স্ব-ঘোষিত গুরু ভোলে বাবার কিছু একনিষ্ঠ অনুসারী যারা এখন হাসপাতালে আছেন, তাদের মনে বিশ্বাসের বদলে ক্ষোভ ভর করেছে।
Published : 04 Jul 2024, 05:14 PM
ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরস জেলায় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষে হুড়োহুড়ির মধ্যে পদদলনের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনার স্বজন হারিয়ে বহু পরিবার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
স্বজন হারা পরিবারগুলোর জন্য শোকও বোধহয় থমকে আছে। কারণ তারা এখনো এক মর্গ থেকে অন্য মর্গে ছুটে বেড়াচ্ছেন লাশ শনাক্ত করার জন্য।
আহতরাও একাধিক হাসপাতালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। তাদের স্বজনদের পক্ষে তাদের খুঁজে বের করা একটি কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঊর্মিলা দেবী তার ১৬ বছরের নাতনিকে নিয়ে 'সৎসঙ্গ'-এ গিয়েছিলেন। ভিড়ের মধ্যে বিশৃঙ্খলা শুরু হলে তারা আলাদা হয়ে যান।
বুধবার রাত থেকে ওই বৃদ্ধা হাথরস, আলিগড় ও এটাহের তিনটি জেলা হাসপাতালে ঘুরে নাতনিকে খুঁজছেন, কিন্তু কোথাও পাননি।
এদিন এনডিটিভিকে তিনি বলেন, "আমি প্যান্ডেলে তাকে খুঁজে না পেয়ে তার নাম ধরে চিৎকার করলাম। সাড়া না পেয়ে আমি হাসপাতালে খোঁজা শুরু করি। কিন্তু আমি এখনও তাকে খুঁজে পাইনি।”
ঊর্মিলা দেবীর কাছে ফোন নেই এবং এক পরিচিতের মাধ্যমে বড় ছেলেকে খবর পাঠান। তিনি বলে, আমি জানি না, ও আদৌ জানেন কিনা যে তার মেয়ে নিখোঁজ।
এনডিটিভি দেখেছে, কয়েকজন ব্যক্তি এক নারী আত্মীয়কে খুঁজছেন। আলিগড়, হাথরস ও এটাহের হাসপাতালে গিয়েও তাঁর সন্ধান মেলেনি।
পুলিশ জানিয়েছে, স্বঘোষিত গুরু ভোলে বাবা চলে যাওয়ার সময় তার অনুগামীরা তার গাড়ির ধুলো সংগ্রহ করতে ছুটে যান। তখন পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে। সেই গুরুর রক্ষীরা কয়েকজন অনুগামীকে ধাক্কা দিলে পদপিষ্ট হয়ে তাদেরও মৃত্যু হয়।
দু'দিন কেটে গেলেও স্ব-ঘোষিত 'ভোলে বাবা'র কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে অজ্ঞাত জায়গা থেকে একটি বিবৃত দিয়েছেন তিনি। তার আইনজীবী জানিয়েছেন, তিনি তদন্তকারীদের সহযোগিতা করবেন।
তবে তার কিছু একনিষ্ঠ অনুসারী যারা এখন হাসপাতালে আছেন, তাদের বিশ্বাস ভেঙে গেছে, সেখানে ক্ষোভ ভর করেছে।
তারা বলছেন, বাবার যদি সত্যিই ক্ষমতা থাকে এবং তিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন, তাহলে তার উচিত এখানে এসে আমাদের সুস্থ করে তোলা।
“বাবার উচিত চিকিৎসায় আমাদের সাহায্য করা," বলেছেন বিশৃঙ্খলার মধ্যে হাত ভেঙে যাওয়া এক নারী। তার পাঁচ বছরের নাতিও আহত হয়ে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুরো পরিবারকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ হাথরসের বাসিন্দা বিনোদ তার বাড়িতে ‘ভোলে বাবা'র পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছেন। তার মা জয়া, স্ত্রী রাজকুমারী এবং মেয়ে ভূমি পদপিষ্ট হয়ে মারা গেছেন।
তিনি বলেন, 'আমি বাইরে ছিলাম, সন্ধ্যায় পদপিষ্ট হওয়ার খবর পাই। আমি দৌড়ে বাড়ি গিয়ে দেখি তারা সবাই মারা গেছে," বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
এই শোচনীয় ঘটনার পরে উত্তর প্রদেশে একটি রাজনৈতিক দোষারোপের খেলা শুরু হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, এই ট্র্যাজেডির পিছনে কোনও "ষড়যন্ত্র" রয়েছে কিনা তদন্তে তা খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এই ঘটনার জন্য বিজেপি সরকারকে দায়ী করেছেন।
স্ব-ঘোষিত গুরুর আইনজীবী "সমাজবিরোধীদের" দোষারোপ করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে এটি একটি "পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র"।
এ ঘটনায় হওয়া মামলায় ভোলে বাবার নাম উল্লেখ করা হয়নি। তার সহযোগী এবং অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক প্রধান অভিযুক্ত।
এমন কী মামলায় স্থানীয় প্রশাসনকে সমস্ত দায় থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। অব্যবস্থাপনার জন্য আয়োজকদের দোষারোপ করা হয়েছে। রাজ্য সরকার অবশ্য আশ্বস্ত করেছে, দোষী কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) এই ঘটনার তদন্ত করছে। পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার তদন্তে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন: