লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিস্ফোরক দ্রব্যের গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩৫ জনে পৌঁছেছে এবং ৫ হাজারের বেশি মানুষ, বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
Published : 05 Aug 2020, 10:23 AM
মঙ্গলবার বিকালে বৈরুতের বন্দর এলাকার ওই বিস্ফোরণে পুরো বৈরুত শহর ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে। বুধবার উদ্ধারকারীরা আরও বেশ কিছু দেহ ধ্বংসস্তুপ থেকে টেনে বের করেছে।
নিখোঁজ আরও মানুষের সন্ধান চলছে। শতাধিক মানুষ এখনো নিখোঁজ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসান।বিস্ফোরণস্থলে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চলতে থাকায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক সঙ্কট আর করোনাভাইরাস মহামারীর সঙ্গে লড়তে থাকা বৈরুতে বহু বছরের মধ্যে বিস্ফোরণে হতাহতের সবচেয়ে বড় ঘটনা এটি।
লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরি হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতিসংঘ ট্রাইব্যুনালের রায়ের তিন দিন আগে ওই বিস্ফোরণের কারণ শুরুতে স্পষ্ট ছিল না। তবে পরে দেশটির কর্মকর্তারা বিস্ফোরকের গুদামে বিস্ফোরণ ঘটার কথা জানান। এ ঘটনার জন্য কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকে দায়ী করা হচ্ছে প্রাথমিক তদন্তে।
প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন এক টুইটে বলেছেন, কোনো ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বন্দরে মজুদ করে রাখা হয়েছিল, যা কোনোভাবে ‘গ্রহণযোগ্য নয়’।
ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, বৈরুতের বন্দর এলাকা থেকে বড়ু গম্বুজ আকারে ধোঁয়া উড়ছে, এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিকট বিস্ফোরণে গাড়ি, ভবন উড়ে যেতে দেখা যায়।
বিস্ফোরণে বাড়ি-ঘর এমন কেঁপে ওঠেছিল যে স্থানীয়রা ভাবছিলেন ভূমিকম্প হচ্ছে। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে মানুষের চিৎকার ও ছুটোছুটি করতে দেখা যায়। বাড়িঘরের জানালার কাচ ও বেলকনি ভেঙেও অনেকে আহত হন।
Horrifying images out of Beirut. That beautiful city has suffered enough.. Pray for Beirut. #Beirut #beirutexplosion pic.twitter.com/uxshnXPTIX
— Zainab Fattah (@ZainabFattah) August 4, 2020
বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার থেকে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব। তিনি এ ঘটনাকে বিপর্যয় হিসেবে বর্ণনা করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।
তিনি এই দুর্যোগ ও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইরান, ইসরায়েল ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে লেবাননকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও বলেছে, তারা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে।
মন্ত্রিসভার জরুরি একটি অধিবেশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রেসিডেন্ট আউন বলেছেন, “বৈরুত গতরাতে যে ভয়াবহতার শিকার হয়েছে তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। এটি এখন দুর্যোগ কবলিত নগরীতে পরিণত হয়েছে।” তিনি বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে কী ঘটেছে তা শিগগিরই জানাতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
ঘটনাটির পার্লামেন্টারি তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক সরকারি কর্মকর্তা বিস্ফোরণের ঘটনার জন্য বিস্ফোরক দ্রব্যটি সরানোর কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া এবং অবহেলার অভিযোগ করেছেন।
যে সব বন্দর কর্মকর্তা ২০১৪ সাল থেকে ওই বিস্ফোরক দ্রব্য মজুদ রাখা এবং পাহারা দেওয়ার কাজে ছিলেন তাদেরকে গৃহবন্দি করার নির্দেশ মন্ত্রিসভা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা।
লেবাননের সাধারণ মানুষ বিস্ফোরণের ঘটনার জন্য রাজনীতিবিদদের দায়ী করেছে। যারা ধশকের পর দশক ধরে দেশে দুর্নীতি এবং অপশাসনকে আমলে দেয়নি। এক লেবানানীর কথায়, “বিস্ফোরণের এই ঘটনা লেবাননের পতন সুনিশ্চিত করেছে। আমি আদতেই শাসক শ্রেণীকে দায়ী করছি।”