লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ এক বিস্ফোরণে অন্তত অর্ধশত নিহত এবং আড়াই হাজার মানুষ আহত হয়েছে।
Published : 04 Aug 2020, 11:16 PM
মঙ্গলবার বিকালে বন্দর এলাকার এই বিস্ফোরণে পুরো বৈরুত শহর ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠেছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে।
লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরি হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতিসংঘ ট্রাইব্যুনালের রায়ের তিন দিন আগে সংঘটিত এই বিস্ফোরণের কারণ পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।
তবে লেবাননের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে আল জাজিরা জানিয়েছে, বন্দরের রাসায়নিকের গুদাম থেকে ওই বিস্ফোরণ ঘটেছে।
ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে কিছু দিন ধরে উত্তেজনা চললেও এ বিস্ফোরণের সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা নাকচ করেছে তেল আবিব।
ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, বৈরুতের বন্দর এলাকা থেকে বড়ু গম্বুজ আকারে ধোঁয়া উড়ছে, এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিকট বিস্ফোরণে গাড়ি, ভবন উড়ে যেতে দেখা যায়।
Horrifying images out of Beirut. That beautiful city has suffered enough.. Pray for Beirut. #Beirut #beirutexplosion pic.twitter.com/uxshnXPTIX
— Zainab Fattah (@ZainabFattah) August 4, 2020
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণে বাড়ি-ঘর এমন কেঁপে ওঠেছিল যে স্থানীয়রা ভাবছিলেন ভূমিকম্প হচ্ছে।
ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে মানুষের চিৎকার ও ছুটোছুটি করতে দেখা যায়। বাড়িঘরের জানালার কাচ ও বেলকনি ভেঙেও অনেকে আহত হন।
নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও হাসপাতাল সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, বিস্ফোরণে নিহত অন্তত ২৫ জনের লাশ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসানকে উদ্ধৃত করে আল জাজিরা জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ৪০ এবং আহত হয়েছে আড়াই হাজার জন।
হাসপাতাল সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি নিহতের সংখ্যা ৫০ বলে জানিয়েছে।
লেবানন রেডক্রস জানিয়েছে, আহত বহু মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে চিকিৎসার জন্য।
আল জাজিরার সাংবাদিক তিমোর আজহারি বলেন, “বৈরুত হাসপাতালের করিডোরও ভরে গেছে আহত ও রক্তাক্ত মানুষে।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসান বলেন, বিস্ফোরণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে অনেক মানুষকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়ে থাকতেও দেখা গেছে।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব বুধবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন।
তিনি এই বিস্ফোরণকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইরান, ইসরায়েল এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে লেবাননকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও বলেছে, তারা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে।
যে স্থানটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানে বন্দরের গুদাম রয়েছে।
লেবননের ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি (এনএনএ) বন্দরের গুদামে প্রথম আগুন লাগার কথা জানায়। এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, গুদামে রাসায়নিকের মজুদও রয়েছে।
লেবাননের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আল জাজিরাকে বলেছেন, বন্দরে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ করা ছিল। তা থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে।
লেবাননের সম্প্রচার মাধ্যম ‘মায়াদিন’ দেশটির কাস্টমস পরিচালকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলছে, কয়েক টন নাইট্রেট বিস্ফোরিত হয়েছে।
আগুন ও বিস্ফোরণটি দুর্ঘটনাবশত ঘটে থাকতে পারে, বলা হচ্ছে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে।
সেখানে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মজুদ কেন ছিল, কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে তার জবাবদিহি চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
লেবাননের প্রেসিডন্ট মিচেল ওন দেশের সুপ্রিম ডিফেন্স কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।
প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব বলেছেন, বিস্ফোরণের জন্য যারাই দায়ী হোক, তাদের চরম মাশুল দিতে হবে।
রাসায়নির গুদাম থেকে এই বিস্ফোরণের ধারণা করলেও তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এই বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে চাননি প্রধানমন্ত্রী।
WARNING: GRAPHIC CONTENT - A large explosion shook the Lebanese capital Beirut and a giant column of smoke was seen rising over the city https://t.co/xH1q1gtlco pic.twitter.com/7wEKpCyjEg
— Reuters (@Reuters) August 4, 2020