নারীদের শিক্ষা গ্রহণের অধিকার সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে আফগানিস্তানজুড়ে ঘুরে ঘুরে কাজ করা সমাজকর্মী মতিউল্লাহ ওয়েসাকে গ্রেপ্তার করেছে তালেবান।
গত এক দশক ধরে তিনি নারীশিক্ষার অধিকার নিয়ে প্রচার চলাচ্ছেন এবং এ জন্য মাঝে মধ্যেই তিনি নানা হুমকি পেতেন।
সোমবার রাজধানী কাবুলে একটি মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় মতিউল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তার পরিবারের এক ঘনিষ্ঠজন বিবিসি-কে বলেন, ‘‘তালেবানরা দুইটি গাড়িতে করে আসেন। তাকে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তোলা হয়।
‘‘আজ (মঙ্গলবার) সকাল ১০টার দিকে তালেবান তার বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালায়। তারা গোটা বাড়ি লণ্ডভণ্ড করেছে, তার পরিবারের লোকজনকে বাইরে কথা না বলতে হুমকি দিয়েছে, তাদের সবার ফোন, কম্পিউটার এবং অনেক কাগজপত্র জব্দ করেছে। মতিউল্লাহর এক ভাইকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, পরে সতর্ক করে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।”
২০২১ সালের অগাস্টে পুনরায় আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করা তালেবান দেশটির নারীদের শিক্ষা গ্রহণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
গত বছরের শেষ ভাগে তালেবান দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী শিক্ষার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তার আগেই মেয়েদের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
দেশটিতে যারা নারীশিক্ষার অধিকার নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন, এবার তাদের ধরপাকড় শুরু করেছে তালেবান। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানায় বিবিসি।
তবে মতিউল্লাহকে ঠিক কী কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে বিষয়ে তালেবান এখনও কিছু বলেনি।
গত ফেব্রুয়ারিতে কাবুল থেকে অধ্যাপক ইসমাইল মাশালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি তালেবান সরকারের নারী শিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।নারীদের বিনামূল্যে বই বিতরণ করতেন তিনি।
পরে গত ৫ মার্চ তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু তারপর থেকে ওই অধ্যাপককে আর তালেবানের বিরুদ্ধে কিছু বলতে শোনা যায়নি।
আফগানিস্তানে শিক্ষার অধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের অন্যতম একজন মতিউল্লাহ। ২০২১ সাল থেকে তিনি তার দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘পেনপথ’ এর মাধ্যমে নারীদের শিক্ষা গ্রহণের অধিকারের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন।
গ্রেপ্তার হওয়ার আগে টুইটারে নিজের সর্বশেষ পোস্টে ‘পেনপথ’ এর একজন নারী স্বেচ্ছাসেবকের ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘‘তাদের কন্যাদের শিক্ষার জন্য ইসলামিক অধিকারের দাবি জানাচ্ছি।”
আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মিশন থেকেও মতিউল্লাহর বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে।
তালেবান প্রশাসনের কাছে জাতিসংঘ মতিউল্লাহকে কোথায় রাখা হয়েছে এবং কী কারণে তাকে আটক করা হয়েছে সে বিষয়ে পরিষ্কার তথ্য প্রদাণের আহ্বান জানানো হয়।
শিক্ষার প্রচারে গত এক দশক ধরে মতিউল্লাহ আফগানিস্তনের শতাধিক জেলা ভ্রমণ করেছেন। আফগানিস্তান জুড়ে প্রায় আড়াই হাজার স্বেচ্ছাসেবক ‘পেনপথ’ এর হয়ে কাজ করেন।
তারা স্থানীয়ভাবে শ্রেণীকক্ষ তৈরি করেন, পাঠদানের জন্য শিক্ষকদের খুঁজে বের করেন এবং বিনামূল্যে বই ও স্টেশনারি বিতরণ করেন।
মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার ওপর তালেবানের নিষেধাজ্ঞাও মতিউল্লাহকে ঠেকাতে পারেনি। গত সপ্তাহে এক টুইটে তিনি বলেছিলেন, ‘‘বিদ্যালয় বন্ধের ফলে যে ক্ষতি হচ্ছে তা অপরিবর্তনীয় এবং অনস্বীকার্য।”
২০২১ সালের অগাস্টে পুনরায় ক্ষমতা দখলের পরের মাসেই মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শুধুমাত্র পুরুষ শিক্ষক এবং ছেলে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করতে পারবে বলে ফতোয়া জারি করে তালেবান।