নীলফামারীর ডোমারের এ ঘটনায় অজ্ঞাত ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।
Published : 09 May 2024, 06:17 PM
নীলফামারীর ডোমার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ফল ঘোষণার সময় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ২১টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলা পরিষদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান ডোমার থানার ওসি মো. মোহসীন আলী।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে অজ্ঞাত ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। পরে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- উপজেলার ছোট রাউতা ফরেস্ট পাড়ার মো. আবু সুফিয়ান (৪০), থানাপাড়া বড় রাউতা গ্রামের মো. রাকিউল ইসলাম (৪০), পশ্চিম বোড়াগাড়ি স্কুল পাড়ার রিমুন ইসলাম (২৪), মেলা পাড়ার ডাঙ্গা গ্রামের মো. হারুন অর রশিদ (৩০) এবং চিলাই পাগলা বাজারের মো. দুলু (৩৮)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে বুধবার ডোমারে ভোট হয়। ভোট গণনা শেষে উপজেলা পরিষদ চত্বরের হল রুমে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ফল সংগ্রহ ও ঘোষণার কার্যক্রম চলছিল। এ সময় সেখানে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হন।
পুলিশ জানায়, রাত সাড়ে ৯টার দিকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণা করার সময় এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর কয়েকশ সমর্থক লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে সেখানে হামলা চালায়। হামলাকারীরা ওই কক্ষের জানালার গ্লাস, টেবিল, চেয়ার ও ফল ঘোষণার কাজে ব্যবহৃত মালামাল ভাঙচুর করে। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে চলে এই তাণ্ডব।
এ সময় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে অবস্থান নেয়। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ঘটনা ঘটে; যা মধ্যরাত পর্যন্ত চলে।
রাত ১টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফল ঘোষণা করেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ডোমার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নূর ই আলম।
জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সরকার ফারহানা আখতার সুমি চেয়ারম্যান পদে টেলিফোন প্রতীকে ৩১ হাজার ৪২১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীকের তোফায়েল আহমেদ পেয়েছেন ২৩ হাজার ১৩৪ ভোট।
নির্বাচন কর্মকর্তা নূর ই আলম বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ফল সংগ্রহ করার কাজ চলছিল। প্রতিটি কেন্দ্র থেকে ফল সংগ্রহের পর তা ঘোষণা করছিলাম। সেইসঙ্গে কম্পিউটারে ৭৫টি কেন্দ্রের ফল একীভূত করা হচ্ছিল। দূরের কয়েকটি কেন্দ্রে থেকে ফল আসতে দেরি হওয়ায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছিল।
“এমন সময় সম্ভবত পরাজিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। নিরাপত্তার স্বার্থে ফল সংগ্রহের কাজ বন্ধ রেখে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেই। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় পরিবেশ স্বাভাবিক হলে রাত ১টার দিকে ফল ঘোষণা করা হয়।”
যারা হামলা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান এই নির্বাচন কর্মকর্তা।
ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল আলম বলেন, ফল ঘোষণার সময় যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
হামলায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নির্বাচন কমিশন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার ডোমার নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফারুক হোসেন বাদী হয়ে ৫০০ থেকে ৭০০ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি রেখে মামলা করেছেন।
ডোমার থানার ওসি মোহসীন আলী বলেন, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তারদের আদালতে পাঠানো হচ্ছে।
চেয়ারম্যান পদে জয়ী সরকার ফারহানা আক্তার সুমি অভিযোগ করে বলেন, “শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে কলঙ্কিত করতে পরাজিত প্রার্থী তোফায়েল তার কর্মী-সমর্থকদের দিয়ে এ হামলা চালিয়েছেন। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ করছি।”
এ বিষয়ে কথা বলতে পরাজিত প্রার্থী আনারস প্রতীকের তোফায়েল আহমেদের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।