আগেরবার কারাগার থেকে পালানোর পর ১৩ বছর বাইরে থাকতে পেরেছিলেন মেক্সিকোর ‘মাদক সম্রাট’ হোয়াকিন গুজমান, এবার ধরা পড়লেন ছয় মাসের মধ্যে।
Published : 09 Jan 2016, 08:14 AM
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিয়েতোর টুইটার বার্তা উদ্ধৃত করে শনিবার বিবিসি গুজমানের গ্রেপ্তার হওয়ার খবর জানিয়েছে।
নিজের টুইটারে একাউন্টে প্রেসিডেন্ট লিখেছেন- “অভিযান শেষ হয়েছে, আমরা তাকে ধরেছি।”
কুখ্যাত মাদক চোরাকারবারি গুজমান ছয় মাস আগে মেক্সিকোর সুরক্ষিত কারাগার থেকে পালিয়েছিলেন। কারাগার থেকে পালাতে দেড় কিলোমিটার টানেল খুঁড়েছিলেন তিনি।
এ ‘মাদক সম্রাটের’ ‘সিনালোয়া কার্টেল’ মেক্সিকো ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে কোকেন, হেরোইন, মারিজুয়ানা ও মেথাম্ফেটামাইন পাচারের জন্য কুখ্যাত।
রয়টার্স জানায়, শুক্রবার মেক্সিকোর লো মোচিজ শহরের দক্স হোটেল থেকে গুজমানকে আটক করা হয় বলে ওই হোটেলের এক কর্মচারী নিশ্চিত করেছেন।
ওই হোটেলে গুজমানকে আটকের বেশ কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে; যদিও ছবিগুলোর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
উত্তর-পশ্চিম মেক্সিকোর সমুদ্রতীরবর্তী লো মোচিজ শহরকে গুজমান (যিনি এল চাপো বা পিচ্চি নামে পরিচিত) মাদক সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে অভিহিত করা হয়।
শুক্রবারের অভিযানে মোট পাঁচজন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে বিবিসি। অভিযানে সময় ব্যাপক গুলি বিনিময় ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে স্থানীয়দের বরাতে জানিয়েছে রয়টার্স।
গ্রেপ্তার অভিযানে মেক্সিকোর সেনা, নৌ ও পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এডিমিনিস্ট্রেশন এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্য অংশ নেন বলে মেক্সিকোর এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
গুজমানকে গ্রেপ্তারের খবরে মেক্সিকোকে অভিনন্দন জানালেও অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ নিয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দুর্নীতি ও মানবাধিকার নিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত নিয়েতো সরকারের জন্য একে ‘দারুণভাবে প্রয়োজনীয় বিজয়’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়।
বিশেষ করে গত বছরের জুলাইতে গুজমানের বিমান ভ্রমণের ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর মাদকবিরোধী অভিযানে নিয়েতা দেশটির সরকারের সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।
প্রেসিডেন্ট পেনা নিয়েতো গ্রেপ্তার অভিযানকে ‘অশুভের বিরুদ্ধে সফলতা’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় মেক্সিকো সরকারের আত্মবিশ্বাস আছে।
“এমন কোনো শক্তি নেই, যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারব না আমরা।”
গুজমানের আটক মেক্সিকোকে ‘মাদক সাম্রাজ্যমুক্ত’ করতে নতুন করে আশা জোগাবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
“এ ঘটনা মেক্সিকোর সরকারকে অন্যান্যদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবে। সত্যি হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা পুনঃ প্রতিষ্ঠায় তারা চাইলে এখন থেকে নতুন করে যাত্রাও শুরু করতে পারে,” বলেন যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এডিমিনিস্ট্রেশনের গ্লোবাল অপারেশন বিভাগের সাবেক প্রধান মাইক ভিজিল।
সিনালোয়া প্রদেশের সিয়েরে মাদ্রে পাহাড়ের পাদদেশের গ্রাম লা টুনায় গুজমান জন্ম নেন বলে ধারণা করা হয়। বালক অবস্থা থেকেই মাদক পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ‘শর্টি’ নামে ব্যাপক পরিচিত গুজমান।
১৯৯৩ সালে গুয়াতেমালায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০১ সালে কারা সদস্যদের ঘুষ দিয়ে প্রথমবার জেল থেকে পালিয়েছিলেন তিনি।
এরপর নিজের মাদক সাম্রাজ্য আরও বড় করতে ব্যাপক খুন-খারাপি চালাতে হয় ৫ ফুট ৬ ইঞ্চির এই গুজমানকে। মাদক দলগুলোর মধ্যে শুরু হওয়া এ ‘যুদ্ধে’ কেবল ২০০৬-২০১২’র মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার লোক মারা যায় বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
১৩ বছর পর গুজমানকে ফের গ্রেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। গুজমানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রেও মাদক পাচার ও অর্থ চোরাচালানের অভিযোগ রয়েছে।
যদিও ছয় মাসের মধ্যে ৫৮ বছর বয়সী এ ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ পালিয়ে যাওয়ায় তা বাস্তবায়ন করা যায়নি।
নতুন করে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, গুজমানের হস্তান্তরের ‘সিদ্ধান্ত’ এখনও বলবৎ আছে। অ্যাটর্নি জেনারেল লরেটা লিঞ্চ বলেন, গুজমানকে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাব দিতে হবে।
অবশ্য গুজমানের আইনজীবী গতবছরের অক্টোবরে ‘সম্ভাব্য হস্তান্তর’ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আপিল করায় তাকে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তরে ‘কিছুটা সময়’ লাগতে পারে বলে মেক্সিকো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মালিক এ মাদক সম্রাটকে ২০১৩ সালে শিকাগোর জনগণের ১ নম্বর শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর আগে ১৯২০ সালে সর্বশেষ মাদক সম্রাট আল কাপুনি’কে এ অভিধায় চিহ্নিত করা হয়েছিল।
ব্যালে নৃত্য এবং চলচ্চিত্রের পৃষ্ঠপোষকখ্যাত গুজমান সিনালোয়াসহ মেক্সিকোর বেশ কয়েকটি অঞ্চলের দরিদ্রদের মধ্যে ‘দাতা’ হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়।