ইউক্রেইন এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ মানুষকে সংবাদ বিমুখ করায় ভূমিকা রেখে থাকতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Published : 17 Jun 2024, 06:44 PM
সংবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ। সংবাদকে হতাশাজনক, নিরলস এবং বিরক্তিকর বলে বর্ণনা করছে তারা। সাম্প্রতিক এক জরিপে বেরিয়ে এসেছে এমন তথ্য।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়টার্স ইনস্টিটিউট এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ১০ জনের মধ্যে প্রায় ৪ জনই (৩৯ শতাংশ) বলেছেন, তারা মাঝেমধ্যেই বা প্রায়ই সংবাদ এড়িয়ে যান। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৯ শতাংশ।
প্রতিবেদনের লেখকরা বলছেন, ইউক্রেইন এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ মানুষকে সংবাদ বিমুখ করায় ভূমিকা রেখে থাকতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মানুষের সংবাদ এড়িয়ে যাওয়ার হার এখন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ৪৭টি দেশের ৯৪ হাজার ৯৪৩ জন প্রাপ্তবয়স্কের ওপর জরিপ চালায় ইউগভ। এমন সময়ে এ জরিপ করা হয়েছে যখন বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ জাতীয় ও আঞ্চলিক নির্বাচনে ভোটে যাচ্ছে।
জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে নির্বাচনের কারণে খবরের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। তবে সার্বিক প্রবণতা অনেকটাই নিম্নমুখী রয়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে।
বিশ্বজুড়ে, ৪৬ শতাংশ মানুষ বলেছেন যে, তারা সংবাদের প্রতি অত্যন্ত বা অতিমাত্রায় আগ্রহী। যেখানে ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬৩ শতাংশ।
যুক্তরাজ্যে ২০১৫ সালের পর থেকে সংবাদের প্রতি মানুষের আগ্রহ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
প্রতিবেদনের প্রধান লেখক নিক নিউম্যান বিবিসি-কে বলেন, "সম্প্রতি কয়েক বছরে বিশেষত, সংবাদের বিষয়বস্তু স্পষ্টতই কঠিন হয়ে পড়েছে।”
তিনি আরও বলেন, "আপনি মহামারী দেখেছেন, যুদ্ধের মধ্যে আছেন, তাই মানুষের সংবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া মোটামুটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, তা সেটি তাদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যই হোক কিংবা বাকি জীবনটা বয়ে বেড়ানোর সাধারণ চাওয়া- যাই হোক না কেন।”
নিউম্যান বলেন, যারা বেছে বেছে সংবাদ এড়িয়ে চলেন, তারা নিজেকে 'ক্ষমতাহীন' মনে করার কারণে এমনটি করে থাকেন। তারা মনে করেন যে, বিশ্বে ঘটে যাওয়া বিশাল সব ঘটনার ওপর তাদের কিছু করার ক্ষমতা নেই।
কিছু মানুষ চারপাশের নানা সংবাদে বিহ্বল এবং বিভ্রান্ত বোধ করেন। আবার অন্যরা রাজনীতির কারণে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। প্রতিবেদনে বলা হয়, চারপাশের বিপুল সংবাদ প্রবাহ দেখে মূলত নারী ও তরুণ বয়সীদের ক্লান্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি।
জরিপে দেখা গেছে, সংবাদের প্রতি মানুষের আস্থা ৪০ শতাংশে স্থির থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারী তুঙ্গে থাকার সময়কার তুলনায় তা এখনও সামগ্রিকভাবে ৪ শতাংশ কম।
যুক্তরাজ্যে এ বছর সংবাদের প্রতি আস্থা সামান্য বেড়ে ৩৬ শতাংশ হয়েছে। তবে ২০১৬ সালের ব্রেক্সিট প্রশ্নে গণভোটের আগের তুলনায় এই আস্থা প্রায় ১৫ শতাংশ কম।
বিবিসি যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বিশ্বস্ত নিউজ ব্র্যান্ড ছিল। তারপরে ছিল চ্যানেল ফোর এবং আইটিভি।
টুইটারকে ছাড়িয়ে গেছে টিকটক:
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, টিভি এবং ছাপা পত্রিকার (প্রিন্ট) মতো ঐতিহ্যবাহী সংবাদ উত্সগুলোর শ্রোতা এবং পাঠক গত দশকে তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে। তরুণরা অনলাইনে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদ পেতে পছন্দ করে।
যুক্তরাজ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মানুষ (৭৩ শতাংশ) জানিয়েছেন, তারা অনলাইনে সংবাদ দেখেন, যেখানে টিভিতে ৫০ শতাংশ এবং ছাপা পত্রিকায় মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ সংবাদ দেখে থাকেন।
ফেইসবুক এখনও সংবাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম, যদিও দীর্ঘদীন ধরেই এটি পতনের মুখে রয়েছে।
ইউটিউব এবং হোয়াটসঅ্যাপও এখনও অনেকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ উৎস হিসাবে আছে। তবে বাড়ছে টিকটকের ব্যবহার এবং প্রথমবারের মতো এক্স (সাবেক টুইটার)-কে ছাড়িয়ে গেছে টিকটক।
১৩ শতাংশ মানুষ খবরের জন্য ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করেন। যেখানে ১০ শতাংশ মানুষ এক্স ব্যবহার করেন। বিশ্বব্যাপী ১৮-২৪ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে টিকটক ব্যবহারের এই সংখ্যা আরও বেশি, ২৩ শতাংশ।
এই পরিবর্তনের সঙ্গে ভিডিও’ও অনলাইন সংবাদের আরও গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠছে। স্বল্পদৈর্ঘ্য সংবাদ ভিডিওতে মানুষের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি।
নিউম্যান বলেন, "মানুষ ভিডিও দেখতে আগ্রহী। কারণ, এটি ব্যবহার করা সহজ এবং সল্প সময়ে প্রাসঙ্গিক ও আকর্ষণীয়ভাবে সংবাদ পরিবেশন করে থাকে।”
কিন্তু অনেক ঐতিহ্যবাহী নিউজরুম এখনও টেক্সট নির্ভর এবং সংবাদ পরিবেশনায় বর্তমান ধারার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সংগ্রাম করছে। প্রকাশকদের জন্য নিউজ পডকাস্টিং একটি সম্ভাবনাময় জায়গা। তবে এটি প্রাথমিকভাবে সুশিক্ষিত দর্শকশ্রোতাদেরই আকৃষ্ট করে।
ওদিকে, রিপোর্টিংয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, বিশেষত রাজনীতি বা যুদ্ধের মতো কঠিন সংবাদের জন্য কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক সংশয় আছে, বলছে গবেষণা প্রতিবেদন।
ট্রান্সক্রিপশন এবং অনুবাদের মতো পর্দার আড়ালের কাজগুলো করার ক্ষেত্রে এবং সাংবাদিকদের সহায়ক হিসাবে এআই-য়ের ব্যবহার কাজকে অনেকটাই সহজ করে তোলে বলে জাননো হয়েছে প্রতিবেদনে।