যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে বেইজিংয়ের হুঁশিয়ারির পরও বেপরোয়া তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থির সঙ্গে সাইয়ের বৈঠক হলে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2023, 08:18 AM
Updated : 29 March 2023, 08:18 AM

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার আগে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন বলেছেন, বাইরের চাপে তাইওয়ান বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ রাখা বন্ধ করবে না।

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থির সঙ্গে বৈঠক করলে বেইজিং পাল্টা পদক্ষেপ নেবে, এমন হুঁশিয়ারির পর চীনের উদ্দেশ্যে দেওয়া কড়া বার্তায় বুধবার সাই এমনটা বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

স্বশাসিত দ্বীপ তাইওয়ানকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ মনে করা চীন বারবারই মার্কিন রাজনীতিকদেরকে সাইয়ের সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে আসছে। এ ধরনের বৈঠক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় পরিচালিত তাইওয়ানের বিচ্ছিন্ন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন দেয় বলেও মনে করে তারা।

গত বছরের অগাস্টে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের তৎকালীন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর দ্বীপটির আশপাশে ব্যাপক সামরিক মহড়া করেছিল চীন। এবার সাই দেশের বাইরে থাকাকালে চীন কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেয় কিনা, তার ওপর নজর রাখা হবে বলে জানিয়েছে তাইওয়ানের সশস্ত্র বাহিনী।

সাই নিউ ইয়র্কে বিরতি দিয়ে গুয়াতেমালা ও বেলিজে যাবেন; এরপর ফেরার পথে লস এঞ্জেলেসে থামবেন। ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকাকালে তার সঙ্গে ম্যাককার্থির বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।

“বাইরের চাপ আমাদেরকে বহির্বিশ্বের কাছে যাওয়ার সংকল্পকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। আমরা স্থির ও আত্মবিশ্বাসী, আমরা কিছু করবোও না, উসকানিও দেব না। তাইওয়ান দৃঢ়ভাবে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পথে হাঁটবে ও বিশ্বের কাছে যাবে। এই পথ রুক্ষ হলেও তাইওয়ান একা নয়,” চীনের নাম না নিয়ে তাইওয়ানের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বলেন সাই।

তার বিমান তাইওয়ান ছাড়ার কিছুক্ষণ পর বেইজিংয়ে চীনের তাইওয়ান বিষয়ক দপ্তরের মুখপাত্র ঝু ফেংলিয়ান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যে বিরতি বা ‘ট্রানজিট’ নেবেন সাই, সেটা কেবল বিমানবন্দরে বা হোটেলে পরের বিমানের জন্য অপেক্ষায় কাটবে, ব্যাপারটা এমন নয়। আদতে এই সময়ে তিনি মার্কিন কর্মকর্তা ও আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

“তিনি যদি মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ম্যাককার্থির সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তাহলে সেটা হবে এক চীন নীতি গুরুতর লংঘন করা আরেকটা উসকানি, যা চীনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার ক্ষতি করবে এবং তাইওয়ান প্রণালীর শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে।

“আমরা এগুলোর দৃঢ় বিরোধিতা করছি এবং অবশ্যই পাল্টা পদক্ষেপ নেবো,” বলেছেন ঝু।

সাই এমন এক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ‘ট্রানজিট’ নিচ্ছেন, যখন ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যকার সম্পর্ক ১৯৭৯ সালে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক্।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের দূরত্বের ক্ষেত্রে তাইওয়ান ইস্যুই প্রধান বলে মনে করেন বেশিরভাগ পর্যবেক্ষক। ওয়াশিংটন এক চীন নীতি মানলেও তাইপের সঙ্গে তাদের অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক রয়েছে। দ্বীপটির সুরক্ষায় সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজেদের আইনেই বাধ্য।

ওয়াশিংটন বলছে, বিভিন্ন দেশে যাওয়ার পথে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের যুক্তরাষ্ট্রে বিরতি নেওয়ার ঘটনা আগেও দেখা গেছে, এখন এই ‘ট্রানজিটকে’ কাজে লাগিয়ে তাইওয়ানের বিরুদ্ধে কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ নেওয়া চীনের উচিত হবে না।

সাইয়ের দেশ ছাড়ার আগে ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, চলতি মাসে ও এপ্রিলের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের সাইয়ের ‘ট্রানজিটকে’ কেন্দ্র করে চীনের অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানোর কোনোই কারণ নেই।

আগের ট্রানজিটগুলোতেও সাই কংগ্রেসের সদস্য, প্রবাসী তাইওয়ানি ও অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠকসহ নানান কিছু করেছেন, বলেছেন ঊর্ধ্বতন এক মার্কিন কর্মকর্তা।

চলতি সপ্তাহে তাইওয়ান ইস্যুতে আরেকটি সফলতাও অর্জন করেছে বেইজিং। রোববার হন্ডুরাস আনুষ্ঠানিকভাবে তাইপের হাত ছেড়ে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এর ফলে তাইওয়ানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক রাখা দেশের সংখ্যা কমে ১৩-তে নেমে এসেছে।