কী কারণে এমন ঘটতে পারে, সে বিষয়ে একমত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
Published : 28 Jan 2024, 04:19 PM
কিছুদিন আগে তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্যাপক প্রাণহানির পর এবার ৬ দশমিক ৮ মাত্রার কম্পনে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মরক্কো; তবে সাম্প্রতিক এই ভূমিকম্পে ফের যে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে সেটি হল, কম্পনের আগ মুহূর্তে মরক্কোর আকাশে নাকি আলোর ঝলকানি দেখা গেছে।
ভূমিকম্পের ঠিক আগে বিভিন্ন রঙের উজ্জ্বল দোদুল্যমান এই আলোর ঝলকানি বিজ্ঞানীদের দীর্ঘকাল ধরেই ধন্দে রেখেছে। কী কারণে এমন ঘটতে পারে, সে বিষয়ে একমত হতে পারেননি তারা। তবে আলোর ঝলক যে দেখা যাচ্ছে, সেটা ‘অবশ্যই বাস্তব’ বলে মনে করেন অবসরপ্রাপ্ত ভূ-পদার্থবিদ জন ডের।
একসময় ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভেতে কাজ করা এই বিজ্ঞানী ‘ভূমিকম্ম্পের আলো’ বা ইকিউএল নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞান গবেষণার সহলেখকও হিসেবে কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, “ইকিউএল দেখা যাবে কিনা সেটি নির্ভর করে আকাশে অন্ধকার ও অন্যান্য সহায়ক ফ্যাক্টরগুলোর ওপর। অনলাইনে ছড়ানো মরক্কোর ভূমিকম্পের আলোর ঝলকানির ভিডিওটি ২০০৭ সালে পেরুর পিসকোতে কম্পনের সময় সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া আলোর মতই দেখতে।”
পেরুর ইউনিভার্সিডাড ন্যাসিওনাল মেয়র ডি সান মার্কোস এবং পন্টিফিকাল ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক জুয়ান আন্তোনিও লিরা ক্যাচো এ বিষয়টি নিয়েই গবেষণা করেছেন। তার মতে, মোবাইলের ভিডিও এবং প্রচুর পরিমাণে সিসি ক্যামেরার ব্যবহার ভূমিকম্পের আগে সৃষ্ট আলো নিয়ে গবেষণা আরও সহজ করে তুলেছে।
“চল্লিশ বছর আগে এটা সম্ভব ছিল না। আপনি যদি সেই আলো (ভিডিও প্রমাণ ছাড়া) দেখে থাকেন, তবে অন্যরা কেউ বিশ্বাস করবে না।”
এনসাইক্লোপিডিয়া অব সলিড আর্থ জিওফিজিক্সের ২০১৯ সংস্করণে প্রকাশিত এবং ডের গবেষণাপত্রের একটি অধ্যায় অনুসারে, ভূমিকম্পের আলো বিভিন্ন রকমের হতে পারে। কখনও সেই আলো সাধারণ বজ্রপাতের মত দেখতে, অথবা মেরুর আলোর মত বায়ুমণ্ডলের তীর্যক উজ্জ্বল আলোর সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। কিংবা বাতাসে ভেসে বেড়ানো গোলাকার বলের মত উজ্জ্বল আলো বা দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে মাটি থেকে উপরের দিকে অগ্নিশিখার মত আলো উঠে গেছে।
২০০৮ সালে চীনের সিচুয়ান প্রদেশে ভূমিকম্পের আগে আকাশের মেঘে উজ্জ্বল আলো ভেসে বেড়াতে দেখা যায়। এসব আলোর ঘটনা বুঝতে জন ডের ও তার সহকর্মীরা ১৬০০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে সংগঠিত ৬৫টি ভূমিকম্পের ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করেছেন, যেগুলোতে ওই আলোর বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে।
২০১৪ সালে সিসমোলজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স জার্নালে প্রকাশিত তাদের সেই গবেষণাপত্রে দেখা যায়, ইকিউএল এর ৮০ শতাংশ ঘটনার ক্ষেত্রে ভূমিকম্প হয়েছে ৫ মাত্রার বেশি। বেশিরভাগ আলো দেখা গেছে ভূমিকম্পের কিছুক্ষণ আগে এবং কেন্দ্রস্থল থেকে ৬০০ কিলোমিটারের মধ্যে।
ভূমিকম্প, বিশেষ করে শক্তিশালী কম্পনগুলো ভূগর্ভের টেকটোনিক প্লেটগুলোর মিলিত স্থান বা আশপাশে ঘটতে পারে। তবে ২০১৪ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, আলো জ্বলে ওঠার ঘটনাগুলোর সঙ্গে যুক্ত বেশিরভাগ কম্পন হয়েছে টেকটোনিক প্লেটের মধ্যেই।
সান হোসে ইউনিভার্সিটির একজন সহযোগী অধ্যাপক এবং নাসা আমেস রিসার্চ সেন্টারের প্রাক্তন গবেষক ডন ডেরের সহযোগী ফ্রাইডম্যান ফ্রেউন্ড তার ব্যাখ্যায় বলেন, পৃথিবীর গভীরে শিলাস্তরে নির্দিষ্ট কোনো ত্রুটি বা টেকটনিক প্লেটগুলোর চাপের কারণে ভূমিকম্পের সময় কঠিন পাথরগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হতে থাকে এবং বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। এটি ঠিক ব্যাটারিতে লাইন দেওয়ার মত। এর ফলে বৈদ্যুতিক চার্জ চাপের মধ্যে থাকা শিলাগুলো থেকে চাপহীন শিলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। চার্জগুলো দ্রুত প্রবাহিত থাকে, প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২০০ মিটার পর্যন্ত।
এছাড়া শিলার ফাটল ও রেডন নির্গমন থেকে স্থির বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে ভূমিকম্পের আলো জ্বলে ওঠার মত তত্ত্বসহ অন্যান্য ব্যাখ্যাও রয়েছে। তবে সেগুলো এখনও কেবল তাত্ত্বিক কথাবার্তাই।সংবাদসূত্র: সিএনএন
(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)