কিউবায় চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
Published : 14 Jul 2021, 11:10 AM
দ্বীপ রাষ্ট্রটির রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, সোমবার রাজধানী হাভানার শহরতলীতে দিউবিস লওরেন্থিয় তেহেরা (৩৬) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
কিউবায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রথম একজনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করা হল বলে জানিয়েছে বিবিসি।
কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সরকারি স্থাপনায় হামলা চালানো একটি দলের অংশ ছিল সে। অপরদিকে প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, দলটির সদস্যদের লক্ষ্য করে নিরাপত্তাবাহিনীর চালানো গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে।
তেহেরার মৃত্যু কীভাবে হয়েছে সরকারিভাবে এখনও তার কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। এক বিবৃতিতে কিউবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তেহেরার মৃত্যুতে শুধু শোক জানিয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার হাভানার লা গিনেরা এলাকার ‘বিশৃঙ্খলার’ সঙ্গে তেহেরা যুক্ত ছিলেন, সেখানে একটি দল সরকারি স্থাপনার ওপর হামলা চালিয়েছিল।
এ ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে।
কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, লা গিনেরা এলাকায় স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদে অংশ নেওয়া লোকজনের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীই চড়াও হয়েছিল।
এলাকাটির বাসিন্দা ওয়ালদো এরেরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, “কর্মকর্তারা তাদের অস্ত্র তুলে বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি করা শুরু করে।”
কিউবাজুড়ে নজিরবিহীন এ সরকারবিরোধী বিক্ষোভ রোববার থেকে শুরু হয়। হাভানার দক্ষিণপশ্চিমে সান আন্তোনিও দে লোস বানোস শহরে সরকারবিরোধী একটি বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর দ্রুতই তা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের সঙ্কট, নাগরিক স্বাধীনতার সঙ্কোচন এবং মহামারী মোকাবেলায় কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ লোকজন প্রতিবাদে নামে। তারা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় টিকার দাবি জানিয়ে শ্লোগান দেয়।
কিন্তু কিউবায় এ ধরনের অনুমতিবিহীন জনসমাবেশ বেআইনি। বিক্ষোভকারীদের ‘প্রতিবিপ্লবী’ বলে অভিহিত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মিগেল দিয়াজ কানেল।
দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান কানেল এই অস্থিরতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন। এ প্রতিবাদের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন ও প্ররোচনা কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
দেশের অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করে রাখা ও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও কঠোর করা বাণিজ্যিক অবরোধকে দায়ী করেছেন তিনি।
সাবেক মিত্র সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে কিউবা, এর মধ্যেই সেখানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের রেকর্ড বৃদ্ধি ঘটেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করা পোস্টগুলোতে দেখা যায়, ক্ষুব্ধ লোকজন পুলিশের গাড়ি উল্টে ফেলেছে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত দোকানগুলোতে লুটপাট চালাচ্ছে।
মঙ্গলবার রাস্তায় বহু পুলিশ মোতায়েন ছিল। এ দিন নিরাপত্তা বাহিনী শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুরো কিউবাজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। দেশটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মোবাইল ইন্টারনেট চালু করলেও তা নিজেদের নিয়ন্ত্রণেই রাখে সরকার।