রবার্টস বলেন, “ওই সময় হসপিল চরম মানসিক অস্থিরতায় ভুগছলেন যা তাকে খুন করার মত চিন্তা করতে বাধ্য করেছিল।”
Published : 26 May 2024, 01:27 PM
বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরির ঘটনা ধরা পড়ে যাওয়ায় পর আইনের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণ উদ্যোক্তা ফাহিম সালেহকে খুন করেছিলেন তার ব্যক্তিগত সহকারী টাইরিস ডেভন হসপিল।
সেই সঙ্গে ছিল ফরাসি বান্ধবীকে হারনোর ভয়। এই দুই মিলিয়ে ‘তীব্র মানসিক অস্থিরতা থেকে’ হসপিল এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন বলে আদালতকে যুক্তি দিয়েছেন তার আইনজীবী।
নিউ ইয়র্ক পোস্ট লিখেছে, ম্যানহাটন সুপ্রিম কোর্টে শুক্রবার এ মামলার শুনানিতে বিচারকদের সামনে এই ব্যাখ্যা তুলে ধরেন হসপিলের আইনজীবী স্যাম রবার্টস।
তিনি বলেন, “ওই সময় হসপিল চরম মানসিক অস্থিরতায় ভুগছিলেন, যা তাকে খুন করার মত চিন্তা করতে বাধ্য করেছিল।”
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ফাহিম সালেহ ছিলেন রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম পাঠাওয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা। ২০২০ সালের ১৩ জুলাই ম্যানহাটনের লোয়্যার ইস্ট সাইডে ৩৩ বছর বয়সী ফাহিমের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তার খণ্ড-বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এর তিন দিন পর ফাহিমের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী হাসপিলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। হত্যা, চুরি, লাশ গুম, আলামত নষ্ট করাসহ কয়েকটি অভিযোগে হসপিলকে অভিযুক্ত করে এ মামলার বিচার চলছে।
বিচার শুরুর পর হসপিল নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন। তবে তদন্তে উঠে এসেছে, সালেহর ৪ লাখ ডলার সরানোর পর ধরা পড়েন হসপিল। সালেহ তাকে ওই অর্থ ফেরত দেওয়ার সুযোগ দিলেও তার ভয় ছিল, আইনের হাত থেকে তার বাঁচার কোনো সুযোগ নেই।
শুনানিতে রবার্টস বলেন, “হসপিলের ভয় ছিল, প্রেমিকা মেরিন শ্যাভেজ যদি তার ৪ লাখ ডলার চুরি করার কথা জেনে যায়, তাহলে তাকে ছেড়ে চলে যাবেন। ওই পরিস্থিতিতে হসপিল ভেবে দেখেন, তার সামনে দুটো পথ খোলা আছে। হয় তিনি আত্মহত্যা করবেন নয়ত সালেহকে খুন করবেন। হসপিল দ্বিতীয়টি বেছে নেন।”
হসপিলের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে তার মানসিক কষ্ট ও ছোটবেলার যন্ত্রণাকাতর সময়ের তুলে ধরেছেন তার কৌঁসুলীরা।
সালেহর বাড়ি চট্টগ্রামে সন্দ্বীপে। আইবিএমের সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সালেহ আহমেদের ছেলে তিনি।
বাংলাদেশের পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এই তরুণ ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে নাইজেরিয়ায় লাগোসে যৌথ উদ্যোগে অ্যাপভিত্তিক মোটরবাইক রাইড সার্ভিস ‘গোকাডা’ চালু করেছিলেন। তিনি থাকতেন ইস্ট হিউস্টন স্ট্রিটের নিজের কেনা বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট।
পুরো একদিন সালেহর কোনো সাড়া না পেয়ে ওই অ্যাপার্টমেন্টে গিয়েছিলেন তার বোন। ভেতরে ঢুকে তিনি ভয়ঙ্কর এক দৃশ্য দেখতে পান।
তিনি দেখেন ফাহিমের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ ছিল কেটে টুকরো করা। কিছু টুকরো বড় আকারের গার্বেজ ব্যাগেও ভরে রাখা হয়েছে। পাশেই ছিল একটি বৈদ্যুতিক করাত, তখনও সেটির তার ছিল সকেটের সঙ্গে যুক্ত।
আদালদের নথিতে বলা হয়েছে, ওই সময় খুনি ওই অ্যাপার্টমেন্টে লাশ টুকরো টুকরো করে ব্যাগে ভরে সরিয়ে ফেলার কাজ করছিলেন। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই ফাহিমের বোন ওই ভবনে উপস্থিত হন এবং লবি থেকে কলিং বেল চাপেন। সে শব্দেই ঘাতক সবকিছু ফেলে ভবনের পেছনের দরজা ও সিঁড়ি ব্যবহার করে পালিয়ে যায়।
ম্যানহাটনের সহকারী জেলা অ্যাটর্নি লিন্ডা ফর্ড আদালতকে বলেছেন, হসপিল সালেহেকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর নিজেকে বাঁচানোর পরিকল্পনাও আঁটেন।
হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা করে কৌঁসুলিরা বলেছেন, হসপিল সালেহর ফ্ল্যাটে ঢুকেছিলেন মুখে মাস্ক করে। তারপর টেসার (এক ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, যা ব্যবহার করে মানুষকে অচেতন কর যায়) ব্যবহার করে সালেহকে অচেতন করে ছুরিকাঘাত করেন। পরদিন মৃতদেহটি টুকরো টুকরো করেন এবং শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করেন।
হত্যার পর হসপিল ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে সালেহর ঘর পরিষ্কার করেন। তবে একটি ‘অ্যান্টি-ফেলন ডিস্ক’ সেখানে রয়ে যায়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা উদ্ধার করে। ডিস্কটিতে থাকা নম্বরটি টেসারের সঙ্গে মিলে যায়। হত্যাকাণ্ডের এক মাস আগে হসপিল তার ব্রুকলিনের ঠিকানা থেকে সেটি অর্ডার করেছিলেন।
বান্ধবী শ্যাভেজকে হারানোর ভয়ে সালেহকে খুন করার কথা হসপিলের আইনজীবীরা বললেও তদন্তে উঠে এসেছে, হত্যাকাণ্ডের দুদিন পর অন্য এক নারীর সঙ্গে তিনি ঘুরতে গিয়েছিলেন।
কৌঁসুলীরাও আদালতকে বলেছেন হসপিল তার নতুন বান্ধবীর জন্মদিনে দামি উপহার ও কেক পাঠিয়েছিলেন। এসব কেনকাটায় হসপিল চুরির টাকাই ব্যবহার করেন।
হসপিল দোষী সাব্যস্ত হলে তার যাবজ্জীবন সাজা হতে পারে। তবে তার কৌঁসুলীরা আশা করছেন মানসিক অবস্থা বিবেচনায় হসপিলের সাজা কমানো হতে পারে।
আরও পড়ুন:
ফাহিম সালেহ হত্যা:নিজেকে নির্দোষ দাবি সাবেক সহকারীর
ফাহিম সালেহ হত্যাকাণ্ডে ব্যক্তিগত সহকারী গ্রেপ্তার
পাঠাও সহ-প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশিফাহিম সালেহযুক্তরাষ্ট্রে খুন
ফাহিম সালেহহত্যাকাণ্ডে ব্যক্তিগত সহকারী গ্রেপ্তার
পাঠাও সহ-প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশি ফাহিম সালেহ যুক্তরাষ্ট্রে খুন