প্রস্তাবিত একটি বিলের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষের প্রতিবাদে পুলিশের রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার একদিন পর হংকংয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ফের কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছেন।
Published : 13 Jun 2019, 02:17 PM
বিচারের জন্য লোকজনকে চীনের মূলভূখণ্ডে পাঠানোর সুযোগ রেখে হংকংয়ের আইন পরিষদের করা ওই বিলটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তারা।
বৃহস্পতিবার প্রতিবাদকারীদের বাড়তে থাকা ভিড়ে স্কুলশিক্ষার্থীদেরও দেখা গেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদকারীদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।
হংকংয়ের কেন্দ্রস্থলের বিভিন্ন রাস্তার মাথায় হেলমেট ও বর্মে সজ্জিত পুলিশ সদস্যদেরও দেখা যাচ্ছে; কাছাকাছি দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে আছে অনেকগুলো পুলিশ ভ্যান। সাদা পোশাকের পুলিশ বিভিন্ন যানবাহন ও যাত্রীদের কাগজপত্র খতিয়ে দেখছে।
“সরকারের সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আমরা। আমি তরুণ, তাই হংকংয়ের পক্ষে লড়তে এসেছি,” বলেন নাতালি ওং নামের এক প্রতিবাদকারী।
বহিঃসমর্পণের যে বিলটি নিয়ে সরকার ও বিরোধীরা মুখোমুখি তাতে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হংকংয়ের যে কোনো বাসিন্দাকে তাইওয়ান, ম্যাকাউ কিংবা চীনের মূলভূখণ্ডে পাঠানোর সুযোগ রাখা হয়েছে।
বুধবার বিলটি নিয়ে আইন পরিষদে দ্বিতীয় দফা বিতর্কের কথা থাকলেও প্রতিবাদকারীরা হংকংকে কার্যত অচল করে দেওয়ায় ওই বিতর্ক স্থগিত করা হয়।
ওই দিনের সংঘর্ষের পর বৃহস্পতিবার আইন পরিষদ বন্ধ রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে বেশকিছু সরকারি দপ্তরও বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
১৯৯৭ সালে ব্রিটিশদের থেকে চীনের কাছে হস্তান্তরের পর হংকংয়ের ইতিহাসে বুধবারের ওই সহিংসতাই সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
বুধবার রাত ১০টা পর্যন্ত পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে আহত ৭২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে; এদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা গুরুতর বলে বিবিসি জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোররাতেও কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীকে অ্যাডমিরাল্টি ডিস্ট্রিক্টে অবস্থিত আইন পরিষদের কাছে দেখা গেছে। অন্য কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী পিছু হটে অবস্থান নিয়েছিলেন সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্টে।
যান চলাচলের জন্য বিজনেস ডিস্ট্রিক্টের বেশিরভাগ সড়ক খুলে দেওয়া হলেও আইন পরিষদের কাছে সুপরিচিত শপিং মল ‘প্যাসিফিক প্লেস’ এখনও বন্ধ।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, ডিবিএস ও ব্যাংক অব চায়না ওই এলাকায় তাদের শাখাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।
হংকংয়ের বেইজিংপন্থি প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম বুধবারের সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অশ্রুসিক্ত চোখে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বুধবারের প্রতিবাদকে ‘সংঘবদ্ধ দাঙ্গা’ অ্যাখ্যায়িত করেছেন; হংকংকে চীনের কাছে ‘বিক্রি করে দিচ্ছেন’ বলে তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তাও প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।
বিতর্কিত এ বিলটি নিয়ে বিরোধীদের আশঙ্কার বিষয়টি স্বীকার করে নিলেও এটি স্থগিত কিংবা বাতিল করা হবে না বলেও জানিয়েছেন লাম।
বেইজিংপন্থি এ নেতা ও তার সমর্থকদের ভাষ্য, বর্তমান আইনে এমনসব ত্রুটি আছে, যা হংকংকে চীনের মূলভূখণ্ডের অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে।
বিলে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্তদের চীনের মূলভূখণ্ডে বহিঃসমর্পণের সুযোগ থাকলেও প্রতিটি মামলা ধরে ধরে হংকংয়ের আদালতই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে; এই বিধান মানবাধিকার লংঘনে ‘রক্ষাকবচ’ হিসেবে কাজ করবে বলেও মত তাদের।
বেইজিংপন্থিদের এ ভাষ্য মানতে নারাজ বিরোধীরা।
বিতর্কিত এ বিলটির বিরুদ্ধে রোববার থেকেই হংকংজুড়ে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, গণতন্ত্রপন্থি বিভিন্ন সংগঠনের ডাকে ওই বিক্ষোভে সেদিন ১০ লাখ মানুষ জড়ো হয়েছিল বলে দাবি আয়োজকদের।
২২ বছর আগে চীনের ভূখণ্ডভুক্ত হওয়ার পর রোববারই হংকং সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ দেখেছে বলেও ভাষ্য তাদের।