সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর সঙ্গে কথা বলার জন্য প্রস্তুত আছেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহ।
Published : 02 Dec 2017, 07:41 PM
কয়েক বছর ধরে তার অনুগত বাহিনীগুলো সৌদি জোটের সঙ্গে লড়াই করে আসলেও কয়েকটি শর্তে তিনি সৌদি জোটের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘পাতা ওল্টাতে’ প্রস্তুত হবেন বলে জানিয়েছেন, খবর বিবিসির।
শনিবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে সালেহ জানিয়েছেন, উত্তর ইয়েমেনের ওপর আরোপ করা অবরোধ তুলে নিলে ও হামলা বন্ধ করলেই কেবল ‘নতুন পাতা’ খুলতে প্রস্তুত হবেন তিনি।
টেলিভিশন ভাষণে সালেহ বলেন, “আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য ও অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য আমি প্রতিবেশী দেশগুলোর ভাইদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আর আমরা পৃষ্টা ওল্টাবো।”
তার দল জেনারেল পিপলস কংগ্রেসের সদস্যদের ওপর হুতিরা ‘বর্বর হামলা’ চালিয়েছে অভিযোগ করে তিনি এর নিন্দা জানান।
সৌদি জোট তার প্রস্তাবের প্রশংসা করেছে, কিন্তু গত সপ্তাহের আগ পর্যন্ত তার মিত্র থাকা হুতি যোদ্ধারা ‘ক্যু’ করার জন্য তাকে অভিযুক্ত করেছে।
সালেহর ভাষণের পর প্রতিক্রিয়ায় এক বিবৃতিতে সৌদি জোট বলেছে, “(আলী আব্দুল্লাহ সালেহর) জেনারেল পিপলস কংগ্রেস নেতৃত্ব দেওয়ার ও ইরানের অনুগত বেসামরিক বাহিনী থেকে ইয়েমেনকে মুক্ত করতে জনগণের ইচ্ছার পক্ষ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
অপরদিকে হুতিদের এক মুখপাত্র বলেছেন, “সালেহর ভাষণ আমাদের মিত্রতা ও অংশীদারিত্বের বিরুদ্ধে একটি ক্যু এবং যারা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দাবি করে এটি তাদের প্রতারণা প্রকাশ করে দিয়েছে।”
বুধবার রাজধানী সানায় সালেহ অনুগত বাহিনীগুলোর সঙ্গে হুতি যোদ্ধাদের সংঘাত শুরু হয়। হুতি বিদ্রোহীরা শহরটির প্রধান মসজিদ চত্বরে জোর করে প্রবেশ করেছে, সালেহ অনুগতরা এমন অভিযোগ তোলার পর উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়ে যায়।
শনিবারও সানার রাস্তায় দুপক্ষের মধ্যে লড়াই হয়েছে বলে খবর হয়েছে। শহরটির দক্ষিণাংশের উপশহরে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলি হচ্ছিল বলে জানা গেছে। ওই এলাকায় সালেহর আত্মীয়-স্বজনরা বসবাস করেন।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইয়েমেনের সরকারের বিরুদ্ধে ২০১৪ সাল থেকে সালেহর মিত্র হিসেবে লড়াই করছিল ইরানের সমর্থন পাওয়া হুতিরা। এই দুটি গোষ্ঠী প্রায় তিন বছর ধরে একত্রে ইয়েমেনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আব্দরাব্বুহ মনসুর হাদির সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে রাজধানী সানাসহ দেশটির গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ স্থান দখল করে নিয়েছিল।
ফলে দুপক্ষের এই সংঘাত ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, হাদিকে সমর্থন করা সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার পর থেকে এ পর্যন্ত ৮,৬৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ৪৯,৯৬০ জন আহত হয়েছেন।
জোট বাহিনীর হামলা ও অবরোধের কারণে ইয়েমেনের দুই কোটি ৭০ লাখ মানুষ নিদারুণ মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় খাদ্য নিরাপত্তা সঙ্কটের মধ্যে পড়া ইয়েমেনে কলেরার প্রাদুর্ভাবে এপ্রিল পর্যন্ত ২,২১১ জন মারা গেছেন বলে ধারণা পর্যবেক্ষক গোষ্ঠীগুলোর।