এই প্রজন্মেই বিশ্বে বাল্যবিয়ে ও মেয়েদের খৎনার সমাপ্তির আহ্বান এসেছে আন্তর্জাতিক একটি সম্মেলন থেকে।
Published : 22 Jul 2014, 09:57 PM
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সোমবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত গার্ল সামিটে এই আহ্বান জানান।
তার উদ্যোগে এবং ইউনিসেফের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যোগ দেন।
নারীর খৎনা ও বাল্য বিয়ের সমাপ্তির জন্য বৈশ্বিক উদ্যোগের আহ্বান জানান ক্যামেরন। যুক্তরাজ্যে কেউ মেয়ের খৎনা করালে তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে বলেও সতর্ক করে দেন তিনি।
ক্যামেরন বলেন, “এটা খুবই সাধারণ কিন্তু মহান লক্ষ্য যে, এই প্রজন্মেই সবখানে সবার জন্য নারীর খৎনা, বাল্য বিয়ে ও জবরদস্তিমূলক বিয়ে নিষিদ্ধ হবে।”
এগুলো বন্ধ করার লক্ষ্যে করণীয় নির্ধারণ ও প্রতিশ্রুতি আদায়ে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের রাজনীতিকদের পাশাপাশি পাকিস্তানি কিশোরী মালালা ইউসুফজাই এবং অভিনেত্রী ফ্রিদা পিন্টোর মতো নারী শিক্ষাকর্মীরাও উপস্থিত হন। ছিলেন শিশু বয়সে খৎনার ভয়াল অভিজ্ঞতা নিয়ে বেড়ে ওঠা নারীরাও।
নয় বছর বয়সে খৎনার শিকার হওয়া সিয়েরা লিওনের প্রিসিলা করিম নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “জীবনে আমি তখনই সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম। আমার বুকের মধ্যে ভারী কোনো কিছু আটকে আছে বলে মনে হচ্ছিলো।
“এটা একটা ট্যাবুর মতো। তারা আপনাকে এটার বিষয়ে কিছু বলবে না। আপনিও কাউকে বলতে পারবেন না।”
তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ২৫ কোটি নারী শিশুর মধ্যে তিনজনের একজনের বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর বয়সের আগে। এছাড়া ১৮ বছরের আগে বিয়ে হওয়া ৭০ কোটি নারী বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছেন।
ইউনিসেফ জানায়, ৩০ বছর আগের চেয়ে বর্তমানে একটি মেয়ের খৎনার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি এক -তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। তারপরেও ২০৫০ সাল নাগাদ ৬ কোটি ৩০ লাখের বেশি মেয়েকে এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় ১৩ কোটির বেশি নারী ও শিশু এই অভিজ্ঞতা পেরিয়ে এসেছেন।
মেয়েদের খৎনা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হলেও এখনো আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচের ২৯টি দেশে তা হয়ে থাকে।
মেয়েদের খৎনার ঘটনা কমে এলেও তা রোধে জোরালো পদক্ষেপ চেয়েছেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেইক।
বাল্য বিয়ে, জবরদস্তিমূলক বিয়ে ও মেয়েদের খৎনা বৈশ্বিক সমস্যা হলেও স্থানীয়ভাবেই তার সমাধান হতে হবে বলে মনে করেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক।
এর জন্য সমাজ, পরিবার ও মেয়েদেরও মানসিকতার পরিবর্তন দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।