শতাধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া নতুন নিউমোনিয়া সদৃশ করোনাভাইরাসটির বিস্তার চীন আটকাতে সক্ষম হবে এমন আশাবাদ জানিয়ে সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গ্যাব্রেইয়েসুস।
Published : 28 Jan 2020, 03:54 PM
উদ্বেগ থাকলেও চীন থেকে এখনি বিদেশি নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন, চীনা গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে নতুন এ করোনাভাইরাস নিয়ে পৃথিবীজুড়ে তুমুল উৎকণ্ঠার মধ্যেই চীনা কর্তৃপক্ষ আরও আরও মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে; যুক্তরাষ্ট্র তার দেশের নাগরিকদের চীন ভ্রমণে সতর্ক করেছে,বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারেও দেখা দিয়েছে অস্থিরতা।
সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা এবং কম্বোডিয়াসহ ডজনখানেকের বেশি দেশে নিউমোনিয়া সদৃশ এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান মিললেও চীনের বাইরে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই উহানের বাসিন্দা, গত মাসে হুবেই প্রদেশের এ রাজধানী থেকেই ভাইরাসটির উদ্ভব হয়। উহানের বাইরে এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ে বেইজিংয়ে চীনের স্টেট কাউন্সিলর ওয়াং ই-র সঙ্গে বৈঠক করেছেন ডব্লিউএইচও’র প্রধান গ্যাব্রেইয়েসুস। ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে চীনের সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বলেও প্রতিবেদনে জানিয়েছে চীনা বার্তা সংস্থা জিনহুয়া।
তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে গ্যাব্রেইয়েসুসের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, তাদের শীর্ষ কর্মকর্তার উদ্দেশ্য হচ্ছে ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকানোর লক্ষ্যে চীনের সঙ্গে অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করা।
সম্প্রতি চীন থেকে বিভিন্ন দেশে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত মানুষের খোঁজ মিললেও তাদের মধ্যে কেবল একজনের দেহেই ভাইরাসটি অন্য মানবদেহ থেকে সংক্রমিত হয়েছিল- এমনটা নিশ্চিত হওয়ার কথা জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।
“এখন পর্যন্ত চীনের বাইরে খুব বেশি মানুষের মধ্যে মানবদেহ থেকে মানবদেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ দেখা যায়নি বলে আমরা আনন্দিত; ভাইরাসটির বিস্তৃতি সার্বক্ষণিকভাবে আমাদের নজরদারিতে আছে,” টুইটারে বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
নতুন এ ভাইরাসের জীবাণুকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নভেল করোনাভাইরাস ২০১৯-সিওভি নাম দিয়েছে। গত সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারা নতুন এ করোনাভাইরাসটি চীনে ‘জরুরি অবস্থা’ সৃষ্টি করেছে বলে জানালেও এখনি বিশ্বের উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলে মন্তব্য করেছে।
নিউমোনিয়াসদৃশ এ ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে চলতি সপ্তাহে চীন উহানে সেনাবাহিনী মোতায়েনে বাধ্য হয়েছে। এক কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার শহরটির সঙ্গে সব ধরনের পরিবহন যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।
হুবেই প্রদেশে কয়েক হাজার লোককে আক্রান্ত করা ও কয়েক ডজন মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া নতুন, নিউমোনিয়া সদৃশ এ করোনাভাইরাসটির উৎপত্তি নিয়ে চীন এখন পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু বলেনি।
প্রাথমিকভাবে এটি উহানের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে ছড়িয়েছে, গত সপ্তাহে চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমকে দেশটির সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের পরিচালক গাও ফু এমন ইঙ্গিত মিলেছে বলে জানিয়েছিলেন।
ভাইরাস মোকাবেলায় চীন বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দসহ নানামাত্রিক চেষ্টা চালালেও সোমবার পর্যন্ত সাড়ে চার হাজারের বেশি মানুষ নভেল করোনাভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে; একদিন আগেও এ সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৮৩৫।
একদিনের ব্যবধানে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যাও ৮১ থেকে বেড়ে ১০৬ এ পৌঁছেছে, জানিয়েছে চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন।