এই শুল্কের কেবল একটা ব্যাখ্যাই থাকতে পারে বলে মনে করেন কংক্রিট-মিক্সিংয়ের ব্যবসায়ী রিচার্ড কটল। কী সেই ব্যাখ্যা? “ভুলে করেছে,” বলেছেন তিনি।
Published : 03 Apr 2025, 08:18 PM
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের সব দেশের ওপর নানামাত্রিক যে শুল্ক আরোপ করেছেন, তাতে হেভিওয়েট অনেক দেশের সঙ্গে অ্যান্টার্কটিকে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যন্ত ও জনশূন্য কয়েকটি দ্বীপ এবং তেমন কোনো রপ্তানি পণ্য নেই এমন এক ক্ষুদ্র অঞ্চলও স্থান পেয়েছে, যা স্থানীয় বাসিন্দা এবং কর্মকর্তাদের হতবাক করে দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চল থেকে ৬০০ মাইল দূরের ক্ষুদ্র অঞ্চল নরফোক আইল্যান্ড থেকে আমদানি পণ্যের ওপর ট্রাম্প যে ২৯ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন, তার কেবল একটা ব্যাখ্যাই থাকতে পারে বলে মনে করেন কংক্রিট-মিক্সিংয়ের ব্যবসায়ী রিচার্ড কটল। কী সেই ব্যাখ্যা?
“ভুলে করেছে,” বৃহস্পতিবার তিনি এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে অবস্থিত আগ্নেয় দ্বীপটি মূলত কেন্টিয়া পাম গাছের বীজ রপ্তানি করে, যার বার্ষিক মূল্য এক মিলিয়ন ডলারেরও কম এবং তাদের পাঠানোর বীজের বেশিরভাগ ইউরোপেই যায়।
সে কারণে ট্রাম্পের এই কড়া শুল্ক দুই হাজারের সামান্য বেশি বাসিন্দার দ্বীপটিতে যুগপৎ বিনোদন ও বিভ্রান্তি নিয়ে এসেছে।
“নরফোক আইল্যান্ড বিশ্ব মানচিত্রে ছোট্ট একটি বিন্দু। আমরা বলতে গেলে কিছুই রপ্তানি করি না,” টেলিফোনে বলেন কটল।
ট্রাম্পের শুল্ক তালিকায় চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যে কয়েক ডজন ক্ষুদ্র অঞ্চলও স্থান পেয়েছে, তাদের মধ্যে নরফোক আইল্যান্ডও অন্যতম, যদিও এসব অঞ্চলগুলোতে আদতে কোনো উৎপাদন বা রপ্তানি খাত নেই।
নরফোকের মতোই অস্ট্রেলিয়ার অধীনে থাকা অ্যান্টার্কটিকের হার্ড এবং ম্যাকডোনাল্ড আইল্যান্ডসও ট্রাম্পের শুল্কের আওতায় এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে তাদের গুণতে হবে ১০%। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে- এসব দ্বীপ জনশূন্য। তারা যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করবে কীভাবে?
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার পণ্যে ট্রাম্পের শুল্ক বসেছে ১০ শতাংশ। কিন্তু নরফোক আইল্যান্ডও তো অস্ট্রেলিয়ার অধীনে, তাহলে তাদের ক্ষেত্রে আলাদা শুল্ক কেন? তার জবাব নেই অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের কাছেও।
নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত এই রাজনীতিক অবশ্য ট্রাম্পের পদক্ষেপে স্বস্তির নিঃশ্বাসই ফেলছেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার পণ্যে যে শুল্ক, তা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্ধেক, চীনের এক-তৃতীয়াংশ।
“শেষ যতটুকু মনে পড়ে, নরফোক আইল্যান্ড তো অস্ট্রেলিয়ারই অংশ ছিল। তাদের ক্ষেত্রে আলাদা, উচ্চ শুল্ক আরোপ একেবারেই অপ্রত্যাশিত এবং খুবই অদ্ভুত,” সম্প্রচারমাধ্যম এবিসিকে এমনটাই বলেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্য বলছে, গত তিন বছর ধরেই নরফোক আইল্যান্ডের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি বিদ্যমান।
২০২২ সালে দ্বীপটি ৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল, ২০২৩ সালে তা বেড়ে ৭ লাখ ডলারেও পৌঁছায়, তবে ২০২৪ সালে আবার তা ২ লাখ ডলারে নেমে আসে। প্রত্যেক বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাদের আমদানি ১ লাখ ডলারেই স্থির ছিল।
২০২০ সালে দ্বীপটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ কোটি ১৭ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল, কিন্তু রপ্তানি করেনি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সেবার দ্বীপটিতে কী এসেছিল, তা জানা যায়নি।
নরফোক আইল্যান্ডে উৎপাদন সংশ্লিষ্ট কোনো খাতের কথা বলতে পারেননি এখানকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। তাদের হিসাবে, দ্বীপের প্রধান শিল্প পর্যটন ব্যবসা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক কীটনাশক ব্যবসায়ী বলেন, তারা কোনো পণ্য রপ্তানি না করলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইঁদুরের বিষ আমদানি করেন, তবে তা আসে অস্ট্রেলিয়া হয়ে।
“নরফোক আইল্যান্ডের পণ্যের ওপর ২৯% শুল্ক বসানো হয়েছে? কিন্তু এখানে তো কোনও পণ্যই নেই, তাই এর কোনো প্রভাব পড়বে না,” বলেছেন কর পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মালিক গাই ডানকান।
অবসরপ্রাপ্ত অস্ট্রেলীয় সরকারি কর্মকর্তা ও নরফোক আইল্যান্ড চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মাইলস হাও মনে করছেন, ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে দ্বীপের মানুষজনের খুব একটা উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা নয়।
“উল্টো সবাই মজা পাচ্ছে এই ভেবে যে, আমরা ডনাল্ড ট্রাম্পের মতো কারও নজরে আছি,” বলেছেন তিনি।