সোমালিয়ায় বন্যায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত

আফ্রিকার দেশটি চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার কাল পার করার পরই বন্যার কবলে পড়ল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2023, 12:21 PM
Updated : 18 May 2023, 12:21 PM

সোমালিয়ার কেন্দ্রস্থল দিয়ে বয়ে যাওয়া শাবেলে নদীর পাড় ভেঙে উপচানো পানি বেলেদোয়েইনে শহর প্লাবিত করার পর সেখানকার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।

আফ্রিকার দেশটি চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার কাল পার করার পরই বন্যার কবলে পড়ল, সোমালিয়ার সরকারের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বিশ্বব্যাপী মানুষের বিপদ আরও তীব্র করা বিষয়গুলোর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনও যে আছে তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা ও বিভিন্ন দাতা সংস্থা অনেকদিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের এই ক্ষতিকর প্রভাব কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনে যাদের দায় সবচেয়ে কম তাদের ওপরও পড়ছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মৌসুমী বৃষ্টি এবং ইথিওপিয়ার উচ্চভূমি থেকে নেমে আসা পানিতে সৃষ্ট বন্যা সোমালিয়ার অসংখ্য ঘরবাড়ি, ফসল, গবাদিপশু ভাসিয়ে নিয়েছে। বন্যার ফলে হিরান অঞ্চলের রাজধানী বেলেদোয়েইনের কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল ও স্কুলগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।

বন্যায় দোকান ভেসে যাওয়া স্থানীয় বাসিন্দা আহমেদ নূর বলেছেন, “মুহূর্তের মধ্যে পুরো শহর পানির নিচে তলিয়ে যায়। বেলেদোয়েইনেকে দেখতে মনে হচ্ছিল অনেকটা সমুদ্রের মতো। কেবল বাড়ির ছাদগুলো দেখা যাচ্ছিল। লোকজনকে উদ্ধারে আমরা ছোট নৌকা, ট্রাক্টর ব্যবহার করেছি।”

তিনি এখন শহরের একপ্রান্তে আত্মীয়দের বাসায় থাকছেন। অথচ মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই তারা খরা শেষ হওয়ায় উৎসব করেছিলেন।

“বৃষ্টি আসায় আমরা খুশি হয়েছিলাম। লোকজন তাদের ফসল বোনা শুরু করেছিল,” বলেন নূর।

এই খরার সঙ্গে সহিংসতা আর ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে বেড়ে যাওয়া খাবারের দাম কেবল গত বছরই সোমালিয়ার ৪৩ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, বলছে জাতিসংঘের হিসাব।

জাতিসংঘ মানবিক কার্যালয়ের (ওসিএইচএ) হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর মার্চের মাঝামাঝি থেকে একাধিক বন্যায় দেশটির ৪ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, মারা গেছে ২২ জন।

কেবল বেলেদোয়েইনির বন্যাতেই দুই লাখ ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, জানিয়েছে সোমালিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা।

“টানা ছয় মৌসুমে হওয়া কম বৃষ্টির প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে,” রোববার দেওয়া এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলেছিল ওসিএইচএ।

বৃষ্টির ফলে পানির উৎসগুলো নতুন করে ভরে উঠবে পাশাপাশি গাছপালাও ফের গজানোর সুযোগ পাবে। তবে খরার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে আরও অনেক বেশি বৃষ্টি লাগবে, প্রতিবেদনে বলেছে ওসিএইচএ।

খরা, বন্যা- একের পর এক এমন দুর্যোগে তিতিবিরক্ত হয়ে পড়েছেন বেলেদোয়েইনের বাসিন্দা হালিমা আব্দুল্লাহ।

“আমরা দূরের গ্রামে চলে যাবো। বেলেদোয়েইনেতে আর নয়,” বলেছেন দুই সন্তানের এই মা।

হালিমার মতো বিশ্বের প্রায় ২২ কোটি মানুষ জলবায়ুজনিত চাপে ২০৫০ সালের মধ্যে নিজের দেশের ভেতরেই অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হবেন বলে অনুমান বিশ্ব ব্যাংকের।