ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে বিতর্কিত তথ্যচিত্র যুক্তরাজ্যে সম্প্রচারের কয়েক সপ্তাহ পর এ অভিযান চালানো হল।
Published : 14 Feb 2023, 05:20 PM
ভারতের দিল্লি ও মুম্বাইয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র কার্যালয়ে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছেন আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে বিতর্কিত তথ্যচিত্র যুক্তরাজ্যে সম্প্রচারের কয়েক সপ্তাহ পর মঙ্গলবার সকালে এ অভিযান চালানো হয়।
অফিসে উপস্থিত থাকা সংবাদকর্মীদের মোবাইল ফোন জমা নিয়ে তারপর তল্লাশি চালিয়েছেন কর্মকর্তারা। কেনো আচমকা এ অভিযান চালানো হল তা স্পষ্ট নয়।
‘আয়কর জরিপের’ অংশ হিসেবে এ অভিযান চালানো হয়েছে এমন কথা শোনা যাচ্ছে। আবার ভারতে বিবিসি’র ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে ‘কর ফাঁকি’র তদন্তের আওতায় এ অভিযান চলেছে বলেও শোনা যাচ্ছে।
বিবিসি’ও তাদের কার্যালয়ে তল্লাশি অভিযান চলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুরোপুরি সহযোগিতা করছে। যত দ্রুত সম্ভব এই পরিস্থিতির সমাধান হয়ে যাবে বলে তারা আশা করছে।
বিবিসি-র তথ্যচিত্রটিতে ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় মোদীর নেতৃত্ব ও তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। গুজরাটে ওই দাঙ্গার সময় মোদী পশ্চিমাঞ্চলীয় এই রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
বিবিসি’র ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোশ্চেন’ শীর্ষক তথ্যচিত্রটিকে কেন্দ্র করে ভারতে রাজনীতি উত্তপ্ত হয়েছে। ভারতজুড়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এ তথ্যচিত্র। তথ্যচিত্রটি বিতর্কিত কাহিনী ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বানানো ‘অপপ্রচার’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে ভারত সরকার।
ফলে তথ্যচিত্রটি কেবল যুক্তরাজ্যের টিভিতে সম্প্রচারিত হলেও ভারত সরকার স্যোশাল মিডিয়ায় এর শেয়ার ঠেকানোর চেষ্টা করেছে। সমস্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তথ্যচিত্রটি তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। টুইটার, ইউটিউবকেও এ সংক্রান্ত সব টুইট এবং ভিডিও মুছে ফেলতে বলা হয়।
এ নিয়ে ভারতে তোলপাড় শুরু হয়। বিরোধীরা বিভিন্ন জায়গায় সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে। ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে তথ্যচিত্রটি দেখায়। তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে তারা। গতমাসে দিল্লি পুলিশ তথ্যচিত্র দেখতে জড়ো হওয়া ছাত্রদেরকে গ্রেপ্তারও করেছে।
এ পরিস্থিতির মধ্যেই মঙ্গলবার বিবিসি’র দিল্লির এবং মুম্বইয়ের কার্যালয়ে আয়কর দপ্তরের অভিযান চলল।
ভারতের বিরোধীদল কংগ্রেস পার্টির সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপাল বিবিসি’র কার্যালয়ে তল্লাশির সমালোচনা করে বলেছেন, এ ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে যে, মোদী সরকার সমালোচনাকে ভয় পায়। এক টুইটে তিনি লেখেন, এমন অগণতান্ত্রিক এবং স্বৈরাচারী মনোভাব আর চলতে পারে না। আমরা কঠোর ভাষায় ভয়ভীতি দেখানোর এমন কৌশলের নিন্দা জানাই।”
তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একজন মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া বিবিসি-কে 'বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা' বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, "ভারত এমন একটি দেশ যা সব সংস্থাকেই সুযোগ দেয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা বিষ ছড়ায়"।
ভারতের এডিটরস গিল্ড বলেছে, বিবিসি কার্যালয়ে তল্লাশির ঘটনায় তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সরকারি নীতি বা সংস্থাগুলোর সমালোচক সংবাদ মাধ্যমগুলোকে ভয় দেখানো এবং হয়রানি করতে সরকারি সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করার প্রবণতা থেকেই এসব করা হচ্ছে।