রাজপরিবারের বাকিদের থেকে নিজেকে আলাদা মনে হতো প্রিন্স হ্যারির

গত ১০ জানুয়ারি হ্যারির স্মৃতিকথা ‘স্পেয়ার’ প্রকাশের পর ব্রিটিশ রাজপরিবারের অন্দরমহলের অনেক তথ্য বাইরে চলে আসে।

নিউজ ডেস্ক
Published : 5 March 2023, 03:42 PM
Updated : 5 March 2023, 03:42 PM

নিজেকে ‘সবসময় পরিবার থেকে খানিকটা আলাদা মনে হতো’ প্রিন্স হ্যারির। যেমনটা তার মা প্রয়াত প্রিন্সেস ডায়নার মনে হতো বলে জানিয়েছেন তিনি।

অনলাইনে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে নিজের জীবনের দুঃখকষ্ট নিয়ে কথা বলেতে গিয়ে ডিউক অব সাসেক্স আরও বলেন, তিনি যখন (মানসিক সমস্যার) থেরাপি শুরু করেন তখন মা ডায়ানার স্মৃতি হারিয়ে যাচ্ছে ভেবে তিনি আতঙ্কে থাকতেন।

শৈশবে তিনি যে ‘ট্রমার’ মধ্য দিয়ে গেছেন বা যে ‘নেতিবাচক অভিজ্ঞতার’ মধ্য দিয়ে তিনি বড় হয়েছেন তার কোনো প্রভাব যেন তার সন্তানদের উপর না পড়ে সেটা নিশ্চিত করতে তিনি তার সন্তানদের অত্যধিক স্নেহ দিয়ে আগলে রাখছেন বলেও জানান তিনি।

ডা. গাবর মাতের সঙ্গে শনিবার ‘ট্রমা অ্যান্ড অ্যাডিকশন’ নিয়ে আলোচনার সময় ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রিন্স হ্যারি এসব কথা বলেন বলে জানায় বিবিসি।

গত ১০ জানুয়ারি হ্যারির লেখা স্মৃতিকথামূলক বই ‘স্পেয়ার’ বাজারে আসে। যেখানে তিনি তার শৈশব, মা হারানোর বেদনা, বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক এবং রাজপরিবারের বেড়ে ওঠা অভিজ্ঞতা নিয়ে বেশ খোলাখুলি কথা বলেছেন।

ক্যালিফোর্নিয়ায় বসে স্পেয়ার’র একটি অধ্যায় ‘লিভিং উইথ লস’ নিয়ে কথা বলে প্রিন্স হ্যারি।

স্পেয়ার নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়ার জাবাবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, তিনি কোনোভাবেই ‘ভিকটিম’ ছিলেন না বা তিনি কারো সমবেদনা চাইছেন না।

হ্যারির স্মৃতিকথা নিয়ে ব্যাপক হইচই হচ্ছে। এরই মধ্যে বইটির রেকর্ড পরিমাণ কপি বিক্রি হয়ে গেছে। বইটি লিখতে পেরে তিনি ‘অবিশ্বাস্যরকম মুক্ত’ অনুভব করছেন বলেও জানান।

ডা. মাতেকে তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হচ্ছে কাঁধ থেকে বিশাল বড় বোঝা নেমে গেছে।”

মনরোগ নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে সমাজে যে ট্যাবু রয়েছে, অন্যদের তা ভেঙে এগিয়ে আসতে এই বই সাহায্য করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

শনিবারের ওই আলোচনায় প্রিন্স হ্যারির আবেগ, মানসিক সমস্যা এবং তার চিকিৎসা নিয়েই মূলত কথা হয়।

স্পেয়ার বাজারে আসার পর ব্রিটিশ রাজপরিবারের পক্ষ থেকে হ্যারি ও তার স্ত্রী মেগানকে যুক্তরাজ্যে তাদের বাড়ি ‘ফ্রগমোর কটেজ’ খালি করে দিতে বলা হয়েছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন এ দম্পতির এক মুখপাত্র।

হ্যারি তার বাবা রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

তবে শনিবারের আলোচনায় এসব নিয়ে কোনো কথা হয়নি বলে জানায় বিবিসি। এমনকি, ওই বই প্রকাশের পর রাজপরিবার বা তার বড় ভাই প্রিন্স উইলিয়াম কোনো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কিনা সেগুলো নিয়েও কোনো কথা হয়নি।

প্রিন্স হ্যারি বলেন, বেড়ে ওঠার সময় নিজেকে তার ‘পরিবারের বাকি সদস্যদের চেয়ে খানিকটা আলাদা মনে হতো’। তার মনে হতো, আর সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তিনি একটি ‘বাবলের ভেতর’ বসবাস করছেন।

মানসিক চিকিৎসা (থেরাপি) তাকে ওই ‘বাবল’ ভেঙে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করছে

অনলাইনে সারা বিশ্ব থেকে দর্শকরা তার ওই সাক্ষাৎকার সরাসরি দেখেছেন। সেখানে তার কাছে আবেগহীন শৈশব, বিশেষ করে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরা বা স্নেহের কমতির মধ্যে বড় হওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো তা নিয়ে জানতে চাওয়া হয়।

জবাবে তিনি বলেন, তিনি তার নিজের সন্তানদের বেলায় ‘প্রচণ্ড ভালোবাসা ও স্নেহের মধ্য দিয়ে তাদের বড় হওয়া নিশ্চিত করছেন’।

‘‘ছোটবেলায় যে ট্রমা বা নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমি বড় হয়েছি তার কিছুই যেন আমার সন্তানদের ছুঁতে না পারে, আমি তা নিশ্চিত করতে চাই। একজন বাবা হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।”

তিনি বারবার মানসিক সুস্থতার উপর জোর দিয়েছেন। এজন্য প্রয়োজনে চিকিৎসা নেওয়ার কথাও বলেছেন।

যদিও তিনি মানসিক চিকিৎসা নেওয়ার সময় অকারণেই এই আতঙ্কে থাকতেন যে, এটা তাকে তার মায়ের স্মৃতি ভুলিয়ে দেবে।

১৯৯৭ সালে প্যারিসে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান হ্যারির মা প্রিন্সেস ডায়ানা। হ্যারির বয়স তখন মাত্র ১২ বছর।

হ্যারি বলেন, ‘‘থেরাপি নেওয়ার সময় যে বিষয়ে আমি সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছিলাম তার মধ্যে একটি হলো মায়ের প্রতি আমার যে অনুভূতি ছিল তা হারিয়ে ফেলার ভয়... মা কে নিয়ে আমার যেটুকু স্মৃতি আছে তার সবই আমি ধরে রাখতে চেয়েছিলাম।

‘‘কিন্তু মাকে নিয়ে আমার অনুভূতি হারিয়ে যায়নি। বরং আমি বুঝতে পারি মা আসলে আমাকে সবসময় খুশি দেখতে চেয়েছেন।”

 জীবন নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসার জন্য স্ত্রী মেগানের প্রতি ‘চির কৃতজ্ঞ’ থাকার কথাও জানিয়েছেন প্রিন্স হ্যারি। মেগানকে তিনি ‘একজন ব্যাতিক্রমী মানুষ’ বলে বর্ণনা করেন।

২০২০ সালে রাজকীয় দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন প্রিন্স হ্যারি ও তার স্ত্রী মেগান। বর্তমানে এ দম্পতি দুই সন্তান আর্চি ও লিলিবেটকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করছেন।

Also Read: প্রিন্স হ্যারির ‘স্পেয়ার’: রাজপরিবারের রহস্যের পর্দা উন্মোচন

Also Read: আসছে প্রিন্স হ্যারির স্মৃতিকথা ‘স্পেয়ার’