মিয়ানমারে মোখায় ‘বহু রোহিঙ্গার’ মৃত্যু

রাখাইনের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর তিনি অনেকগুলো গ্রামে ঘুরেছেন এবং শতাধিক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে বলে জেনেছেন। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2023, 06:26 AM
Updated : 16 May 2023, 06:26 AM

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে বহু রোহিঙ্গা মুসলিমের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দা, একটি ত্রাণ সংস্থা ও গণমাধ্যম জানিয়েছে।

ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি অনেক এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়ার কথা জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রোববার ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২১০ কিলোমিটার বাতাসের বেগ নিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ক্ষতবিক্ষত রাখাইনে আঘাত হানে মোখা, এতে রাজ্যের রাজধানী সিত্তুয়ের ঘরবাড়ির ছাদ উড়ে যায় এবং শহরটি জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়।

বেসরকারি ত্রাণ সংস্থা (এনজিও) পার্টনার্স বিভিন্ন জায়গায় থাকা তাদের লোকজনকে উদ্ধৃত করে টুইটারে জানিয়েছে, বহু মৃত্যু ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাদের পোস্ট করা একটি ভিডিওতে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র উঠে এসেছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, তারা স্বতন্ত্রভাবে হতাহতের সংখ্যা যাচাই করতে পারেনি। সোমবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম মোখায় মাত্র তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে।

Also Read: ঘূর্ণিঝড় মোখা: মিয়ানমারে অন্তত তিনজন নিহত

কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে নিউজ পোর্টাল মিয়ানমার নাও জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ে ২২ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন।

টুইটারে করা আরেক পোস্টে পার্টনার্স বলেছে, “আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় মোখায় ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে চাল ও তেরপলের মতো প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছি আমরা।” 

রাখাইনে লাখ লাখ রোহিঙ্গার বাস। কিন্তু নির্যাতিত এই সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে নিজেদের নাগরিক বলে স্বীকৃতি দিতে মিয়ানমারের কোনো সরকারই রাজি হয়নি। গত কয়েক বছরে সামরিক বাহিনীর প্রাণঘাতী দমনপীড়নের মুখে মিয়ানমারের ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়ে আছে।   

মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম মঙ্গলবার হতাহতের বিষয়টি উল্লেখ না করে শুধু জানিয়েছে, জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং ক্ষয়ক্ষতি দেখতে সিত্তুয়ে পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তিনি অর্থ দান করেছেন এবং ত্রাণ কাজের ক্ষেত্রে নির্দেশনা দিয়েছেন।

রোববার মোখা স্থলে উঠে আসার আগেই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে প্রায় চার লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক দপ্তর ওসিএইচএ জানিয়েছে, ঝড়ের আগে থেকেই রাখাইনের প্রায় ৬০ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তা দরকার ছিল, এদের মধ্যে জাতিগত হানাহানিতে অভ্যন্তরীণভাবে উদ্বাস্তু হয়ে পড়া প্রায় ১২ লাখ মানুষও আছেন। 

নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকায় পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক রাখাইনের এক বাসিন্দা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর তিনি অনেকগুলো গ্রামে ঘুরেছেন এবং তার ভিত্তিতে বলতে পারেন, শতাধিক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। 

তিনি বলেন, “ঝড়ের কারণে বহু লোক নিখোঁজ রয়েছেন। আমরা এখনও কোনো সাহায্য পাইনি।”

স্থানীয় আরও দুই বাসিন্দার সঙ্গে রয়টার্সের যোগাযোগ হয়েছে; তারাও জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ে বহু সংখ্যক মানুষ নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত এক কূটনৈতিক সূত্রও রয়টার্সকে এমনটি জানিয়েছে, তবে তিনি বিস্তারিত আর কিছু জানাননি।  

এর আগে ২০০৮ সালে মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় নার্গিসের তাণ্ডবে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল, তারপর থেকে মোখা দেশটিতে আঘাত হানা অন্যতম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়।