পেলোসির এশিয়া সফর: সেনাবাহিনী প্রস্তুত রাখার হুঁশিয়ারি চীনের

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি সিঙ্গাপুরে পৌঁছে এশিয়া সফর শুরুর পর চীন ফের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। পেলোসি তাইওয়ানে গেলে চীনের সেনাবাহিনী ‘চুপ করে বসে থাকবে না’ বলে শাসিয়েছে দেশটি।

রয়টার্স
Published : 1 August 2022, 01:14 PM
Updated : 1 August 2022, 01:14 PM

গভীর মনযোগ সহকারে যু্ক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির এশিয়া সফরের দিকে লক্ষ্য রাখছে চীন। দেশটি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, যদি তিনি তাইওয়ান সফরে যান তবে চীনের সেনাবাহিনী ‘চুপ করে বসে থাকবে না’।

পেলোসির এশিয়া সফর নিয়ে গত কয়েকমাস ধরেই চর্চা চলছে। সিঙ্গাপুরে পদার্পণের মধ্য দিয়ে সোমবার তিনি এশিয়া সফর শুরু করেছেন। এ সফরকালে পেলোসি তাইওয়ানে যাবেন কিনা সে প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা।

মূলত তাইওয়ানের কারণেই পেলোসির সফর নিয়ে এত কথা। চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও এর স্বীকৃতি পায়নি।

চীন তাইওয়ানকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অংশ মনে করে। যারা একদিন পুনরায় মিলিত হবে এবং এজন্য প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের কথাও বারবার বলেছে বেইজিং।

তাইওয়ান প্রসঙ্গে চীন সরকার অত্যন্ত সংবেদশীল এবং দেশটির বৈদেশিক নীতি তাইওয়ানের সঙ্গে অন্যান্য দেশের সম্পর্কের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে।

অন্যদিকে, তাইওয়ানের স্বাধীনতায় স্বীকৃতি না দিলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের সবচেয়ে বড় এবং প্রভাবশালী সমর্থক যুক্তরাষ্ট্র। তাইওয়ানের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র তাইপের কাছে বিক্রি করে।

এমনকী, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতারা সরাসরি দ্বীপটিকে সামরিক সমর্থন দেওয়ার কথাও বলে। কিন্তু তাইপের সঙ্গে এখন পর্যন্ত ওয়াশিংটনের কোনো আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।

পেলোসি তার এবারের এশিয়া সফরে তাইওয়ানে যেতে পারেন বলে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক গুঞ্জন চলছে এবং তা নিয়ে বেইজিং-ওয়াশিংটন উত্তেজনাও চরম আকার ধারণ করেছে।

উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তাদের তাইওয়ান সফর স্বশাসিত দ্বীপটির স্বাধীনতাপন্থিদের উৎসাহ দেবে বলে মনে করে চীন।

পেলোসি সোমবার সিঙ্গাপুর সফরের আগে রোববার তার কার্যালয় থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পেলোসি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল সফররত কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।এ সফরে দলটি সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে যাবে।

পেলোসি নেতৃত্বাধীন দলটি তাইওয়ান যাবেন কিনা সে বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে কিছু বলা হয়নি। তবে পেলোসির সম্ভাব্য তাইওয়ান সফর নিয়ে অনবরতই হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে চীন।

সোমবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, ‘‘যদি পেলোসি তাইওয়ান সফর করেন, তবে তা হবে চীনের অভ্যন্তরীন বিষয়ে বড় ধরনের হস্তক্ষেপ এবং আমি সতর্ক করে বলছি, সেটি হলে খুবই গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হবে এবং তার পরিণতও ভয়াবহ হবে।”

‘‘আমরা আরো একবার যুক্তরাষ্ট্র কে বলতে চাই, চীন প্রস্তুত হয়ে আছে, চীনের সেনাবাহিনী কখনোই চুপ করে বসে থাকবে না এবং চীন নিজের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় দৃঢ় প্রতিক্রিয়া দেখাবে এবং শক্তিশালী পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

গত বৃহস্পতিবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও টেলিফোনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সতর্ক করে বলেছিলেন, ওয়াশিংটনের উচিত ‘এক চীন নীতি’ মেনে চলা।

যুক্তরাষ্ট্রকে সাবধান করে দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘‘যারা আগুন নিয়ে খেলবে, তারা কেবলই ‍পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।’’

তাইওয়ানের সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, আগামী বৃহস্পতিবার সেখানে যেতে পারেন পেলোসি। সোমবার তাইপেতে এক সংবাদ সম্মেলনে তাইওয়ানের প্রধানমন্ত্রী সু সেং-চ্যাং কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সরাসরি তার উত্তর দেননি।

তিনি বরং বলেন, ‘‘বিদেশের বিশিষ্ট অতিথিদের আমরা সব সময়ই উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাই।”