বিবিসির দিল্লি-মুম্বাই কার্যালয়ে দ্বিতীয় দিনের মত কর কর্মকর্তাদের অভিযান

ভারতে বিবিসি কর্তৃপক্ষ এক ইমেইলে সম্প্রচার বিভাগ ছাড়া অন্য সব বিভাগের কর্মীদের আপাতত বাসা থেকে অফিস করতে বলেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2023, 06:30 AM
Updated : 15 Feb 2023, 06:30 AM

ভারতের দিল্লি ও মুম্বাইয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির কার্যালয়ে টানা দ্বিতীয় দিনের মত তল্লাশি চালিয়েছেন আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা।

এনডিটিভি জানিয়েছে, বিবিসি কর্তৃপক্ষ এক ইমেইলে সম্প্রচার বিভাগ ছাড়া অন্য সব বিভাগের কর্মীদের আপাতত বাসা থেকে অফিস করতে বলেছে।

ওই ইমেইলে বলা হয়েছে, কর কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত আয়ের তথ্য জানতে চাইলে বিবিসি কর্মীরা উত্তর নাও দিতে পারেন। তবে বেতন সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্য জানতে চাইলে তাদের তা বলা উচিত। কর কর্মকর্তাদের এই তল্লাশিতে ‘সহযোগিতা’ করতেও কর্মীদের পরামর্শ দিয়েছে বিবিসি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে বিবিসি একটি তথ্যচিত্র সম্প্রচার করেছিল। তার কয়েক সপ্তাহ পর মঙ্গলবার দিল্লি ও মুম্বাইয়ে বিবিসি দপ্তরে কর কর্মকর্তারা প্রথম দফা অভিযান চালান।

অফিসে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের মোবাইল ফোন জমা নিয়ে তারপর সেখানে তল্লাশি চালানো হয় প্রথম দিন। বুধবারও ওই দুই অফিসে কর কর্মকর্তারা অভিযান চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, অননুমোদিত কর অব্যাহতির সুযোগ নেওয়া, কর ফাঁকি, লাভের অংশ নিয়ম ভেঙে স্থানান্তরসহ বিবিসি দপ্তরের কর সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত করার কথা বলেছেন কর কর্মকর্তারা।  

বুধবার তারা বিবিসির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিয়ে অনুসন্ধানের পাশাপাশি এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।

বিবিসি-র তথ্যচিত্রটিতে ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় মোদীর নেতৃত্ব ও তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। গুজরাটে ওই দাঙ্গার সময় মোদী পশ্চিমাঞ্চলীয় এই রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোশ্চেন’ শীর্ষক তথ্যচিত্রটি সম্প্রচার হওয়ার পর ভারতে রাজনীতিতেও উত্তপ্ত ছড়ায়। ভারতজুড়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হলে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, বিতর্কিত কাহিনী ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ওই তথ্যচিত্রটি একটি ‘বানোয়াট অপপ্রচার’।

তথ্যচিত্রটি কেবল যুক্তরাজ্যের টিভিতে সম্প্রচারিত হলেও ভারত সরকার স্যোশাল মিডিয়ায় এর শেয়ার ঠেকানোর চেষ্টা করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তথ্যচিত্রটি তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে। টুইটার, ইউটিউবকে এ সংক্রান্ত সব টুইট এবং ভিডিও মুছে ফেলতে বলা হয়।

এ নিয়ে ভারতে তোলপাড় শুরু হলে বিরোধীরা বিভিন্ন জায়গায় সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে। ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে তথ্যচিত্রটি দেখায়। তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বিরোধে জড়িয়ে পড়ে তারা। গতমাসে দিল্লি পুলিশ তথ্যচিত্র দেখতে জড়ো হওয়া ছাত্রদেরকে গ্রেপ্তারও করে।

ভারতের বিরোধীদল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপাল বিবিসি কার্যালয়ে তল্লাশির সমালোচনা করে বলেছেন, এ ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে যে, মোদী সরকার সমালোচনাকে ভয় পায়। এক টুইটে তিনি লিখেছেন, “এমন অগণতান্ত্রিক এবং স্বৈরাচারী মনোভাব আর চলতে পারে না। আমরা কঠোর ভাষায় ভয়ভীতি দেখানোর এমন কৌশলের নিন্দা জানাই।”

অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একজন মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া বিবিসিকে 'বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা' আখ্যায়িত করেছেন।

তিনি বলেন, "ভারত এমন একটি দেশ যা সব সংস্থাকেই সুযোগ দেয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা বিষ ছড়ায়"।

ভারতের এডিটরস গিল্ড বলেছে, বিবিসি কার্যালয়ে তল্লাশির ঘটনায় তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সরকারি নীতি বা সংস্থাগুলোর সমালোচক সংবাদ মাধ্যমগুলোকে ‘ভয় দেখানো এবং হয়রানি করতে’ সরকারি সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করার প্রবণতা থেকেই এসব করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বিবিসি কার্যালয়ে ভারতীয় কর্মকর্তাদের এই অভিযানের বিষয়ে তারা অবগত। তারা সব সময় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তবে ভারতে যা ঘটেছে, তা নিয়ে মন্তব্য করার মত অবস্থানে তারা নেই।

আর যুক্তরাজ্যের তরফ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি।