ভারতে এই রাজ্যের বিধানসভায় পেশ হওয়া ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’- এ একাধিক বিষয়ের মধ্যে বিশেষ মনোযোগ কেড়েছে যুগলদের এই লিভ-ইন সম্পর্কের বিষয়টি।
Published : 07 Feb 2024, 08:28 PM
ভারতে হিমালয়ের কোলের রাজ্য উত্তরাখণ্ডে কোনও যুগল বিয়ে না করে ‘একত্রবাস’ বা ‘লিভ-ইন’ সম্পর্কে থাকতে চাইলে তাদের খুব শিগগিরই তা কর্তৃপক্ষকে জানানো এবং নতুন আইন মেনে চলার দরকার পড়বে।
উত্তরাখণ্ডের বিধানসভায় পেশ হওয়া ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ (ইউসিসি) বা ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ বিলে একাধিক বিষয়ের মধ্যে বিশেষ মনোযোগ কেড়েছে এই লিভ-ইন সম্পর্কের বিষয়টি।
ইউসিসি ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সব নাগরিকের জন্যই বিবাহ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার, দত্তক গ্রহণের মতো বিষয়গুলিতে একই আইন চালু সংক্রান্ত বিল। এ আইন চালু হয়ে গেলে এর আওতায় বহুগামিতায় নিষেধাজ্ঞা, লিভ-ইন সম্পর্কে ঘোষণাপত্র বাধ্যতামূলক, পারিবারিক সম্পত্তিতে ছেলেমেয়ের সমানাধিকার প্রযোজ্য হবে।
তাছাড়া, লিভ ইন সম্পর্কে যারা থাকতে চান তাদেরকে অবশ্যই জেলা কর্মকর্তাদের কাছে রেজিস্ট্রি বা নিবন্ধন করতে হবে। ‘লিভ-ইন’ সম্পর্কের ‘ঘোষণাপত্র’ সঙ্গে রাখতে হবে যুগলকে। ২১ বছরের কম বয়সী যারা একসঙ্গে থাকতে চান তাদের বাবা-মায়ের অনুমতি প্রয়োজন হবে।
এ ধরনের সম্পর্কের বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন সেই সব ব্য়ক্তিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে যারা উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা হয়ে রাজ্যের বাইরে লিভ-ইন সম্পর্কে রয়েছেন।
লিভ-ইন সম্পর্ক নিবন্ধকরণে যুগলের সব তথ্য় যাচাই করা হবে। এক্ষেত্রে দুই জনকেই ডেকে পাঠানো হতে পারে। রেজিস্ট্রেশন প্রত্যাখ্যান করা হলে, রেজিস্ট্রারকে তার কারণ লিখিতভাবে জানাতে হবে। নিবন্ধিত লিভ-ইন সম্পর্কের জন্য একটি লিখিত বিবৃতি দেওয়ারও প্রয়োজন পড়বে।
আর নিবন্ধন না করলে আছে শাস্তির বিধান। লিভ-ইন সম্পর্কের ঘোষণাপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হলে বা মিথ্যা তথ্য দিলে একজনের তিন মাসের জেল, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে।
কেউ লিভ-ইন সম্পর্ক নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হলে তাকে সর্বোচ্চ ছয় মাসের জেল, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়ই দিতে হতে পারে। এমনকী রেজিস্ট্রেশনে এক মাসের কম দেরি হলেও তিন মাস পর্যন্ত জেল, ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে। যুগলরা লিভ-ইন সম্পর্ক শেষ করতে চাইলেও তা বিবৃতি দিয়ে জানাতে হবে পুলিশকে।
বিবিসি জানায়, প্রস্তাবিত এই আইনটি নিয়ে আইন বিষেশজ্ঞরা সমালোচনা করছেন। সুপ্রিম কোর্টের ঊর্ধ্বতন এক আইনজীবী বলেছেন, কয়েকবছর আগেই সুপ্রিম কোর্ট মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে মৌলিক অধিকার বলে রায় দিয়েছিল। দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ স্বেচ্ছায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে থাকতে চাইলে তা নিগ্রানিতে রাখা রাজ্যের কাজ না। তাই এরকম সম্পর্কে কেউ থাকতে চাইলে তা নিবন্ধন করানো আর তা না করলে সাজার বিধান একেবারেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। এই বিধি বাতিল হওয়া উচিত।
লিভ-ইন ছাড়াও এই বিলে অন্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে রাজ্যের সবার জন্য একই নিয়ম বলবৎ করা। সেই সঙ্গে সন্তান দত্তক নেওয়ার নিয়ম আরও সহজ করার কথা বলা হয়েছে এতে। তাছাড়া বাবা-মায়ের সম্পত্তির ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়ের সমান অধিকার এমনকী, দত্তক নেওয়া সন্তানদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম বলবৎ করার কথা বলা হয়েছে বিলে।