ভারি বৃষ্টির পর সুমাত্রার সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি মারাপি থেকে পানির স্রোতের সঙ্গে আগ্নেয়গিরির ছাই ও পাথর নেমে আসে।
Published : 13 May 2024, 03:37 PM
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম সুমাত্রা প্রদেশে হড়কা বান ও একটি আগ্নেয়গিরি থেকে নেমে আসা ‘শীতল লাভা’র স্রোতে অন্তত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার কয়েক ঘণ্টার ভারি বৃষ্টির পর সুমাত্রার সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি মারাপি থেকে পানির তীব্র স্রোতের সঙ্গে আগ্নেয়গিরির ছাই ও পাথর নেমে আসে। এই কাদার স্রোতে দুটি জেলা তলিয়ে যায় এবং শতাধিক ঘরবাড়ি, মসজিদ ও সরকারি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত করে ও লোকজনের মৃত্যুর কারণ হয়।
এ ঘটনার পর থেকে ১৭ জন মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন; জানিয়েছে বিবিসি।
জীবিতরা জানিয়েছেন কীভাবে তারা তাদের বাড়ির দিকে ধেয়ে আসা ‘শীতল লাভা’ থেকে রক্ষা পেয়েছেন। ‘শীতল লাভা’ আগ্নেয়গিরির উপাদান ও নুড়ি-পাথরের একটি সংমিশ্রণ যা বৃষ্টির পানির সঙ্গে আগ্নেয় পবর্ততের ঢাল বেয়ে নেমে আসে।
আগাম জেলার গৃহিণী রিনা দেভিনা (৪৩) বলেন, “আমি বজ্রপাত ও ফুটন্ত পানির মতো শব্দ শুনতেই পাই। এগুলো ছিল মারাপি পর্বত থেকে পড়তে থাকা বড় বড় পাথরের শব্দ। এগুলো সব আলকাতরার মতো কালো ছিল, তাই আমি আমার মোবাইল ফোনকে টর্চের মতো করে ব্যবহার করি।
“রাস্তাগুলো সব কর্দমাক্ত ছিল। তাই আমি বার বার খোদার নাম নিতে থাকি।”
তিন সন্তানের এই মা জানান, তাদের প্রতিবেশীদের বাড়িটি বড় একটি পাথরের নিচে চাপা পড়ে গুড়িয়ে গেছে আর তার চার প্রতিবেশী মারা গেছেন।
ইন্দোনেশীয় ও তাগালোগ শব্দ ‘লাহার’ এর অনুবাদ হিসেবে ‘শীতল লাভা’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিবিসি জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, শূন্য থেকে ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার মধ্যে ‘লাহার’ বা ‘শীতল লাভা’ গঠিত হয়, কিন্তু এগুলোর তাপমাত্রা সাধারণত ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে থাকে।
চলন্ত লাহারের স্রোত অনেকটা ‘পাতলা কংক্রিটের স্রোতের মতো’, চলার পথে অন্যান্য আবর্জনা এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফলে এর পরিমাণ ও আয়তন বাড়তে থাকে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে।
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় তল্লাশি ও উদ্ধার সংস্থা জানিয়েছে, রোববার সন্ধ্যার মধ্যে উদ্ধার কর্মীরা আগাম জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম চাংডুয়াংয়ে ১৯টি মৃতদেহ পান। তারা প্রতিবেশী জেলা তানা দেতার থেকে আরও ৯টি মৃতদেহ উদ্ধার করেন।
মানুষের বিভিন্ন ধরনের তৎপরতার কারণেই অংশত বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটছে বলে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজে বন উজার ও পাহাড়-পর্বতে খোঁড়াখুড়ি বা ধ্বংস এবং এলোমেলো উন্নয়ন প্রকল্পের ফলে এ ধরনের দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মত তাদের।
গত ছয় মাসে মারাপি পর্বতের চারপাশে একই ধরনের বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে।