পার্লামেন্টে ভোট ছাড়াই পেনশন সংস্কারের চেষ্টা, ফ্রান্সে বড় বিক্ষোভের আশঙ্কা

কট্টর-ডানপন্থি রাজনীতিক মারিন লু পেন প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্নের পদত্যাগও দাবি করেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2023, 06:15 AM
Updated : 17 March 2023, 06:15 AM

অজনপ্রিয় পেনশন সংস্কার বিলকে ভোট ছাড়াই পার্লামেন্টের বৈতরণী পার করাতে বিশেষ ব্যবস্থার দ্বারস্থ হতে হল ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্নকে।

বৃহস্পতিবার তিনি যখন নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ভোট ছাড়া বিল পাসে সংবিধানের ৪৯ দশমিক ৩ অনুচ্ছেদ বলবৎ করার ঘোষণা দেন, তখন অনেক সাংসদকেই দুয়ো দিতে এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করতে দেখা গেছে।

ফ্রান্সের পার্লামেন্টে এ ধরনের দৃশ্য বিরল, বলছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

অবশ্য সংবিধানের এ বিশেষ অনুচ্ছেদ বলবৎ হওয়ায় অবসরের বয়স দুই বছর বাড়িয়ে ৬৪ করার বিলটি অনুমোদন পাওয়ার পথ অনেকটাই পরিষ্কার হল।

দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও তার সরকারের ভাষ্য, পেনশন ব্যবস্থাপনাকে ধসে পড়ার হাত থেকে রক্ষায় এই সংস্কার জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অপরপক্ষে দেশটির বড় বড় শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়নগুলো শুরু থেকেই এই সংস্কারের বিরোধিতা করে আসছে; নতুন বিলের বিরুদ্ধে তাদের বড় বড় বিক্ষোভও দেখেছে ফ্রান্স।

এই সংস্কার নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল বিতর্ক আর আলোচনা চললেও ম্যাক্রোঁ এবং তার সরকার যে তাদের যুক্তির সপক্ষে পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যকে আনতে পারেনি ৪৯ দশমিক ৩ অনুচ্ছেদ বলবৎই তার প্রমাণ।

এটি মধ্যপন্থি প্রেসিডেন্টের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা বলেই বিবেচিত হবে। সামনে অন্যান্য সংস্কারের ক্ষেত্রে অন্য দলের সমর্থন লাভ তার জন্য আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

বৃহস্পতিবার বোর্ন যখন অনুচ্ছেদ ৪৯ দশমিক ৩ কার্যকরে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে পৌঁছান, তখনও দুয়ো আর টিটকারিতে তাকে বরণ করে নেওয়া হয়।

বোর্নকে কথা বলতে না দিতে বামপন্থি আইনপ্রণেতারা জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া শুরু করলে অধিবেশন দুই মিনিট স্থগিত রাখা হয়। এসময় অনেক সাংসদের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ’৬৪ কে না বলুন’।

অধিবেশন শুরু হলে বোর্ন কথা বলার সুযোগ পান, কিন্তু তার বক্তৃতার বেশিরভাগ সময়ই নিম্নকক্ষজুড়ে দুয়ো আর স্লোগানই শোনা গেছে।

“আমাদের পেনশনের ভবিষ্যৎ নিয়ে জুয়া খেলতে পারি না আমরা। এই সংস্কার দরকার,” কেন ৪৯ দশমিক ৩ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করতে যাচ্ছেন তার ব্যাখ্যায় এমনটাই বলেন ফরাসি প্রধানমন্ত্রী। 

তাৎক্ষণিকভাবে কট্টর-ডানপন্থি নেতা মারিন লু পেন প্রধানমন্ত্রী বোর্নের পদত্যাগ দাবি করেন।

“শেষ মুহূর্তে ৪৯ দশমিক ৩ অনুচ্ছেদের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে দুর্বলতার অস্বাভাবিক লক্ষণ। তার  (বোর্ন) পদত্যাগ করা উচিত “ বলেছেন তিনি।

পেনের এ দাবি প্রসঙ্গে পরে টিএফ ওয়ান টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বোর্ন বলেন, তার এখনও অনেক কাজ বাকি।

“জ্বালানি সংকট আছে, জলবায়ু সংকট আছে, ইউক্রেইন যুদ্ধ তো চলছেই,” বলেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী যখন এসব বলছিলেন, তখনও পার্লামেন্টের দিক থেকে সেইন নদীর ওপারে প্লেইস দে লা কনকর্ডে প্রায় ৭ হাজার মানুষকে স্বতস্ফূর্তভাবে পেনশন সংস্কারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে।

বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে কাদুঁনে গ্যাস ছুড়তে হয়েছে, করতে হয়েছে লাঠিচার্জ। এর পাল্টায় বিক্ষোভকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাথর ছুড়েছে।

মার্শেইসহ ফ্রান্সের আরও কয়েকটি শহরে পেনশন সংস্কার বিলের বিরুদ্ধে স্বতস্ফূর্ত বিক্ষোভ হয়েছে। সংস্কারবিরোধী ইউনিয়নগুলো আগামী ২৩ মার্চ ফের ধর্মঘট ডেকেছে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারদের অবস্থানও যে বিলটির বিরুদ্ধে তা একাধিক জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে। ট্রেড ইউনিয়নগুলো বলছে, আর্থিক ভারসাম্য রক্ষায় পেনশন সংস্কার না করে ধনীদের ওপর আরও বেশি কর আরোপসহ আরও অনেক পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

দেশটির সরকার এখন ৪৯ দশমিক ৩ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে পার্লামেন্টে ভোট ছাড়াই বিলটি অনুমোদনের চেষ্টা করায় ফ্রান্সজুড়ে ক্ষোভ আরও বাড়বে এবং বিক্ষোভের আকার ও সহিংসতা বাড়বে বলেই অনুমান করা হচ্ছে।

এই চেষ্টার বিরুদ্ধে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার চিন্তা করছে বিরোধীরা। সেরকম কিছু হলেও ম্যাক্রোঁ সরকারের বিপদ কম, কেননা রক্ষণশীল আইনপ্রণেতাদের অনেকেই অনাস্থায় সমর্থন দেবেন না বলেই মনে হচ্ছে।