সিরিয়ার একটি বিমান ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা।
Published : 07 Apr 2017, 04:46 PM
শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ৭টায় ভূমধ্যসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ডেস্ট্রয়ার থেকে সিরিয়ার শায়রাত বিমানঘাঁটিতে ৫৯টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়।
কয়েক ঘণ্টা পর ফ্লোরিডার মার এ লগো অবকাশযাপন কেন্দ্রে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামলার কথা নিশ্চিত করেন।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব প্রদেশের খান শেইখৌনে গত মঙ্গলবার রাসায়নিক গ্যাস হামলা চালিয়ে ৭২ জনকে হত্যার জন্য বাশার আল আসাদ সরকারই দায়ী। আর এটা নিশ্চিত হওয়ার পরই সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর স্থাপনায় হামলার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার পরপরই ইসরায়েল, সৌদি আরব, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও পোল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপকে সমর্থন দিয়েছে।
অন্যদিকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের মিত্র হিসেবে পরিচিত রাশিয়া ও ইরান এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এক কর্মকর্তাসহ চার সিরীয় সেনা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস। তবে হোমসের গভর্নর জানিয়েছেন, ঘাঁটির নিকটবর্তী একটি গ্রামের বাসিন্দাসহ নিহতের সংখ্যা ৫।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই বিমান হামলাকে স্বাগত জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলা রাসায়নিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা।
সৌদি আরবও এ বিষয়ে তাদের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানিয়েছে। শুক্রবার এক বিবৃতিতে দেশটি বলেছে, সিরিয়ার সামরিক স্থাপনায় হামলার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ‘সাহসিকতার’ পরিচয় দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল বলেছেন, সিরিয়ার বিমানঘাঁটিতে ওই হামলাই ছিল ‘উপযুক্ত’ জবাব।
যুক্তরাজ্যর এক মুখপাত্র হামলার পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সিরিয়ার রাসায়নিক হামলার প্রতিবাদে বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাশিয়া ও ইরানকে আসাদের পক্ষ থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। পোল্যান্ড সরকারও এই হামলাকে সমর্থন জানিয়ে বলেছে, সিরিয়ায় যুদ্ধ শেষ করতে যে কোনো পদক্ষেপের পক্ষে থাকবে তারা।
তুরস্কের উপ প্রধানমন্ত্রী কুরতুলমুস বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পক্ষকে অবশ্যই আসাদের বিপক্ষে অবস্থান নিতে হবে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা অবৈধ; এটি রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
তার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে উদ্ধৃত করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ‘সার্বভৌম একটি দেশের’ উপর আগ্রাসন, যা পরিচালিত হয়েছে ‘মনগড়া অভিযোগের’ ভিত্তিতে।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র পুতিনের এই মুখপপাত্র বলেন, সিরিয়া ওই রাসায়নিক হামলা চালায়নি বলেই রাশিয়া বিশ্বাস করে। মনগড়া অভিযোগের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জোটের ধারণাকেই নাড়িয়ে দেবে।
হামলার সময় রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই বিমানঘাঁটির কাছে থাকলেও তাদের কেউ হতাহত হননি বলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স।
ইরানও এ হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম কাসেমি বার্তা সংস্থা আইএসএনএ-কে বলেন, “ইরান এ ধরনের একতরফা হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এটা সিরিয়ার সন্ত্রাসীদের শক্তি বৃদ্ধি করবে; এবং তা সিরিয়া এবং এ অঞ্চলের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।”