ইসরায়েলিরা যখন উদ্ধার পাওয়া জিম্মিদের নিয়ে উল্লাস করছিলেন তখন গাজার আল-নুসেইরাতের রাস্তায় বহু মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল।
Published : 09 Jun 2024, 12:02 AM
ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় অভিযান চালিয়ে চার জিম্মিকে উদ্ধার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। যে এলাকা থেকে এদের উদ্ধার করা হয়েছে সেখানে ইসরায়েলি বিমান হামলায় দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে হামাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এর ফলে শনিবার আট মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধের অন্যতম রক্তাক্ত দিন হয়ে উঠেছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার দিন থেকে ইসরায়েলি ওই জিম্মিরা গাজায় হামাসের হাতে বন্দি হয়ে ছিল।
রয়টার্স জানিয়েছে, জিম্মি উদ্ধার ও ইসরায়েলি বিমান হামলা একই অভিযানের অংশ ছিল কি না তাৎক্ষণিকভাবে তা পরিষ্কার হয়নি, কিন্তু উভয় ঘটনা গাজায় মধ্যাঞ্চলীয় আল-নুসেইরাত এলাকায় ঘটেছে।
এলাকাটি ঘন বসতিপূর্ণ। গত আট মাসে এখানে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধাদের অনেকগুলো লড়াইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি জানিয়েছেন, আল-নুসেইরাতের একটি আবাসিক এলাকার কেন্দ্রস্থলে গুলিবর্ষণের মধ্যেই জিম্মি উদ্ধার অভিযানটি শুরু হয়। তিনি জানান, সেখানে বন্দিদের গাজার বেসামরিকদের মাঝে লুকিয়ে রেখেছিল হামাস কিন্তু তাদের পাহারায় ছিল সশস্ত্র রক্ষী।
তিনি আরও জানান, হামাসের যোদ্ধাদের গুলির জবাবে ইসরায়েলি বাহিনী পাল্টা গুলিবর্ষণ করে, বিমান হামলাও চালায়।
এক বিবৃতিতে পুলিশ জানিয়েছে, এই অভিযান চলাকালে ইসরায়েলের স্পেশাল ফোর্সের এক কমান্ডার নিহত হন।
ইসরায়েল উদ্ধার পাওয়া জিম্মিদের নাম প্রকাশ করেছে। তারা হলেন নোয়া আরগামানি (২৬), আলমোগ মেইর জান (২২), আন্দ্রে কোজলোভ (২৭) ও স্লোমি জিভ (৪১) । এদের মধ্যে নোয়া আরগামানি নারী ও বাকি তিনজন পুরুষ।
উদ্ধার পাওয়া জিম্মিদের হেলিকপ্টারে করে গাজা থেকে ইসরায়েলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। ইসরায়েলিরা যখন তাদের নিয়ে উল্লাস করছিলেন তখন গাজার আল-নুসেইরাত এলাকায় অন্যরকম এক ছবি উন্মোচিত হয়। সেখানে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ও স্থানীয় চিকিৎসা কর্মীরা জানান, ইসরায়েলের সামরিক বাহিণীর আক্রমণে নারী ও শিশুসহ বহু মানুষ নিহত হয়েছে।
রয়টার্স বলছে, নিহতদের মধ্যে কতোজন ফিলিস্তিনি যোদ্ধা মন্ত্রণালয়টি তা পরিষ্কার করে জানায়নি।
গাজার হামাস পরিচালিত সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর পরে জানায়, মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে অন্তত ২১০ জনে দাঁড়িয়েছে, আরও বহু ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
প্রথম পর্যায়ে গাজার চিকিৎসা কর্মীরা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা শতাধিক নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। পরে গাজার তথ্য দপ্তর নিহতের সংখ্যা ২১০ বলে জানালেও গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে সংখ্যাটি নিশ্চিত করেনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা ভিডিওতে রক্তে ভেসে যাওয়া রাস্তায় ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে, তবে রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে এর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
নুসেইরাতের বাসিন্দা চিকিৎসা কর্মী জিয়াদ (৪৫) বলেন, “হরর সিনেমার মতো হলেও এটি বাস্তব নির্বিচার হত্যা। এই এলাকায় ইসরায়েলি ড্রোন ও যুদ্ধবিমানগুলো সারারাত লোকজনের ঘরবাড়ি ও পলায়পর মানুষের ওপর এলোমেলোভাবে গুলিবর্ষণ করেছে।”
একটি ম্যাসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে তিনি রয়টার্সকে জানান, নুসেইরাতের একটি বাজার এলাকা ও আল-আওদা মসজিদ বোমা হামলার লক্ষ্য ছিল।
“চারজন মানুষকে মুক্ত করতে ইসরায়েলিরা ডজন ডজন নিরপরাধ বেসামরিককে হত্যা করে রেখে গেল,” বলেন তিনি।