ভূমিকম্পে তুরস্কে, সিরিয়ায় মৃত্যু ১৭ হাজার ছাড়াল

ধ্বংসাত্মক এই ভূমিকম্পের পর তার সরকারের প্রাথমিক সাড়ায় কিছুটা সমস্যা ছিল বলে স্বীকার করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2023, 04:21 AM
Updated : 9 Feb 2023, 04:21 AM

স্মরণকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্কে ও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে নিহতের সংখ্যা ১৭০০০ ছাড়িয়ে গেছে।

ভূমিকম্পের পর তুরস্কের জরুরি পরিষেবাগুলোর সাড়া খুব ধীর ছিল এবং এই ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি দুর্বল ছিল বলে দাবি করেছেন সমালোচকরা।

এর উত্তরে প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান বুধবার স্বীকার করেছেন, ধ্বংসাত্মক এই ভূমিকম্পের পর তার সরকারের প্রাথমিক সাড়ায় কিছুটা সমস্যা ছিল; কিন্তু এই মাত্রার দুর্যোগের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকাও অসম্ভব বলে পাল্টা দাবি করেছেন তিনি।

তবে পরিস্থিতি এখন ‘নিয়ন্ত্রণে’ আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

কিন্তু তুরস্কের প্রধান বিরোধীদলের নেতা কেমাল কিরিচতারোলো এর বিরোধিতা করে বলেছেন, “যদি এর জন্য কোনো একজন দায়ী হয়, তিনি হচ্ছেন এরদোয়ান।”

এরদোয়ান এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, দুর্যোগের পর প্রয়োজন ছিল ঐক্যের।

ভূমিকম্প বিধ্বস্ত অন্যতম প্রদেশ হতাই পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “এরকম এক সময়ে রাজনৈতিক উদ্দেশের জন্য লোকজন নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে তা নিতে পারছি না আমি।”

দক্ষিণে সীমান্তের অপর পাশে সিরিয়ায় বছরের পর বছর ধরে চলা লড়াই, সংঘাতের কারণে পরিস্থিতি আগে থেকেই নাজুক হয়েছিল, অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছিল; তার মধ্যে ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে অবকাঠামো আরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ত্রাণ প্রচেষ্টা জটিল হয়ে উঠেছে। 

বিবিসি জানিয়েছে, তুরস্ক ও সিরিয়ার মধ্যে থাকা সীমান্ত ক্রসিং বাব আল হাওয়ার রাস্তাগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভূমিকম্পের পর থেকেই তা বন্ধ আছে।  

তবে ওই রাস্তাগুলো শিগগিরই চলাচলযোগ্য হতে পারে বলে জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

সিরিয়ায় ত্রাণ প্রবেশে সহায়তা করতে তুরস্ক আরও দুটি সীমান্ত ক্রসিং খুলে দিতে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোউলো। সিরিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও তুরস্কের ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কিছু ‘অসুবিধা’ আছে বলে স্বীকার করেছেন তিনি।

সিরিয়া সরকারের আবেদনে সাড়া দিয়ে ভূমিকম্প দুর্গত দেশটিকে ৩৫ লাখ পাউন্ডের ত্রাণ সহায়তা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) । কিন্তু এ সহায়তা অবশ্যই সিরিয়ার সরকার ও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে সরবরাহ করতে হবে বলে শর্ত দিয়েছে তারা। 

সিরিয়ার শুধু ইদলিব প্রদেশেই দেড় হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের এক উপদেষ্টা বলেছেন, সিরিয়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রয়োজনীয় ত্রাণ গ্রহণ করতে পারছে না। 

উপদেষ্টা বুথাইনা শাবান বলেছেন, “আমাদের পর্যাপ্ত বুলডোজার নেই, পর্যাপ্ত ক্রেনও নেই, আমেরিকার ও ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার কারণে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত তেলও নেই।”

গত সোমবার ভোররাতে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। হাজার হাজার ভবন ধসে পড়ে, অজ্ঞাত সংখ্যক মানুষ ধ্বংসাবশেষের নিচে আটকা পড়ে। তার মধ্যে হিমাঙ্কের নিচে বা কাছাকাছি তাপমাত্রার কারণে উদ্ধার ও ত্রাণ প্রচেষ্টা বিঘ্নিত হতে থাকে।  

বেঁচে যাওয়া লোকজন খাবার ও আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করতে বাধ্য হচ্ছেন, অপরদিকে ধ্বংসাবশেষের নিচে আটকা পড়া স্বজনদের আর্তি অসহায়ভাবে শুনে যেতে বাধ্য হচ্ছেন  তারা আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আর্তি বন্ধ হয়ে যেতেও দেখছেন। এভাবে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোতে মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই আরও দীর্ঘ হচ্ছে।