জর্জিয়ার নারী তামুনা মুসেরিদজে তার জন্মপরিচয় খুঁজতে গিয়ে আবিস্কার করেন তার ফেইসবুক ফ্রেন্ডলিস্টেই ছিলেন বাবা।
Published : 01 Dec 2024, 10:11 PM
অনেকটা রূপকথার গল্পের মতোই ৪০ বছর পর জন্মদাতা বাবাকে খুঁজে পেয়েছেন জর্জিয়ার নারী তামুনা মুসেরিদজে। জন্মপরিচয় খুঁজতে গিয়ে শেষে তামুনা আবিস্কার করেন তার ফেইসবুক ফ্রেন্ডলিস্টেই ছিলেন বাবা।
বিবিসি সেই কাহিনী তুলে ধরে জানিয়েছে, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তামুনা জানতেন না যে, তিনি যাদের কাছে বেড়ে উঠেছেন তারা তার আসল বাবা-মা নন। একদিন ঘরবাড়ি পরিষ্কার করার সময় তার চোখে পড়ে নিজের নাম লেখা একটি জন্মসনদ।
কিন্তু তাতে জন্ম তারিখের মিল ছিল না। তখন থেকেই তাকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল কিনা তা নিয়ে তামুনার মনে সন্দেহ জাগে। এরপর তামুনা আসল বাবা-মাকে খুঁজতে শুরু করেন ২০১৬ সালে। তাকে দত্তক নেওয়া মা সে বছরই মারা গিয়েছিলেন।
পরিচয় খুঁজে পেতে তামুনা ফেইসবুকে একটি গ্রুপও খোলেন। গ্রুপের নাম রাখেন, ‘ভেদজেব’ (আমি খুঁজছি)। বাবার খোঁজ করতে গিয়েই তামুনা উদঘাটন করেন জর্জিয়ায় শিশু পাচার কেলেঙ্কারি, যা কয়েক দশক ধরে চলে এসেছে।
এই পাচারচক্রে মা-বাবাকে মিথ্যা বলে শিশুদের বিক্রি করে দেওয়া হত। বাবা-মাকে বলা হতো, তাদের নবজাতক মারা গেছে। বহু শিশুর জীবন এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তমুনা নিজে একজন সাংবাদিক। তিনি শত শত পরিবারের পুনর্মিলনও করিয়েছেন। কিন্তু নিজের রহস্য সমাধান করতে পারছিলেন না। তিনি সন্দেহ করতেন, তিনিও হয়ত ছোটবেলায় চুরি হয়ে গিয়েছিলেন।
তামুনার অনুসন্ধান সফল হয় গ্রীষ্মকালে। ফেইসবুক গ্রুপের মাধ্যমেই জর্জিয়ার পল্লী অঞ্চলের এক বাসিন্দা জানান, তারা এক নারীকে চেনেন, যিনি ১৯৮৪ সালের সেপ্টেম্বরে তিবলিসিতে গোপনে একটি সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। সেই শিশুর জন্মতারিখ ছিল তামুনার জন্মের সময়ের কাছাকাছি। এমনকি তাদের বিশ্বাস, ওই নারীই ছিলেন তমুনার জন্মদাত্রী মা।
তামুনা তখন সেই নারীর খোঁজ শুরু করেন এবং ফেইসবুকে তার সেই মাকে কেউ চিনলে তাকে জানানোর আবেদন জানিয়ে একটি পোস্ট দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই এক নারী জানান, ওই গোপন সন্তান জন্মদানকারী নারী তামুনার আপন খালা। পরে সেই নারীর ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তামুনা জানতে পারেন সেটি ছিল তার কাজিন।
এই প্রমাণের সূত্র ধরেই পরে তামুনা তার মাকে সত্য স্বীকার করতে রাজি করেন এবং তার বাবার নাম জানতে সক্ষম হন। জানতে পারেন বাবার নাম গুরগেন খোরাভা। তমুনা বলেন, “প্রথম দুই মাস আমার কাছে ঘোরের মতো লেগেছে। ভাবতেই পারিনি, আমার সঙ্গে কি হচ্ছে। ভাবতে পারিনি যে, আমি তাদের খুঁজে পাব।”
তমুনা পরে গুরগেন খোরাভার নাম দিয়ে ফেসবুকে সার্চ দেন এবং দেখতে পান সেখানকার বন্ধু তালিকাতেই রয়েছেন তার বাবা। প্রায় তিন বছর ধরে ফেইসবুক ফ্রেন্ড লিস্টে ছিলেন তিনি। তামুনার জন্ম পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টা অনেকবারই দেখেছেন গুরগেন। কিন্তু কখনোই বুঝতে পারেননি তামুনা তার মেয়ে। নিজেদের পরিচয় জানতে পেরে পরে মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাবা।