তাইওয়ান নিয়ে শির আকাঙ্ক্ষাকে ‘খাটো করে দেখা ঠিক হবে না’

ওয়াশিংটনে জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে এমনটাই বলেছেন সিআইএ পরিচালক উইলিয়াম বার্নস।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2023, 08:02 AM
Updated : 3 Feb 2023, 08:02 AM

ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ড খানিকটা দমিয়ে দিলেও তাইওয়ান নিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আকাঙ্ক্ষাকে খাটো করে দেখার উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক উইলিয়াম বার্নস। 

ওয়াশিংটনে জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার তিনি এ মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

শি তার বাহিনীকে ২০২৭ সালের মধ্যে স্বশাসিত তাইওয়ানে আক্রমণ চালাতে প্রস্তুত হতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে ‘গোয়েন্দা তথ্যের হিসাবে’ যুক্তরাষ্ট্র জানে, বলেছেন বার্নস।

“এর অর্থ এই নয় যে তিনি ২০২৭ বা অন্য কোনো বছরে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন, তবে এটি তার মনোযোগ ও আকাঙ্ক্ষা বিষয়ে গুরুদ্ব দেওয়ার বিষয়টি মনে করিয়ে দিচ্ছে।

“আমাদের সিআইএ-র মূল্যায়ন হচ্ছে, আমি তাইওয়ান বিষয়ে প্রেসিডেন্ট শির আকাঙ্ক্ষাকে খাটো করে দেখিনা,” বলেছেন তিনি।

ইউক্রেইনে রাশিয়ার সেনাবাহিনী ও তাদের অস্ত্রশস্ত্রের ‘দুর্বল কার্যকারিতা’ দেখে চীনের নেতা ‘স্তম্ভিত ও বিচলিত’ হয়ে পড়েন এবং সেখান থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও জানান এ সিআইএ কর্তা।

ইউক্রেইনে রুশ সেনা ঢোকার অল্প কিছুদিন আগেই মস্কো ও বেইজিং তাদের মধ্যে ‘সীমাহীন বন্ধুত্বের’ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল, তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কও দিনদিন জোরদার হচ্ছে, যা এরইমধ্যে পশ্চিমাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাশিয়া তার প্রতিবেশী দেশে অভিযান শুরুর পর চীনেরও তাইওয়ানে একই ধরনের অভিযানে নামার সম্ভাবনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।

বেইজিং তাইওয়ানকে তার বিচ্ছিন্ন প্রদেশ মনে করে; মূলভূখণ্ডে দ্বীপটিকে একীভূত করতে বলপ্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না তারা।

অন্যদিকে তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীন দেশ মনে করে; আর যুক্তরাষ্ট্র মুখে ‘এক চীন’ নীতিতে বিশ্বাসী হলেও তাইওয়ানকে রক্ষায় সামরিক সহযোগিতা দিতে তারা আইনিভাবেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

চীন ইউক্রেইনে অভিযানের জন্য রাশিয়াকে দোষারোপ না করলেও, মস্কোকে সরাসরি সহযোগিতা করা থেকে বিরত রয়েছে। সরাসরি সামরিক সরঞ্জাম দিলে বেইজিংও মস্কোর মতোই পশ্চিমাদের কঠোর নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারে। 

“অংশীদারিত্ব বিষয়ে তাদের দুই দেশের পারস্পরিক প্রতিশ্রুতিকে খাটো করে দেখা ভুল বলে মনে করি আমি, তবে তাদের বন্ধুত্ব সীমাহীন নয়,” বলেছেন বার্নস।

সিআইএ-র এই পরিচালকের বক্তৃতার সময়ই যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে কয়েকদিন ধরে চীনা নজরদারি বেলুন ওড়ার খবর আসে; এর ধ্বংসাবশেষ নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে এই ভয়ে ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তারা বেলুনটিকে গুলি করে ভূপাতিত করতেও নিষেধ করেছেন।

বার্নস তার বক্তৃতায় এই প্রসঙ্গে কিছু না বললেও চীনকে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি হওয়া ‘সর্ববৃহৎ ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ’ অভিহিত করেন।  

“চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা মাত্রাগত দিক থেকেই অনন্য। সব খাতে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে, কেকল সামরিক বা আদর্শগতভাবেই নয়, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তি, সাইবারজগত থেকে শুরু করে মহাকাশ, সর্বত্র। বিশ্বব্যাপী এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার যে ধরন, তাতে এটি সোভিয়েতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেয়েও তীব্র হয়ে যেতে পারে,” বলেছেন তিনি।

বার্নসের মন্তব্য কিংবা নজরদারি বেলুন নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে চীনের ওয়াশিংটন দূতাবাসের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ইউক্রেইনে যুদ্ধ নিয়ে বার্নস বলেছেন, আগামী ছয় মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মস্কো উল্লেখ করার মতো অগ্রগতি করেছ।

‘তিতিবিরক্ত’ ইরানি নারীদের সাহসের কল্যাণে দেশের ভেতরকার অস্থিরতায় ইরানের সরকার ক্রমশ নড়বড়ে হয়ে পড়ছে, বলেছেন সিআইএর এই পরিচালক।