মালিক যদি কোভিডে আক্রান্ত হন, তার পোষা কুকুর ও বিড়ালের মধ্যেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ‘খুব স্বাভাবিক ঘটনা’ বলে উঠে এসেছে এক গবেষণায়।
Published : 02 Jul 2021, 10:04 AM
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এ গবেষণার জন্য ১৯৬টি বাসাবাড়ি থেকে ৩১০টি পোষা প্রাণীকে পরীক্ষা করা হয়, যেসব বাড়ির বাসিন্দাদের কারও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
এর মধ্যে পিসিআর পরীক্ষায় ছয়টি বিড়াল এবং সাতটি কুকুরের করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হয়। আর ৫৪টি প্রাণীর দেহে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়। অর্থাৎ কোনো না কোনো সময়ে তারাও সংক্রমিত হয়েছিল।
গবেষণাপত্রের লেখক উট্রেকট ইউনিভার্সিটির ড. এলস ব্রোয়েনস বলেন, “আপনি যদি কোভিডে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার নিজের পোষা কুকুর-বিড়ালের সংস্পর্শও এড়াতে হবে, যেমনটি আপনি করে থাকেন অন্য মানুষদের ক্ষেত্রে।
“মূল উদ্বেগের কারণ পোষা প্রাণীর স্বাস্থ্য নয়। এরা ভাইরাসের ধারক হয়ে হয়ে উঠতে পারে এবং মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাহক হয়ে ওঠার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।”
গবেষকরা বলছেন, পোষা প্রাণী থেকে মানুষের দেহে করোনাভাইরাস ছড়ানোর কোনো প্রমাণ এখনও তারা পাননি। তবে সেটা চিহ্নিত করাও কঠিন, কারণ ভাইরাসটি এখনও সহজেই মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছে।
কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত বেশিরভাগ পোষা প্রাণীর কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি, উপসর্গ থাকলেও তা খুব সামান্য।
উট্রেকট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা নেদারল্যান্ডসের ২০০ বাড়িতে ভ্রাম্যমাণ পশু চিকিৎসালয় পাঠিয়েছিলেন যেসব বাড়িতে গত ২০০ দিনে কেউ না কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
সেসব বাসাবাড়ি থেকে তাদের পোষা বিড়াল ও কুকুরের নমুনা সংগ্রহ করা হয় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি এবং অ্যান্টিবডি পরীক্ষার জন্য।
ইউরোপিয়ান কংগ্রেস অব ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে সেই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
দেখা গেছে, যেসব পোষা প্রাণীর নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তাদের ৪ দশমিক ২ শতাংষের শরীরে তখনও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছিল। আর ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ কুকুর-বিড়ালের শরীরে পাওয়া গেছে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি।
পরে আবার পরীক্ষা করে দেখা গেছে, প্রথমবার যেসব কুকুর-বিড়ালের আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পজিটিভ এসেছিল, সংক্রমণ সেরে গিয়ে তাদের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।
ভেটেরিনারি মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ড. ব্রোয়েনস বলেন, “আমরা বলতে পারছি না যে নিজেদের পোষা প্রাণী থেকে মালিকের দেহে ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি একেবারে নেই। এ মুহূর্তে এ ভাইরাস এখনও মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে। ফলে প্রাণী থেকে মানুষে ছড়ালেও আমরা হয়ত শনাক্ত করতে পারছি না।”
রাশিয়ায় পশু চিকিৎসকরা এরইমধ্যে কিছু প্রাণীকে কোভিড প্রতিরোধী টিকা দিতে শুরু করেছেন।
তবে ড. ব্রোয়েনস বলেন, “আমি এখনও এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দেখিনি। এই মহামারী ছড়াতে পোষা প্রাণীরা ভূমিকা রাখছে- এমন কোনো ধারণা এখনও পাওয়া যায়নি।”
কানাডার অন্টারিওর ইউনিভার্সিটি অব গ্যালপে আলাদা আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব বিড়াল তাদের মালিকের বিছানায় ঘুমায়, সেগুলোর করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে।
ওই গবেষণায় ৭৭টি বাড়ির ৪৮টি বিড়াল ও ৫৪টি কুকুরের কোভিড অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয় এবং তাদের মালিকদের কাছে জানতে চাওয়া হয় প্রাণীগুলোকে তারা কীভাবে রাখেন।
দেখা যায় ৬৭ শতাংশ পোষা বিড়াল এবং ৪৩ শতাংশ কুকুরের শরীরে অ্যান্টিবডি আছে। অর্থাৎ তারা কোনো না কোনো সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল।
কিন্তু ওই অঞ্চলের প্রাণী-আশ্রয়কেন্দ্রে পরীক্ষা চালিয়ে দেখা যায়, ৯ শতাংশ কুকুর ও বিড়াল এবং বেওয়ারিশ ৩ শতাংশ বিড়ালের শরীরে অ্যান্টিবডি রয়েছে। অর্থাৎ, বাসাবাড়িতে পোষা প্রাণীর ক্ষেত্রে সংক্রমণের প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পোষা বিড়াল-কুকুরের এক-চতুর্থাংশের মধ্যে ক্ষুধামন্দা বা শ্বাসকষ্টের মত উপসর্গ দেখা গেছে। বেশিরভাগই সামান্য উপসর্গ হলেও তিনটি প্রাণী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে।
গবেষণাপত্রের লেখক বলেন, বিড়ালের জৈবিক গঠনের কারণে সম্ভবত সেগুলোর কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাছাড়া পোষা কুকুরের তুলনায় পোষা বিড়াল তাদের মালিকদের সঙ্গে বেশি ঘুমায়, যা সেগুলোকে বেশি করে সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলে।
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জেমস উড বলেন, দুটি গবেষণাপত্র এবং অন্যান্য তথ্যপ্রমাণ থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কুকুর ও বিড়াল তাদের মালিকের মাধ্যমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
“ডাচ গবেষণাটি বিস্তৃত পরিসরে হয়েছে এবং দেখা গেছে প্রায় ২০ শতাংশ পোষা প্রাণী সম্ভবত আক্রান্ত এবং তারা শেষ পর্যন্ত সংক্রমণ থেকে সেরে উঠেছে যেভাবে বেশিরভাগ মানুষও সেরে উঠছে।
“বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংক্রমণ ছিল উপসর্গহীন। এটাও ধারাণা করা যাচ্ছে যে ভাইরাসটি স্বাভাবিক অবস্থায় কুকুর ও বিড়াল থেকে পরস্পরের দেহে বা তাদের মালিকের দেহে ছড়ায় না।”