কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা আগেই বাতিল হয়েছে। নতুন বাসস্থান আইনে কাশ্মীরের বাইরের লোকজনও সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ পাবেন। এ অবস্থায় নিজ ভূমিতে পরবাসী হওয়া এবং পরিচয় হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন কাশ্মীরীরা।
Published : 28 Jul 2020, 11:57 PM
দেশভাগের সময় কাশ্মীরের যে অংশ ভারতে পড়ে সেখানে ঘটে চলা অনেক পরিবর্তন এবং বড় বড় ঘটনা নিজ চোখে দেখেছেন ৭৫ বছরের কবি ও ইতিহাসবিদ জারিফ আহমেদ জারিফ।
যিনি এখন কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ সংস্কৃতি, ভূমির সুরক্ষা এবং সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাগ্য নিয়ে দারুণ চিন্তিত। কারণ, গত মে মাসে ভারত সরকার কাশ্মীরে ওই স্থায়ী বাসস্থান আইন পাস করেছে।
শ্রীনগরের বাসিন্দা জারিফ টেলিফোনে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমাদের কাশ্মীর একটি সাজানো বাগান। নতুন আইন লুটেরাদের জন্য সেই বাগানে প্রবেশের দ্বার খুলে দিয়েছে। তারা সব ধ্বংস করে ফেলবে।
‘‘সেই দিন আর খুব বেশি দূরে নয় যখন আমরা আমাদের ভূমি ও জঙ্গলের অধিকার থেকে বঞ্চিত হব। আমাদের চাকরির সুযোগ ও অর্থনৈতিক উৎস কেড়ে নেওয়া হবে। নিজেদের ভূমিতেই কাশ্মীরিরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হবে।”
ভারতের সংবিধানে বিশেষ মর্যাদার কারণে আগে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে বাইরের মানুষ জমি কিনতে পারতেন না। কিন্তু ২০১৯ সালের অগাস্টে ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে রাজ্যটিকে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ নামে কেন্দ্রশাসিত দুইটি আলাদা অঞ্চলে ভাগ করে।
এর ফলে কাশ্মীরি নন এমন ভারতীয়দের জন্য সেখানে জমি কেনা, চাকরি এবং উচ্চশিক্ষা নেওয়ার দ্বার খুলে যায়। এরই পথ ধরে কাশ্মীরে নতুন করে নির্ধারিত হওয়া বাসস্থান আইনে সেখানকার বাইরের মানুষদের জন্য স্থায়ী অধিবাসী হওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় তারাই বাসস্থান, চাকরি এবং শিক্ষায় অগ্রাধিকার পাবে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কায় আছে।
শ্রীনগরের ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হারুন রেশি বলেন, ‘‘আমাদের স্বতন্ত্র সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়...এমনকি আমাদের ভাষা এবং ঐতিহ্য, সব কিছুই আজ বিপদগ্রস্ত।”
যদিও ভারতীয় কর্মকর্তাদের দাবি, ওই অঞ্চলে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতেই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর গিরিশ চন্দ্র মুরমি কয়েক দিন আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘‘আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য এ অঞ্চলের উন্নয়ন এবং তরুণদের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা। আমাদের লক্ষ্য জম্মু ও কাশ্মীরকে একটি সমৃদ্ধশালী অঞ্চলে পরিণত করা।”
কেন্দ্রের জারি করা নতুন বাসস্থান বা ‘ডোমিসাইল’ আইন অনুযায়ী, কোনও ভারতীয় যিনি অন্তত ১৫ বছর ধরে জম্মু ও কাশ্মীরে বসবাস করছেন অথবা সাত বছর ধরে লেখাপড়া করছেন এবং দশম বা দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে পারবেন।
স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন করার ১৫ দিনের মধ্যে আবেদন গৃহিত বা বাতিল যাই হোক তা জানানোর জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে ভারত সরকার। যদি আবেদন যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ায় কোনো কর্মকর্তা দেরি করেন তবে তাকে ৫০ হাজার রুপি জরিমানা করা হবে এবং বেতন থেকে তা কেটে নেওয়া হবে।
জারিফ বলেন, অনেক কাশ্মীরি রীতিমত আতঙ্কে আছেন। কারণ, বাইরে থেকে আসা ধনীরা স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ নিয়ে সহজেই জমি ও সম্পদ কিনতে পারবেন। অন্যদিকে, নানা কারণে আর্থিকভাবে দুর্বল কাশ্মীরীরা তাদের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারবেন না। তাদের কাছ থেকে শেষ সম্বল স্থায়ী সম্পদটুকুও কেড়ে নেওয়া হবে।”
বাইরের লোকেদের সম্পত্তি ক্রয় করা ঠেকাতে স্থানীয়রা সামাজিকভাবে ছোট ছোট কিছু দল গঠন করে বাসিন্দাদের বাইরের মানুষের কাছে জমি বিক্রি না করার বিষয়ে সতর্ক করছেন।