মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং জাতিগত বিদ্রোহীদের মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের মুখে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের ৬শ’রও বেশি জনকে ফেরত পাঠিয়েছে থাইল্যান্ড।
Published : 19 Dec 2021, 11:07 PM
রোববার থাইল্যান্ডের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শরণার্থীদেরকে ফেরত পাঠানোর এই খবর জানিয়েছেন। এদিনও মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষ চলছে বলে জানান তিনি।
সীমান্তের থাই অংশে রয়টার্সের এক সাংবাদিক রোববার বিকালেও অবিরাম গুলির আওয়াজ শুনতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
এই লড়াই পরিস্থিতির মধ্যেই রোববার সকালের দিকে রয়টার্সের সাংবাদিকরা থাইল্যান্ডের স্থানীয় একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া কয়েক ডজন শরণার্থীকে সীমান্তের ওপারে ফেরত পাঠানোর জন্য তিনটি ট্রাকে তুলতে দেখেছেন।
ট্রাক সীমান্ত ছেড়ে যাওয়ার আগে এক শরণার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমি মায়ে তাও তালে থেকে পালিয়ে এসেছি। সেখানে আমার আশপাশের এলাকায় গোলা পড়েছিল। আমি পানি পার হয়ে এই (থাইল্যান্ড) দিকে হেঁটে এসেছি।”
থাইল্যান্ডের তাক প্রদেশের গভর্নর সোমচাই বিকালের দিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, “লড়াইয়ে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় অনেক শরণার্থী স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে চাইছেন।”
সোমচাই বলেন, এ পর্যন্ত ৬২৩ জন শরণার্থীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এখনও ২, ০৯৪ জন শরণার্থী থাইল্যান্ডে অবস্থান করছে। তারা মিয়ানমারে ফিরতে চাইলে তাদেরকেও ফেরত পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এশিয়া অঞ্চলের উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন থাইল্যান্ডকে তাড়াহুড়ো করে শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরত না পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যখন মাঠে নামে, তখন তারা যে ইচ্ছাকৃতভাবেই প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগ করে সাধারণ মানুষকে হামলার নিশানা করে সেটি সবারই জানা। তাই এই শরণার্থীরা যে আসলেই তাদের জীবন নিয়ে পালিয়ে এসেছে তা বললে অত্যুক্তি হবে না।”
রোববার এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের পক্ষ থেকে করা ফোনকলের কোনও সাড়া দেননি মিয়ানমারের সামরিক জান্তার মুখপাত্র। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
থাইল্যান্ড-ভিত্তিক মিয়ানমারের শরণার্থী অধিকার সংগঠন ‘দ্য এইড অ্যালায়েন্স কমিটি’ বলেছে, থাইল্যান্ডে প্রবেশের অপেক্ষায় মিয়ানমার সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১,০০০ বাস্তুচ্যুত মানুষ অবস্থান করছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকারকে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক বাহিনী।
এরপর থেকেই দেশটিতে সামরিক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলে আছে। গ্রামাঞ্চলের জঙ্গলে জঙ্গলে জান্তার বিরুদ্ধে লড়তে সংগঠিত হচ্ছে সাধারন মানুষ ও কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী। মাঝে মধ্যেই তাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ হচ্ছে।
মিয়ানমারের সবচেয়ে পুরোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের (কেএনইউ) সঙ্গে সম্প্রতি সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। এ সহিংসতা থেকে বাঁচতেই কারেন রাজ্য থেকে পালিয়ে থাইল্যান্ড সীমান্তে আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ।
অনেকে মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডের মাঝের ছোট ছোট নদী পাড়ি দিচ্ছেন নৌকায় করে। আবার কেউ কেউ শিশুকে হাতে উঁচু করে তুলে ধরে বুক সমান পানি পেরিয়ে থাইল্যান্ডের দিকে ছুটছেন।