শুধুই নির্বাচন চান, আবারও বললেন ইমরান খান

এক বছরের বেশি সময় ধরে পিটিআইকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন পাকিস্তানের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2023, 05:19 PM
Updated : 18 May 2023, 05:19 PM

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে পাকিস্তানের রাজনীতিতে যে নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে তার পরিণতি কী হতে পারে তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না।

একে একে পিটিআইর কয়েকজন নেতা দল ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে ইমরানের অভিযোগ, এক বছরের বেশি সময় ধরে তার দলকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলছে।

তার অভিযোগের তীর দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীন জোট সরকারের দিকে। গত বছর পার্লামেন্টে ‍অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পর ইমরান প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়তে বাধ্য হলে শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে সরকার গঠন করে দেশটির সেই সময়ের বিরোধী জোট।

ক্ষমতা ছাড়লেও তখন থেকেই নতুন করে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন ইমরান ও তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর কর্মী-সমর্থকরা।

এ সময়ে ইমরান জনসমাবেশের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বিবাদে জড়িয়েছেন পাকিস্তানের প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর সঙ্গে।

একের পর এক মামলা হয়েছে তার নামে। মামলা হয়েছে স্ত্রী বুশরা বিবির নামেও। বুধবার থেকে পাঞ্জাব পুলিশ ইমরানের জামান পার্কের বাসভবন ঘিরে রেখেছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে ইমরান বলেন,  ‘‘এক বছরের বেশি সময় ধরে পিটিআইকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু তারা (সরকার) যা কিছুই করছে সেটা শুধুমাত্র (আমাদের) দলকে শক্তিশালী করছে।”

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে পিটিআইর বিরোধ প্রসঙ্গে ইমরান বলেন, ‘‘পিটিআইকে সেনাবাহিনীর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে...সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পিটিআইকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়াই তাদের লক্ষ্য।

‘‘এর পেছনে রয়েছে পিডিএম এবং এটা দেশের জন্য খুবই বিপজ্জনক। তারা নির্বাচনে আমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে না। তাই এখন তারা সেনাবাহিনীর বিরদ্ধে আমাদের দাঁড় করাতে চাইছে।”

যে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করবে সে শুধু দেশ হারাবে বলেও মন্তব্য করেন এই নেতা।

তিনি বলেন, ‘‘নিজের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই কেইবা চায়? যা কিছু হচ্ছে তাতে একমাত্র লাভ পিডিএম এর। দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

‘‘আসলে কে আমার প্রতিপক্ষ? পিডিএমকে একপাশে সরিয়ে রাখলাম, তাদের কোনো মূল্য নেই। আমার লড়াই তাদের (সেনাবাহিনীর) সঙ্গে নয়। তারা আমার উপর রেগে আছে এবং আমি এখনো জানি না তার কারণ কী।”

পিটিআই নেতাদের দল ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া প্রসঙ্গে ইমরান বলেন, আমাদের অনেক সদস্য দলত্যাগ করছেন। তাদের অনেককেই আমি চিনি না, কিন্তু আমি বিশেষ করে আমের মেহমুদ কিয়ানির দলত্যাগে দুঃখ পেয়েছি। তিনি দলের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু তাদের উপর এখন প্রবল চাপ এবং সবাই এই চাপ সহ্য করতে পারেন না। তাই আমি জনগণকে বলবো, তাদের সামলোচনা করবেন না। আজ তাদের যে পরিমাণ চাপ সহ্য করতে হচ্ছে, এ দেশের ইতিহাসে আর কখনো রাজনীতিকদের এতটা চাপ সহ্য করতে হয়নি।”

এমনকী যদি দলের সবাই পদত্যাগ করে তারপরও তিনি একা ‘স্বাধীনতার অধিকারের’ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন।

তিনি এদিন আবারও ‘লন্ডন প্ল্যান’ এর অভিযোগ তুলে বলেন, ‘‘আমার গ্রেপ্তার...তারা আমাকে নির্মূল এবং পিটিআইকে নিষিদ্ধ করতে চায়... এ সব কিছুই লন্ডন প্ল্যানের অংশ।

‘‘শেষ পর্যন্ত এসব থেকে আপনি কী পাবেন? গণতন্ত্র, জনগণ এবং দেশকে এজন্য ভুগতে হচ্ছে।”

ইমরান বলেন, তার এই আন্দোলনের একটাই লক্ষ্য, সেটা হলো নির্বাচন। নির্বাচন আয়োজন ছাড়া বাকি সব কিছুই ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে বলে সতর্কও করেন তিনি।

বলেন, ‘‘আজ পাকিস্তান কোথায় দাঁড়িয়ে, স্বাধীন ও স্বচ্ছ নির্বাচন ছাড়া আপনি যে পথই গ্রহণ করুন, সেটা আপনাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। এই চোরাবালি থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায় স্বাধীন ও স্বচ্ছ নির্বাচন।

‘‘আমার কারো সঙ্গে কথা হয়নি। আমি সবসময়ই বলেছি, আমি সবার সঙ্গেই আলোচনায় বসতে রাজি আছি। তবে আলোচনা হবে শুধুমাত্র নির্বাচন নিয়ে।”