চীনা ঘাঁটি বসানোর কথা ভাবছে এমন সরকারগুলোর সঙ্গে মার্কিন কূটনীতিকদের কথাবার্তা ও তথ্য আদান-প্রদান চলছে, বলেছেন বাইডেন প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা।
Published : 11 Jun 2023, 11:35 AM
চীন বেশ কিছুদিন ধরেই কিউবা থেকে গোয়েন্দাগিরি করছে এবং সেখানে তাদের তথ্য সংগ্রহের সুযোগ- সুবিধাকে আরও অত্যাধুনিক করেছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন এক কর্মকর্তা।
কিউবাকে ঘিরে চীনের গোয়েন্দাগিরির নতুন প্রচেষ্টা চলমান- ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এমন এক প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে শনিবার জো বাইডেন প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা এসব জানান।
বৃহস্পতিবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ফ্লোরিডা থেকে মাত্র ১৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দ্বীপদেশটিতে একটি ইলেকট্রনিক আড়ি পাতা কেন্দ্র স্থাপনে চীন কিউবার সঙ্গে একটি গোপন চুক্তিতে পৌঁছেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার সরকার উভয়েই ওই প্রতিবেদনের ব্যাপারে ঘোরতর সন্দেহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাইডেন প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, গণমাধ্যম যা বলছে, ‘তা আমাদের জানা বোঝার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়’।
তবে প্রতিবেদনটির কোথায় ভুল আছে কিংবা চীন কিউবায় আড়ি পাতার কেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা করছে কিনা, তার বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
কিউবা থেকে চীনের গোয়েন্দাগিরির বিষয়টি জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেকার বিষয়, সেসময় বেইজিং বিশ্বজুড়েই তার তথ্য সংগ্রহ কাঠামো শক্তিশালী করছিল, বলেছেন ওই কর্মকর্তা।
“এটা চলমান ইস্যু, নতুন কিছু নেই। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন ২০১৯ সালে কিউবাতে তাদের তথ্য সংগ্রহ কেন্দ্রগুলোর আধুনিকায়ন করেছে। এটা আমাদের গোয়েন্দা রেকর্ডে ভালোভাবেই সন্নিবেশিত আছে,” বলেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনে চীন দূতাবাসের এক কর্মকর্তার কাছে রয়টার্স প্রতিক্রিয়া চাইলে তিনি শুক্রবার তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের দেওয়ার মন্তব্য দেখতে অনুরোধ করেন।
ওই মন্তব্যে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সবচেয়ে শক্তিশালী হ্যাকার সাম্রাজ্য’ অ্যাখ্যা দিয়ে কিউবায় গুপ্তচর কেন্দ্র নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ওয়াশিংটন ‘গুজব ছড়াচ্ছে ও অপবাদ দিচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছেন।
বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তার মন্তব্য নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিউবার সরকার কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি।
তবে বৃহস্পতিবার কিউবার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্লোস ফার্নান্দেজ দে কোসিও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনকে ‘পুরোপুরি অসত্য’ অ্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, দ্বীপদেশ কিউবার ওপর কয়েক দশক ধরে চাপিয়ে রাখা নিষেধাজ্ঞাকে ন্যায্য দেখাতে যুক্তরাষ্ট্র এইসব বানোয়াট কথাবার্তা বলছে।
লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে বিদেশি সামরিক বাহিনীর উপস্থিতিকে কিউবা খারিজ করে আসছে, বলেছেন তিনি।
ফেব্রুয়ারিতে সীমান্ত টপকে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূল দিয়ে চীনের এক বিমান ঢুকে পড়ার পর সেটিকে গোয়েন্দা বেলুন অ্যাখ্যা দিয়ে গুলি করে ভূপাতিত করেছিল মার্কিন সামরিক বাহিনী।
এই ঘটনা দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়, তা প্রশমিত করতে বেইজিং ও ওয়াশিংটন যখন নানান পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছে তখনই কিউবাকে কেন্দ্র করে চীনের গোয়েন্দাগিরির এই প্রতিবেদন মনোযোগ পেল।
দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা নামিয়ে আনতে এ মাসের ১৮ তারিখ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের চীন সফরেও যাওয়ার কথা রয়েছে। ওয়াশিংটনের এই শীর্ষ কূটনীতিকের আরও আগেই চীনে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বেলুনকাণ্ডে তা পিছিয়ে যায়।
বাইডেন প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা বলেন, ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনই কিউবায় চীনা গোয়েন্দাঘাঁটির বিষয়ে অবগত হয়েছিল এবং এই প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় কিছু করার উদ্যোগও নিয়েছিল।
“আমরা তেমন কিছু করতে পারিনি, এখন দরকার আরও সরাসরি বিষয়টি নিয়ে কাজ করা,” বলেছেন ওই কর্মকর্তা।
তিনি জানান, চীনা ঘাঁটি বসানোর কথা ভাবছে এমন সরকারগুলোর সঙ্গে মার্কিন কূটনীতিকদের কথাবার্তা ও তথ্য আদান-প্রদান চলছে।
“আমাদের কূটনৈতিক কার্যক্রম যে চীনের অগ্রগতি কমিয়ে দিয়েছে তা আমাদের বিশ্লেষকদের পর্যালোচনায় উঠে এসেছে। আমরা মনে করছি, চীন অতদূর যেতে পারেনি, যতটা তারা আশা করেছিল,” বলেছেন তিনি।