সাবেক জ্যেষ্ঠ খেমারুজ নেতা লেঙ্গ স্যারি মারা গেছেন। কম্বোডিয়ার জাতিসংঘ সমর্থিত যুদ্ধাপরাধ আদালত এই তথ্য জানিয়েছে। ১৯৭৫-৭৯ সময় পর্যন্ত কম্বোডিয়ায় মাওবাদী শাসক পলপটের শাসনামলে গণহত্যার বিচারে গঠিত আদালতে ৮৭ বছর বয়সী স্যারির বিচার চলছিল।
Published : 14 Mar 2013, 06:19 AM
পলপটের সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করছিলেন স্যারি। তিনি ছিলেন ওই সময়ে কম্বোডিয়ার সঙ্গে বহির্বিশ্বের যোগাযোদের একমাত্র মাধ্যম।
স্যারিসহ অপর ৩ জনের বিরুদ্ধে পলপটের শাসনামলে প্রায় ২২ লাখ মানুষকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
আদালতের মুখপাত্র লার্স ওলসেন বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করছি লেঙ্গ স্যারি আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে হাসপাতালে মারা গেছেন।’
তাকে ৪ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
লেঙ্গ স্যারি ‘ব্রাদার নাম্বার থ্রি’ বলেও পরিচিত। ২০১১ সালের নভেম্বরে তাকে ‘ব্রাদার নাম্বার টু’ খ্যাত নুওন চে ও সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান খিউ সাম্পানের সঙ্গে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। তারা তিনজনই তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।
লেঙ্গ স্যারির স্ত্রী ইয়াঙ থেরিথকেও বিচারের মুখোমুখি করা হয়। কিন্তু আলঝেইমারে আক্রান্ত হওয়ায় শারীরিকভাবে অক্ষমতার কারণে থেরিথকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
লেঙ্গ স্যারি ছিলেন খেমারুজ শাসক ‘ব্রাদার নাম্বার ওয়ান’ খ্যাত পলপটের শ্যালক। খেমারুজ প্রতিষ্ঠায় পলপটের অন্যতম সহযোগী ছিলেন স্যারি। ১৯৯৮ সালে কম্বোডিয়ার জঙ্গলে আত্মগোপন করে থাকা অবস্থায় পলপট মারা যান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে লেঙ্গ স্যারি অনেক শিক্ষিত কম্বোডিয়ানকে দেশে এসে রাষ্ট্র পুনর্গঠনে অংশ নেওয়ার জন্য সম্মত করতে সক্ষম হন। কিন্তু তাদের অনেকেই তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক মতামতের কারণে নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন।
১৯৯৬ সালে লেঙ্গ স্যারিকে ক্ষমা করা হলেও ৬ বছর আগে দেশটিতে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ২০১১ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত কম্বোডিয়ার ক্ষমতায় ছিলো খেমারুজ। এ সময় প্রায় ২২ লাখ কম্বোডীয় নাগরিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ গণহত্যার শিকার হয়।ভিয়েতনামী বাহিনী ১৯৭৯ সালে কম্বোডিয়ায় অভিযান চালিয়ে ক্ষমতা থেকে খেমারুজদের উচ্ছেদ করে।
গণহত্যার বিচারে ট্রাইবুনাল স্থাপনে ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানায় কম্বোডিয়ার তৎকালীন সরকার। দীর্ঘদিন আলাপ-আলোচনার পর ২০০৬ সালে একটি যৌথ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়।
তবে ব্যাপক এ গণহত্যার অপরাধে এখন পর্যন্ত মাত্র একজন অভিযুক্ত শীর্ষ খেমারুজ নেতা যিনি কমরেড ডাচ নামে পরিচিত ছিলেন,সেই কায়িং গুয়েক এভরই কেবল বিচার হয়েছে। তার আপিলও প্রত্যাখ্যান করে তাকে আজীবন কারাবাসের দণ্ড দিয়েছে আদালত।