স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে কেজরিওয়ালই প্রথম ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
Published : 21 Mar 2024, 11:13 PM
ভারতের রাজধানী দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে মদ নীতি কেলেঙ্কারির অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে কেজরিওয়ালই প্রথম ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে তার রাজনৈতিক দল আম আদমি পার্টি (আপ) জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হলেও কেজরিওয়াল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে থাকবেন।
এনডিটিভি জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে কেজরিওয়ালের বাড়িতে যাওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার করে ইডি। তল্লাশি অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় নথি দেখিয়েই কেজরিওয়ালের বাড়িতে প্রবেশ করে ইডির ১২ কর্মকর্তার দল। সেখানে অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেন ইডির কর্মকর্তারা।
কেজরিওয়ালের বাসভবনের সামনে মোতায়েন করা হয়েছিল পুলিশ। বাড়িতে ঘণ্টা দুয়েকের তল্লাশি অভিযান শেষে বাজেয়াপ্ত করা হয় তার মোবাইল ফোন। এর পরেই রাত ৯টা নাগাদ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আবগারি দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান কেজরিওয়ালকে ৯ বার সমন পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু তিনি হাজিরা দেননি। এরপরই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ তার বাড়িতে যায় ইডি।
সরকারি বাসভবন থেকে কেজরিওয়ালকে নেওয়া হয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) দপ্তরে। শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করানো হবে।
ইডি’র শেষ পাঠানো সমনে বৃহস্পতিবারই সংস্থাটির দফতরে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু হাজিরা না দিয়ে রক্ষাকবচ চেয়ে দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন কেজরিওয়াল।
হাই কোর্ট তা খারিজ করলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে যান তিনি। আদালতে পেশ করা আবেদনে কেজরিওয়াল বলেন, ‘‘ইডি নিশ্চয়তা দিক যে, তাদের তলবে সাড়া দিলে আমার বিরুদ্ধে কোনও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।”
আপের অভিযোগ ছিল, ইডির লক্ষ্য জেরা করা নয়। এত দিন ধরেও তারা এ মামলায় কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে কোনও তথ্যপ্রমাণ পায়নি। তাই লোকসভা ভোটের আগে সমন পাঠিয়ে তাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে কেজরিওয়ালের আবেদনের শুনানির পর বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছে। তবে এ পর্যায়ে আদালত মামলাকারীকে কোনও সুরক্ষা দেওয়ার কথা দিচ্ছে না। হাই কোর্ট রক্ষাকবচ নাকচ করার পরই কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারে তৎপর হয় ইডি।
ওদিকে, রক্ষাকবচ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে জরুরি ভিত্তিতে মামলা শোনার আর্জি জানানো হয়েছিল কেজরিওয়ালের পক্ষ থেকে। তবে সেই শুনানি বৃহস্পতিবার হয়নি। শুক্রবার সেটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দিল্লির মন্ত্রী অর্থাৎ, আম আদমি পার্টি (আপ) নেত্রী অতিশী মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল গ্রেপ্তারের ঘটনাকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) চক্রান্ত বলে অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, “লোকসভা নির্বাচনের ঘোষণার পর কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার একটি চক্রান্ত। কেজরিওয়াল কেবল একজন ব্যক্তি নন, তিনি একটি চিন্তাধারা। একজন কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করে এই চিন্তাধারাকে শেষ করে দেওয়া যাবে ভাবলে ভুল হবে। কেজরিওয়াল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আছেন, ছিলেন এবং থাকবেন। আমরা শুরু থেকেই বলে এসেছি যে, তিনি প্রয়োজনে জেলে বসে সরকার চালাবেন। কোনও আইনই তাকে সেটি করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না।”
আবগারি মামলায় আম আদমির দুই প্রবীণ নেতা এর আগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। অভিযোগ ছিল, দিল্লি সরকারের ২০২১-২২ সালের আবগারি নীতি বেশ কিছু মদ ব্যবসায়ীকে সুবিধা করে দিচ্ছিল। এই নীতি প্রণয়নের জন্য যারা ঘুষ দিয়েছিলেন, তাদের সুবিধা করে দেওয়া হচ্ছিল। আপ সরকার সেই অভিযোগ মানেনি। যদিও সেই নীতি পরে খারিজ করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার কেজরিওয়ালকে গ্রেফতারের খবর প্রকাশ হতেই তার বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন আপ সমর্থকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। মোতায়েন করা হয় পুলিশ বাহিনী। ড্রোন দিয়ে নজরদারি চালানো হয়। কেজরিওয়ালের বাসভবনের সামনে থেকে আটক করা হয় আপ বিধায়ক রাখি বিড়লাকে।
কেজরিওয়াল এখনও দোষী সাব্যস্ত হননি জানিয়ে আম আদমি পার্টি (আপ) নেত্রী অতিশী বলেন, লড়াই চলবে। দল কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেছে।