য কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে তাহলে এমএইচ৩৭০ ফ্লাইটের অন্তর্ধানের বিষয়ে তার সরকার নতুন করে তদন্ত শুরু করতে চায়।
মালয়েশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী অ্যান্থনি লোকে জানিয়েছেন, মার্কিন কোম্পানি ঔশন ইনফিনিটিকে একটি নতুন অনুসন্ধান প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভা প্রস্তাবটি অনুমোদন করলে নতুন করে অনুসন্ধান শুরু করার বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা চাওয়া হবে।