পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে ৪৮ ঘণ্টা। এখনও ঘোষণা হয়নি চূড়ান্ত ফলাফল। সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবং ইমরান খান উভয়ই নিজেদের জয় দাবি করেছেন। এমন অবস্থায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেশবাসীকে ‘নৈরাজ্য ও দলাদলি’ ত্যাগ করে ঐক্য গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া ফলাফল অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১০০টি আসনে জয়লাভ করেছে। বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে অন্তত ৯০ জন পিটিআই সমর্থিত বলে রয়টার্সের একটি বিশ্লেষণে উঠে এসেছে।
আর নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন ৭২টি আসনে এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পাকিস্তান পিপুলস পার্টি (পিপিপি) অন্তত ৫৩টি আসনে জয়লাভ করেছে। বাকি আসনগুলোতে ছোট ছোট দল বা অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।
২৬৫টি আসনের মধ্যে এখনো ১০টি আসনের ফল পাওয়া যায়নি বলে জানায় রয়টার্স।
পাকিস্তানে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য নয়। পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ৭০টি আসন সংরক্ষিত। সে অনুযায়ী, নওয়াজের দল ২০টি আসন পাবে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, এবারের নির্বাচনে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নওয়াজকে সমর্থন করছে বলেই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। হঠাৎ করে চার বছরের স্বেচ্ছা নির্বাসন ছেড়ে গত অক্টোবরে নওয়াজের দেশে ফিরে আসা এবং একের পর এক দণ্ড মওকুফ হওয়া সেই প্রমাণই দিয়েছে।
এদিকে, দণ্ড মাথায় নিয়ে কারাবন্দি ইমরান নির্বাচনই করতে পারলেন না। তার দলকেও নানা আইন দেখিয়ে তাদের দলীয় প্রতীক ‘ব্যাট’ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। সঙ্গে নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার ও দমন-পীড়ন তো ছিলেই। ফলে পিটিআই এর নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে নামতে বাধ্য হন।
ভোটের আগে অবস্থার প্রেক্ষিতে ধারণা করা হচ্ছিল নওয়াজের দল বড় জয় পেতে চলেছে। সেই স্বাধীনতার পর থেকেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে বড় খেলোয়াড় দেশটির প্রভাবশালী সামরিক বাহিনী। হয় সামরিক বাহিনী সরাসরি দেশ শাসন করেছে বা তাদের পছন্দের পাত্র দেশটির প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ইমরানের উত্থানও সেভাবেই হয়েছিল এবং এবার ভোটের আগে নওয়াজের জয়ের দিকে তাই পাল্লা ভারি ছিল।
কিন্তু সে হিসাব উল্টে দেন পিটিআই সমর্থকরা। পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা জিতে যান সবচেয়ে বেশি আসনে।
যদিও নওয়াজ দাবি করেছেন, একক দল হিসেবে তারাই সবচেয়ে বেশি আসন জিতেছেন এবং সরকার গঠনের জন্য জোট গঠনের আলোচনা শুরু করেছেন।
যেহেতু ভোটে কেউ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি তাই পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল অসিম মুনির সব দলকে ‘পরিপক্কতা এবং ঐক্য’ প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।
বলেন, “২৫ কোটি মানুষের একটি প্রগতিশীল দেশে রাজনীতি নিয়ে দলাদলি সাজে না।
“নির্বাচনের অর্থ জয়-পরাজয়ের শূন্য-সমষ্টি নয় বরং জনগণের ম্যান্ডেট নির্ধারণের একটি মহড়া মাত্র।”