ব্যর্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার পর এবার টাইফুন-বিধ্বস্ত এলাকাগুলো পুনর্গঠন করতে আগামী পাঁচ বছরে অন্তত ২৫ হাজার বাড়ি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন।
Published : 14 Oct 2020, 07:55 PM
ক্রমবর্ধমান সংকটের মুখেও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের ৮০ দিনের কর্মসূচি শুরুর মধ্যে কিম এই প্রতিশ্রুতি দিলেন। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বুধবার একথা জানিয়েছে।
উত্তর কোরিয়া কঠিন একটি বছর পার করছে। পরপর কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় দেশটির বহু শহর ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। তার ওপর আন্তর্জাতিক নানা নিষেধাজ্ঞা তো আছেই। উপরন্তু আছে পুরো বিশ্বকে পর্যদুস্ত করে তোলা করোনাভাইরাস মহামারী।
যদিও উত্তর কোরিয়া সরকারের দাবি, সেখানে কেউ এখন পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়নি। কিন্তু এ মহামারীর কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে তার ধাক্কা উত্তর কোরিয়াতেও লেগেছে।
নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নে ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং-উন সম্প্রতি অশ্রুসিক্ত নয়নে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চান।
গত শনিবার ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া ভাষণের এক পর্যায়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন, যা অত্যন্ত বিরল ঘটনা। কিমের কান্নার এ দৃশ্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ওই অনুষ্ঠান শেষেই কিম উত্তর কোরিয়ায় সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শনে যান। ওইসব এলাকায় কয়েক দশকের পুরাতন ঘরবাড়ি দেখে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। ঘূর্ণিঝড়ে সেগুলোর বেশিরভাগই ধ্বংস হয়ে গেছে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ জানায়, কিম সেনাবাহিনীকে ওই এলাকাগুলোতে আরও দ্রুত এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাড়ি ঘর নির্মাণের উচ্চাভিলাষী প্ররিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
নানা কারণে দেশের অর্থনীতি প্রতিশ্রুত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। তাই দেশের সব শ্রেণীর জনগণকে ‘৮০ দিনের’ অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কর্মসূচি শুরুর আহ্বান জানান কিম।
আগামী জানুয়ারিতে কিমের দলের জাতীয় সম্মেলন। ওই সম্মেলনে পরবর্তী পাঁচ বছরের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করা হবে। তার আগেই প্রতিশ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নে পৌঁছাতে চান কিম।
বুধবার কেসিএনএ-র প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘জাতীয় অর্থনীতির সব বিভাগ এবং সব ক্ষেত্রের কর্মীরা সর্বজনীন এ ক্যাম্পেইনে যোগ দিচ্ছেন।”
সর্বজনীন এ কর্মযজ্ঞে নানা জিনিসপত্র এবং যন্ত্রাংশের উৎপাদন বৃদ্ধি, বেশি করে মৌসুমি ফসলের চাষ, ঘূর্ণিঝড় দুর্গত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং যে কোনও ধরনের ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কেসিএনএ।
যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইসব কর্মসূচিতে আসলে সাধারণ নাগরিকদের ‘স্বেচ্ছায়’ বাড়তি শ্রম দিতে হয়।
গৃহ নির্মাণের বিষয়ে কেসিএনএ জানায়, রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের উত্তরপূর্বের প্রদেশ সাউথ হ্যামগিয়ংয়ে ২,৩০০ গৃহ নির্মাণের কাজ অর্ধেকের বেশি শেষ হয়েছে। সেনাবাহিনী দ্রুত বাকি কাজ শেষ করে ফেলবে বলেও আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
কিম ‘নির্মাণ পরিকল্পনায়’ বিপ্লব ঘটনোর ডাক দিয়েছেন। তিনি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশে অন্তত ২৫ হাজার বাড়ি নির্মাণ করতে চান। জানুয়ারিতে জাতীয় সম্মেলনে এই নির্মাণ পরিকল্পনা ঘোষণা করা হবে।