তিনটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ইনজেকশনের সমন্বিত চিকিৎসায় কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীরা তুলনামূলক দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে বলে এক গবেষণায় দেখা গেছে।
Published : 09 May 2020, 02:56 PM
রোগীদের মধ্যে যাদের উপসর্গ মৃদু থেকে মাঝারি, তাদের উপর এ ওষুধগুলো প্রয়োগ করে ভালো ফল মিললেও চিকিৎসার এ পদ্ধতি সত্যিই কার্যকর কীনা তা নিশ্চিত হতে আরও পরীক্ষা প্রয়োজন, বলেছেন হংকংয়ের একদল চিকিৎসক।
তাদের এ ‘ট্রিপল ড্রাগ থেরাপি’ কার্যকর প্রমাণিত হলে এটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় নতুন দিশা দেখাবে, বলছে সিএনএন।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগীদের উপর অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভিরের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে।
ইরোলা চিকিৎসায় ব্যবহৃত রেমডেসিভিরেও নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা খানিকটা দ্রুত সেরে উঠছেন বলে বেশকিছু গবেষণায় দেখা গেছে। বিশ্ব বাজারে ওষুধটির সরবরাহ এখনও কম বলে জানিয়েছে সিএনএন।
সে তুলনায় হংকংয়ের চিকিৎসকরা যে ওষুধগুলো নিয়ে কাজ করেছেন সেগুলো সহজলভ্য।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. কিয়ক-ইয়ুং উয়েন ও তার সহকর্মীরা নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের এইচআইভি চিকিৎসায় ব্যবহৃত রিটোনেভির ও আইওপেনেভিরের সঙ্গে সাধারণ অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রিবাভিরিন এবং বেটা ইন্টারফেরন নামে পরিচিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাবর্ধক ওষুধ ব্যবহার করেছেন।
এ পদ্ধতিতে মৃদু ও মাঝারি উপসর্গের রোগীরা নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ৭দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন তারা।
ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে জানানো হয়, ‘ট্রিপল ড্রাগ থেরাপি’ নিয়ে গবেষণায় উয়েন ও তার সহকর্মীরা রোগীদের দুটি ভাগ বিভক্ত করেছিলেন।
এদের মধ্যে এক ভাগকে দেওয়া হয়েছিল এইচআইভি চিকিৎসায় ব্যবহৃত আইওপিনেভির ও রিটোনেভির। আরেকভাগকে এ দুই ওষুধের সঙ্গে আরও দেওয়া হয় অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ রিবাভিরিন ও বেটা ইন্টারফেরনের ইনজেকশন।
দেখা গেছে, তিনটি ওষুধ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাবর্ধক নেওয়া রোগীরা গড়ে ৭দিনেই সুস্থ হয়ে গেছেন। অন্যদিকে কেবল আইওপিনাভির ও রিটোনেভির নেয়া রোগীদের শরীরে ১২ দিন পরও ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
‘ট্রিপল ড্রাগ থেরাপি’ নেয়া রোগীরা মাত্র চারদিনের মধ্যেই ‘ভালো বোধ করা শুরু করেন’, বলছেন চিকিৎসকরা।
“প্রাথমিক পরীক্ষায় এ ট্রিপল অ্যান্টিভাইরাল থেরাপিকে নিরাপদ মনে হয়েছে। এটি আইওপিনেভির ও রিটোনেভিরের তুলনায় মৃদু ও মাঝারি কোভিড-১৯ রোগীদের উপসর্গ দ্রুত দূর ও ভাইরাসের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে,” ল্যানসেটের নিবন্ধে লিখেছেন তারা।
তিন ওষুধের সমন্বিত প্রয়োগে রোগী দ্রুত সুস্থ হলেও এর সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে, বলেছেন তারা।
হংকংয়ের চিকিৎসকদের এ গবেষণা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় নতুন আশা দেখাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. পিটার চিন-হং।
“এই গবেষণা সত্যিই সঞ্জীবনী। কেননা, এতদিন কেবল রেমডেসিভিরই ছিল। এখন সেখানে আরও বিকল্প যুক্ত হচ্ছে “ বলেছেন তিনি।