পূর্ব লন্ডনের বেলমার্শ কারাগারের নিরাপত্তা বড় কঠোর, তার মধ্যেই চারজন অতিথি, দুইজন সাক্ষী এবং দুই নিরাপত্তারক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে সারলেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ এবং তার দীর্ঘদিনের বান্ধবী স্টেলা মরিস।
Published : 24 Mar 2022, 12:44 PM
বুধবার আলোচিত এই বিয়ের অনুষ্ঠানের বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করেছে রয়টার্স। সেসব ছবিতে কনের পাশাপাশি বরের বাবা, ভাই ও দুই ছেলেসহ অতিথিদের দেখা গেছে, নেই শুধু অ্যাসাঞ্জ। গোপনীয় সামরিক ও কূটনৈতিক নথি ফাঁসের ঘটনায় বিচার করার জন্য তাকে হাতে পেতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত বছরের নভেম্বরে অ্যাসাঞ্জ কারাগারে থাকা অবস্থায় বিয়ে করার অনুমতি পান। কারা কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া শর্তে বুধবার বিয়ের মূল অনুষ্ঠানে কেবল চারজন অতিথি ও দুজন সাক্ষীকেই উপস্থিত থাকার সুযোগ দেওয়া হয়। অ্যাসাঞ্জ ও মরিসের ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা ছিলেন কারাফটকের বাইরে।
বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের শীর্ষ ফ্যাশন ডিজাইনার ভিভিয়েন ওয়েস্টউড কনে মরিস এবং বর অ্যাসাঞ্জের বিয়ের পোশাকের নকশা করেছেন। অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ ঠেকাতে ওয়েস্টউডও সোচ্চার ছিলেন।
বিয়েতে অতিথি হয়ে আসা বন্ধু, স্বজন আর অনুরাগীদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড। একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল- ‘অভিনন্দন মিস্টার অ্যান্ড মিসেস অ্যাসাঞ্জ। ঈশ্বর তোমাদের মঙ্গল করুক’।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় সবাইকে নিয়ে কেক কাটেন মরিস। সেই কেকের উপরে ছিল বর-কনের প্রতীকী মূর্তি। কেকের টেবিলে বাহারি ফুলের পাশেই ছিল অ্যাসাঞ্জের ছবি, যারা মুখ আটকানো মার্কিন পতাকায়। আর ফুলের বাক্সের গায়ে অ্যাসাঞ্জের ছবি সম্বলিত ছোট ছোট পোস্টারে লেখা ‘অ্যাসাঞ্জকে প্রত্যর্পণ করবেন না’।
কারাগারের বাইরে বিয়ের অনুষ্ঠানের আসা অতিথিদের সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন কনে স্টেলা মরিস। তিনি বলেন, “আমি খুব খুশি এবং সেই সঙ্গে দুঃখে ভারাক্রান্ত। জুলিয়ানকে আমি সমস্ত হৃদয় দিয়ে ভালবাসি। ও যদি এখন আমার পাশে থাকত…।”
বিয়ের একটি ছবিতে স্টেলা মরিসের সঙ্গে দেখা যায় তাদের দুই সন্তানকে। পাশেই দুটি সোফা, ছোট্ট টেবিলে রাখা দুটি ছবি। ওয়ালম্যাটে সোনালি ফ্রেমে সাদা কাপড়ের মাঝে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গোপন নথির প্রতীকী ছবি, যেসব নথি ফাঁসের কারণে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জ।
ওই সব নথির মধ্যে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে আফগান যুদ্ধসম্পর্কিত ৭৬ হাজার এবং ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কিত আরো ৪০ হাজার নথি ছিল, যা যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও পেন্টাগনকে চরম বেকায়দায় ফেলে দেয়।
সুইডেনে যৌন নিপীড়নের এক মামলায় ২০১১ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর লন্ডনের আদালত থেকে জামিন পোয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জ। কিন্তু সুইডেনের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে, এই আশঙ্কায় ২০১২ সালে তিনি পালিয়ে লন্ডনে একুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন। সুইডেনের সেই মামলা পরে খারিজ হয়ে যায়।
আইনজীবী স্টেলা মরিসের সঙ্গে তার পরিচয় হয় ২০১১ সালে, যখন তিনি প্রথমবার কারাগারে গেলেন। ২০১৯ সালে জামিনের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে জেলে যাওয়ার পর তাদের প্রেমের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। তার আগে অ্যাসাঞ্জ লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকার সময়ই তাদের দুই ছেলের জন্ম হয়।