কোভিড: চীনে আইফোন কারখানায় বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ

ভিডিওগুলোতে কারখানার কয়েকশ কর্মীকে বিক্ষোভ করতে এবং দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াতে দেখা গেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2022, 10:14 AM
Updated : 23 Nov 2022, 10:14 AM

চীনের ঝেংঝো শহরে বিশ্বের সর্ববৃহৎ আইফোন কারখানায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে বলে অনলাইনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে দেখা গেছে।

ভিডিওগুলোতে কারখানার কয়েকশ কর্মীকে বিক্ষোভ করতে এবং কয়েকজনকে হ্যাজম্যাট স্যুট পরিহিত ব্যক্তি ও দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

পুলিশ কারখানাটির কর্মীদের ব্যাপক মারধোর করেছে বলে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের দৃশ্য সোশাল মিডিয়ায় সরাসরি দেখানো ব্যক্তিরা দাবি করেছেন।

গত মাসে কোভিড সংক্রমণ বাড়তে দেখে ফক্সকন কোম্পানি ওই কারখানাপ্রাঙ্গণ অবরুদ্ধ করে দিয়েছিল; যার দরুন কিছু কর্মী সেখান থেকে পালিয়ে বাড়ি চলে যায়।

কোম্পানি পরে বিশাল বোনাসের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নতুন কর্মী নিয়োগ দেয়।

একটি লাইভস্ট্রিমিং সাইটে শেয়ার করা ফুটেজে কারাখানাটির কর্মীদেরকে ‘আমাদের অধিকার নিশ্চিত কর’ স্লোগান দিতে এবং কিছু কর্মীকে লাঠি দিয়ে নজরদারি ক্যামেরা ও জানালা ভাঙতে দেখা গেছে।

একাধিক ক্লিপিংয়ে কর্মীদের খাবার নিয়ে অভিযোগ করতেও দেখা গেছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বোনাস পাননি বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন।

“তারা চুক্তিপত্র বদলে নিয়েছে, যেন আমরা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভাতা না পাই। তারা আমাদের কোয়ারেন্টিনে রেখেছে কিন্তু খাবার দিচ্ছে না। তারা যদি আমাদের প্রয়োজনের দিকে নজর না দেয়, তাহলে আমরা লড়বো,” লাইভস্ট্রিমে এমনটাই বলতে শোনা গেছে ফক্সকনের এক কর্মীকে।

তিনি পুলিশের মারধরে এক ব্যক্তি ‘গুরুতর আহত হয়েছেন এবং সম্ভবত মারা গেছেন’ বলে দাবিও করেছেন।

সম্প্রতি ঝেংঝোর ওই কারখানায় কাজ শুরু করা এক কর্মী বিবিসিকে বলেছেন, ফক্সকন তাদের ‘প্রতিশ্রুত চুক্তিপত্র বদলে ফেলায়’ কর্মীরা বিক্ষোভ করছে।  

নতুন কাজে যোগ দেওয়া কর্মীদের অনেকেই আগের প্রাদুর্ভাবের সময় কারখানাটিতে থাকা কর্মীদের কাছ থেকে সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কায় আছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

“বিক্ষোভ করা কর্মীরা ভাতা পেতে ও বাড়ি ফিরতে চাইছেন,” বলেছেন ওই কর্মী।

বুধবার সকালে ওই কারখানায় ব্যাপক পুলিশি উপস্থিতির বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন তিনি।

অন্যান্য লাইভস্ট্রিম ভিডিওতেও ঘটনাস্থলে বিপুল পরিমাণ সশস্ত্র পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে।

নতুন কাজে যোগ দেওয়া আরেক কর্মী বিবিসিকে বলেছেন, বুধবার বিক্ষোভস্থলে গিয়ে তিনি ‘মাটিতে পড়ে থাকা এক ব্যক্তির মাথায় রক্ত’ দেখতে পেয়েছেন।

“আমি জানি না কেন তারা বিক্ষোভ করছিলেন, তবে তারা (কর্তৃপক্ষ) আমাদের মতো নতুন কর্মীদের সঙ্গে (কোভিড) পজিটিভ ছিলেন এমন পুরনো কর্মীদের মিশিয়ে দিচ্ছিল,” বলেছেন তিনি।

এসব ভিডিও ও বিক্ষোভের খবরের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত ফক্সকন কোনো মন্তব্য করেনি। অ্যাপলের এ প্রধান সাবকন্ট্রাক্টর কোম্পানির ঝেংঝোর কারখানায় যন্ত্রাংশ সংযোজনের মাধ্যমে যে পরিমাণ আইফোন উৎপাদন করা হয়, বিশ্বের আর কোথাও ততটা হয়না। 

অক্টোবরের শেষদিকে কোভিড রোগীর ঊর্ধ্বগতির মধ্যে কারখানাটির অনেক কর্মী পালিয়ে বাড়ি চলে যান। সেসময় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কর্মীদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগও উঠেছিল।

লরিতে চেপে কারখানাটির কর্মীদের বাড়ি ফেরার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক শোরগোল তুলেছিল।  

ফক্সকন তখন বাকি কর্মীদের বুঝিয়ে শুনিয়ে কারখানায় রাখার চেষ্টা করে এবং বাড়তি বেতন-বোনাসের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নতুন কর্মী নিয়োগ দেয়।

প্রতিষ্ঠানটি এরপর ঝেংঝোর ওই কারখানায় তথাকথিত ‘ক্লোজড লুপ’ ব্যবস্থা চালু করে, যাতে তাদের কর্মীদের ঝেংঝোর অন্য অংশ থেকে আলাদা রাখা যায়।

চলতি মাসের শুরুতে অ্যাপল বলেছে, ঝেংঝোতে উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ায়  তাদের আইফোন ১৪ মডেলের চালান কমবে বলে ধারণা তাদের।