Published : 10 Dec 2024, 03:44 PM
মাত্র এক বছরেরও একটু বেশি আগে সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ ও তার স্ত্রীকে চীনে ছয় দিনের এক সফরের সময় উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল। এ সফরের মধ্য দিয়ে সিরিয়ার সাবেক নেতাকে ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা ভাঙার বিরল সুযোগ দিয়েছিল বেইজিং।
আসাদ দম্পতি এশিয়ান গেমসের অতিথি হিসেবে উপস্থিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা’ করে প্রেসিডেন্ট আসাদকে ও সিরিয়ার পুনর্গঠনের বিষয়ে সমর্থনের প্রত্যয় জানান। চীনের গণমাধ্যম আসাদের স্ত্রী আসমাকে স্বাগত জানিয়ে ও তার প্রশংসা করে নিবন্ধ প্রকাশ করে।
কিন্তু শি-র স্পষ্ট সমর্থন পাওয়া ‘স্বৈরাচারী’ আসাদের আকস্মিক পতন মধ্যপ্রাচ্যে চীনের কূটনৈতিক লক্ষ্যের জন্য একটি আঘাত হয়ে এসেছে এবং এ ঘটনা অঞ্চলটিতে বেইজিংয়ের কৌশলের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছে বলে মত বিশ্লেষকদের, জানিয়েছে রয়টার্স।
জঙ্গি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বধীন ইসলামপন্থি বিদ্রোহীদের একটি জোট বিদ্যুৎগতির আক্রমণ চালিয়ে রোববার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক দখল করে নেয় এবং আসাদ সরকারের পতন ঘটায়। এর মাধ্যমে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫০ বছরের রাজত্বের অবসান হয়।
আসাদ সরকারের পতনে তার প্রধান সমর্থক ইরান ও রাশিয়ার প্রভাব আরব বিশ্বে হ্রাস পেয়েছে, এমনটি দেখা হলেও এটি চীনের বৈশ্বিক উদ্দেশ্যের জন্যও একটি ধাক্কা বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আটলান্টিক কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ ফেলো জোনাথন ফুলটন।
তিনি বলেন, “এই অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিণতি গঠন করতে চীনের সামর্থ্য সম্পর্কে অতিরঞ্জিত ধারণা রয়েছে।”
২০২৩ সালে চীন দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষ সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে একটি চুক্তির মধ্যস্থতা করার পর চীনা গণমাধ্যমগুলো ওয়াশিংটনের আধিপত্য থাকা মধ্যপ্রাচ্যে চীনের বাড়তে থাকা ভাবমূর্তির প্রশংসা করেছিল।
চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই বলেছিলেন, তার দেশ বিশ্বব্যাপী ‘হটস্পট ইস্যুগুলো’ সামলাতে একটি গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে।
চীন চলতি বছরের প্রথমদিকে ফিলিস্তিনের ফাতাহ, হামাস ও অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যেও অস্ত্রবিরতির মধ্যস্থতা করেছিল। গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্যও বারবার তাগাদা দিয়েছিল বেইজিং।
কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের বেইজিং নিয়ে যাওয়া এবং চীনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত ঝাই জুনের ‘শাটল কূটনীতি’ সত্ত্বেও ফিলিস্তিনিরা একটি ঐক্য সরকার গঠন করতে পারেনি আর গাজা যুদ্ধও অব্যাহত থাকে।
সাংহাই ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফান হংডা বলেছেন, “বেইজিং যা দেখার আশা করেছিল আসাদের হঠাৎ পতন তেমন কোনো দৃশ্য নয়। চীন আরও স্থিতিশীল ও স্বনির্ভর একটি মধ্যপ্রাচ্য পছন্দ করে, বিশৃঙ্খলা ও মার্কিনপন্থি ঝোঁক চীনের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আসাদের পতন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তারা চীনা নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে বেশি জোর দিয়েছে আর সিরিয়ায় যত দ্রুত সম্ভব স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ‘রাজনৈতিক সমাধানের’ আহ্বান জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়টির মুখপাত্র মাও নিং সোমবার বলেছেন, “সিরিয়ার সঙ্গে চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সব সিরীয় নাগরিকের জন্য।”
এর মাধ্যমে তারা সিরিয়ার ভবিষ্যৎ সরকারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পথ খোলা রেখেছে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।
নেদারল্যান্ডসের হ্রোনিনান বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন-মাধ্যপ্রাচ্য সম্পর্ক বিষয় বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক বিল ফিগারোলা বলেন, “চীন ওই অঞ্চলের একজন অর্থনৈতিক অংশীদার অথবা কূটনৈতিক বা সামরিক শক্তি হিসেবে পশ্চিমকে মৌলিকভাবে প্রতিস্থাপন করতে সত্যিই সক্ষম নয়।”