রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক: যা কিছু জানার আছে

শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে রাজমুকুট পরিয়ে দেওয়া হবে তৃতীয় চার্লসকে, এর মধ্য দিয়ে রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হবেন তিনি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2023, 04:14 PM
Updated : 5 May 2023, 04:14 PM

গত বছর সেপ্টেম্বরে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে যুবরাজ চার্লস উত্তরাধিকার হিসেবে তাৎক্ষণিকভাবে রাজা তৃতীয় চার্লস হিসেবে পরিচিত হন। রাজা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও রাজ্যাভিষেকের আনুষ্ঠানিকতা সে সময় হয়নি। কয়েক মাসের বিস্তারিত প্রস্তুতি শেষে এখন সময় হয়েছে তৃতীয় চার্লসকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজমুকুট পরিয়ে ব্রিটেনের রাজা হিসেবে অভিষিক্ত করার।

বিবিসি জানাচ্ছে, শনিবার ধর্মীয় অনুশাসন আর ব্রিটিশ কেতা মেনে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে অভ্যাগত ও রাজপারিষদদের সামনে ব্রিটেনের রাজা হিসেবে আনুষ্ঠানিক অভিষেক হবে তৃতীয় চার্লসের।

গত ৭০ বছর ধরে ব্রিটেনের রাজমুকুটের উত্তরাধিকারী হিসেবে জীবন কাটিয়ে অবশেষে মুকুট পরতে চলেছেন চার্লস। এই অভিষেক অনুষ্ঠান উপলক্ষে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে কয়েক হাজার অতিথির পাশাপাশি আশপাশে সেন্ট্রাল লন্ডনের রাস্তাগুলোতে উপস্থিত থাকবেন প্রজারা।

এই রাজ্যাভিষেক নিয়ে যা যা জানার আছে, তা তুলে ধরেছে বিবিসি ও সিএনএন।

রাজ্যাভিষেক কী?

প্রাচীনকাল থেকে রাজ্যাভিষেক একটি রীতি হিসেবে বিভিন্ন দেশের রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে জায়গা করে নিয়েছে। সাধারণভাবে এটা নতুন রাজা বা রানির সিংহাসনে আরোহন উপলক্ষে প্রজাদের জন্য একটি আনন্দ উদযাপনের দিন এবং একইসঙ্গে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে রাজাকে প্রজাদের শাসক ও দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা, যা বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন করা হয়।

রাজ্যাভিষেক বা সিংহাসনে আরোহন যেহেতু সাধারণভাবে আনন্দ উদযাপনের ঘটনা, আর আগের রাজা বা রানির মৃত্যুর পর রাজ পরিবার ও প্রজারা যেহেতু কিছু সময় শোক পালন করেন। তাই কিছুটা বিরতি দিয়ে আয়োজন করা হয় রাজ্যাভিষেকের এই আনুষ্ঠানিকতা।

রানী দ্বিতীয় এলিবেথের মৃত্যুর পরপরই উত্তরাধিকার সূত্রে ব্রিটেনের রাজা হয়েছেন তৃতীয় চার্লস। স্বাভাবিকভাবেই সেটা ছিল রাজ পরিবার এবং দেশের জন্য শোকের সময়। ব্রিটেন সর্বোচ্চ সময় ধরে সিংহাসনে থাকা সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী শাসককে বিদায় জানিয়েছে।

আট মাস পরে এখন সময় বদলেছে, রাজ্যাভিষেকের অনুষ্ঠানও তাই ভিন্ন আমেজ বয়ে আনবে। নতুন রাজাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানোর এখনই সময়। প্রজারা নতুন রাজার অভিষেক উদযাপন করবে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অতিথিরা আসবেন এই জাঁকজমকপূর্ণ রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এবং কোটি কোটি মানুষ সরাসরি এই রাজ্যাভিষেকের আনুষ্ঠানিকতা দেখবে।

ইংরেজি ‘করোনেশন’ বা ‘রাজমুকুট পরিয়ে দেওয়া’র শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘করোনা’ থেকে এসেছে যার অর্থ ‘ক্রাউন’ বা ‘মুকুট’। তবে এর ব্যপ্তি শুধু শাব্দিক অর্থেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এই ‘করোনেশন’ হচ্ছে একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে রাজ্য, গির্জা ও রাজ পরিবারের একত্রিত হওয়ার উপলক্ষ, যেখানে রাজা ঈশ্বর ও দেশের সেবা করার শপথ নেন।

বাকিংহাম রাজপ্রাসাদ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই রাজ্যাভিষেকে রাজার আজকের ভূমিকার প্রতিফলন ঘটবে এবং ভবিষ্যতের জন্য দিকনির্দেশনা থাকবে, একইসঙ্গে দীর্ঘকালের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এটা অনুষ্ঠিত হবে।

কত সময় ধরে চলবে রাজ্যাভিষেকের আনুষ্ঠানিকতা?

সাত দশক আগে যখন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেক হয়েছিল, তা ছিল এক এলাহি ঘটনা। তবে সিএনএন বলছে, ব্রিটেনে নতুন শতকের প্রথম এই রাজ্যাভিষেকের আনুষ্ঠানিকতা আগেরটির চেয়ে সংক্ষিপ্ত হবে। গত শতাব্দীতে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত প্রথম রাজ্যাভিষেকের আনুষ্ঠানিকতা তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলেছিল।

বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এবার দুই ঘণ্টার মধ্যেই সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে ফেলা হবে। ব্রিটেনে রাজ্যাভিষেকের এই আনুষ্ঠানিকতার রীতি কমবেশি এক হাজার বছরের পুরানো এবং আয়োজকরা ওই হাজার বছরের পুরানো কাঠামোই অনুসরণ করবেন। তাই অনেকগুলো আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে।

রাজ্যাভিষেকে আসলে কী হবে?

শুধু ইংল্যান্ডের ক্যান্টরবুরির আর্চবিশপই ব্রিটেনের রাজা বা রানির অভিষেকের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার অধিকার রাখেন। সে অনুযায়ী বর্তমান আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি এ আনুষ্ঠানিকতা পরিচালনা করবেন।

ধর্মীয় এই আচার-অনুষ্ঠান কয়েকটি ধাপে বিভক্ত, যার মধ্যে আছে স্বীকৃতি, শপথ, পবিত্র তেলে সিক্ত করা, সিংহাসনে আরোহন, রাজমুকুট পরিয়ে দেওয়া ও সংবর্ধনা বা রাজার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন।

এরপর রাজাকে স্বীকৃতি দানের পালা। এবার শুধু প্রিন্স উইলিয়ামই একমাত্র রয়্যাল ডিউক হিসেবে হাঁটু গেড়ে সম্মান প্রদর্শন করবেন।

এসব আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাজা ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবির থিয়েটারে গিয়ে দাঁড়াবেন এবং জনগণের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করবেন। এবারই প্রথম স্বজনদের পরিবর্তে আর্চবিশপ অব ক্যান্টরবুরি অতিথিদের অ্যাবিতে আমন্ত্রণ জানাবেন।

এর আগে করোনেশনের শপথ হবে, আইন অনুযায়ী দেশ শাসন, দয়া ও ক্ষমার মাধ্যমে বিচার করা এবং চার্চ অব ইংল্যান্ডকে সমুন্নত রাখার শপথ নেবেন রাজা। শপথের পর আর্চবিশপ রাজাকে পবিত্র তেলে সিক্ত করবেন।

এই পবিত্র তেলে সিক্ত করার মুহূর্তটিকে রাজ্যাভিষেকের সবচেয়ে পবিত্র মুহূর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ১৯৫৩ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেকের সময় ওই মুহূর্তটি টিভিতে দেখানো হয়নি।

রাজা চার্লসের এই বিশেষ দিনটির আগে আর্চবিশপ ওয়েলবি তার সঙ্গে দেখা করবেন না। এর কারণ ব্যাখ্যা করে রাজ্যাভিষেকের অফিশিয়াল সুভ্যেনিরে আর্চবিশপ লিখেছেন, “ওই মুহূর্তটি হচ্ছে একটি বিশেষ দায়িত্ব পালনের জন্য জনগণের মাধ্যমে নিযুক্ত হওয়ার একটি উপলক্ষ, যার জন্য ঈশ্বরের সাহায্য দরকার।”

তিনি লিখেছেন, “এটা সেই মুহূর্ত, যখন রাজা সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হন: এই দেশের জনগণকে সেবা করা এবং ঈশ্বরকে সেবা করা।”

এরপর অভিষেক পর্ব, যেখানে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী রাজা পবিত্র করোনেশন রোব পরবেন এবং তার হাতে তুলে দেওয়া হবে রাজ্যের শাসনভারের বিভিন্ন প্রতীক: রাজ গোলক, করোনেশন আংটি, রাজদণ্ড ও অন্যান্য উপঢৌকন।

আনুষ্ঠানিকতার শেষ পর্যায়ে সেইন্ট এডওয়ার্ডের রাজমুকুট রাজার মাথায় পরিয়ে দেওয়া হবে এবং এরপর রাজপুত্ররা ও রাজপরিবারের সদস্যরা নতুন রাজার প্রতি তাদের আনুগত্য প্রদর্শন করবেন।

কয়েকজন ইতিহাসবিদ ধারণা করছেন, এবারের রাজ্যাভিষেকে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার ছাপ থাকবে, তবে বেশিরভাগ পুরানো আনুষ্ঠানিকতাও হয়ত দেখা যাবে।

রাজা তৃতীয় চার্লস কোন রাজমুকুট ব্যবহার করবেন?

রাজ্যাভিষেকের অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকটি উপকরণ– যেমন রাজমুকুট, রাজ গোলক, রাজদণ্ড, আংটি ও অন্যান্য পবিত্র ও প্রতিকী অলংকারে রাজাকে ভূষিত করা হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণটি হচ্ছে সেইন্ট এডওয়ার্ডের রাজমুকুট। এটা অভিষেকের কেন্দ্রীয় ভূমিকায় থাকে, কারণ অভিষেকের মুহূর্তে এই রাজমুকুটটি পরিয়ে দেওয়া হয়।

১৬৬১ সালে রাজা দ্বিতীয় চার্লসের অভিষেক উপলক্ষে এ মুকুটটি গড়া হয়। ধারণা করা হয়, ১১ শতকের ইংল্যান্ডের রাজা এডওয়ার্ড দ্য কনফেসরের শাসনামলে বানানো হয়েছিল এ মুকুট, যা ১৬৪৯ সালে গলিয়ে ফেলা হয়েছিল।

সোনায় গড়া এই রাজমুকুট বেগুনি মখমলের টুপি ও আরমাইন ব্যান্ডে দিয়ে সজ্জিত। তাতে খচিত আছে ৪৪৪টি মূল্যবান পাথর, যার মধ্যে আছে পান্না, নীলা, নীলকান্ত মনির মত রত্ন।

ঐতিহাসিকভাবে, এই রাজমুকুট ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতেই রক্ষিত থাকে, তাই দ্বিতীয় একটি রাজমুকুট গড়া হয় যা রাজা অ্যাবির বাইরে পরতে পারেন।

দ্বিতীয় এই রাজমুকুটের নাম ইমপেরিয়াল স্টেট ক্রাউন, যা সাধারণত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রাজা পরেন, যেমন ব্রিটেনের পার্লামেন্টের স্টেট ওপেনিং অনুষ্ঠানে। এই মুকুটেও দ্যুতিময় ২ হাজার ৮৬৮টি হীরা রয়েছে, যার মধ্যে আছে বিশাল আকৃতির কালিনান টু হীরা।

১৯৩৭ সালে এই মুকুটটি গড়া হয়, যা এরআগে রানি ভিক্টোরিয়ার পরা ইমপেরিয়াল স্টেট ক্রাউনেরই একটি প্রতিরূপ। এই মুকুটে যে খিলানগুলো রয়েছে, তা প্রকাশ করছে যে ইংল্যান্ড কোনো পার্থিব শক্তির অধীন নয়।

এই ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষ করার পর রাজা চার্লস ও তার স্ত্রী ক্যামিলা ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবির ভেতরেই একটি পাথরে নির্মিত ধর্মীয় উপাসনালয় - সেইন্ট এডওয়ার্ডস চ্যাপেলে যাবেন, যেখানে রাজাকে ইমপেরিয়াল স্টেট ক্রাউন পরিয়ে দেওয়া হবে এবং সেখান থেকেই তিনি বাকিংহাম প্রাসাদে ফেরার প্রস্তুতি নেবেন।

রাজ শোভাযাত্রা থাকবে এবার?

এটি একটি রাজকীয় উদযাপন - অবশ্যই রাজ শোভাযাত্রা থাকবে। মুলত দুটি শোভাযাত্রা হবে। প্রথমটি হবে যখন রাজা বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে বের হয়ে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে যাবেন এবং দ্বিতীয় ও আরও বড় শোভাযাত্রাটি হবে যখন তিনি রাজ্যাভিষেকের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে আবার প্রসাদে ফিরবেন। এ সময় রাজা ও রাজপরিবারের সদস্যরা প্রাসাদের বারান্দায় দাড়িয়ে প্রজাদের উদ্দেশে হাত নাড়বেন।

তবে এবারের শোভাযাত্রার পথ ১৯৫৩ সালের রানির অভিষেকের শোভাযাত্রার পথের দৈর্ঘ্যের চেয়ে অনেক সংক্ষিপ্ত হবে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সময় পাঁচ মাইল দীর্ঘ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল।

রাজ্যাভিষেকের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর জন্য রাজা চার্লস বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে ডায়মন্ড জুবলি স্টেট কোচ নামের ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে রওনা হবেন এবং রাজার ঘোড়সাওয়ার দল তার গাড়িকে ঘিরে থাকবে। এই শোভাযাত্রা লন্ডনের অ্যাডমিরালটি আর্চের ভেতর দিয়ে হোয়াইটহল ও পার্লামেন্ট স্ট্রিট পার হয়ে অ্যাবিতে প্রবেশ করবে।  

এই একই পথ পাড়ি দিয়ে রাজা গোল্ড স্টেট কোচ নামের ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে প্রাসাদে ফিরবেন।

বাকিংহাম প্রাসাদে ফ্লাইপাস্ট

রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের রাজ্যাভিষেকের সময় ১৯০২ সাল থেকে এটা এক ধরনের রীতি হিসেবে প্রচলিত হয়ে গেছে যে বাকিংহাম প্রাসাদের সামনে মলে উপস্থিত জনগণকে প্রাসাদের বারান্দা থেকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাবেন সদ্য অভিষিক্ত রাজা বা রানি।

১৯৫৩ সালে অভিষেকের দিনে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তার মা ও স্বামী-সন্তান-পরিজনদের নিয়ে বারান্দায় উপস্থিত ছিলেন এবং সামরিক বিমানের ফ্লাইপাস্ট উপভোগ করেন।

বাকিংহাম প্রাসাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজা চার্লস এবং তার স্ত্রী ক্যামিলাও এই রীতি বজায় রাখবেন, তবে বারান্দায় তাদের সঙ্গে পরিবারের আর কোন সদস্য উপস্থিত থাকবেন, তা জানানো হয়নি।

ছয় মিনিটের ফ্লাইপাস্টে সেনাবাহিনী, রয়্যাল নেভি এবং রয়্যাল এয়ার ফোর্সের সদস্যরা অংশ নেবেন।

যুক্তরাজ্যের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে সামরিক বাহিনীর প্রায় চার হাজার সদস্য অংশ নিচ্ছেন। এটা এ ধরনের আনুষ্ঠানিকতায় যুক্তরাজ্যের সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্যের অংশগ্রহণ।

রাজা তৃতীয় চার্লস কীভাবে তার রাজ্যাভিষেককে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করেছেন?

এ নিয়ে নানা জল্পনা রয়েছে। বিশদ জানতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।

তবে গত শুক্রবার বাকিংহাম প্রাসাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে শোভাযাত্রা নিয়ে রাজা প্রবেশ করার পর ব্রিটেনের রাজা যে ১৫টি ভূখণ্ডের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে গণ্য, তাদের প্রতিনিধিরা প্রবেশ করবেন। প্রতিটি অঞ্চলের পতাকাধারীর সঙ্গে থাকবেন ওই ভূখণ্ডের গভর্নর ও প্রধানমন্ত্রীরা।

এবারই প্রথম প্রটেস্ট্যান্ট নন এমন বিশ্বাসীদের রাজ্যাভিষেকের অনুষ্ঠানে ভূমিকা রাখার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

ক্যামিলা কি রানির মুকুট পরবেন?

হ্যাঁ, তিনি পরবেন। রাজার সিংহাসন আরোহণের আনুষ্ঠানিতা শেষ হওয়ার পর রানিকে পবিত্র তেল দিয়ে সিক্ত করা হবে এবং এর পর তাকেও রাজমুকুট পরিয়ে দেওয়া হবে।

এর আগের তিনজন কুইন কনসোর্ট - রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের স্ত্রী আলেকজান্দ্রা; রাজা পঞ্চম জর্জের স্ত্রী মেরি এবং রাজা চতুর্থ জর্জের স্ত্রী এলিজাবেথের মত চার্লসের স্ত্রী ক্যামিলার জন্য আলাদা করে কোনো মুকুট বানানো হয়নি। বরং তিনি রানি মেরির রাজমুকুট পরবেন। ১৯১১ সালে এই রৌপ্য মুকুট গড়েছিলেন রানি মেরি। তার উদ্দেশ্য ছিল পরবর্তী কুইন কনসোর্টদের জন্য একটি স্থায়ী রাজমুকুট গড়া।

প্রাসাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ক্যামিলা নিজেই এই রাজমুকুট বাছাই করেছেন, তবে মুকুটে সামান্য কিছু পরিবর্তনও করছেন তিনি। প্রয়াত রানীর প্রতি সম্মান জানিয়ে এবং তাকে স্মরণে রাখতে তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা কালিনান থ্রি, ফোর ও ফাইভ নামের হীরাগুলো মুকুটে যুক্ত করছেন ক্যামিলা।

প্রিন্স হ্যারি ও মেগান কি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন?

ডিউক অব সাসেক্স প্রিন্স হ্যারি নিশ্চিত করেছেন, তিনি তার বাবার সবচেয়ে ঐতিহাসিক দিনটিতে উপস্থিত থাকবেন। তবে তিনি একাই আসছেন। তার স্ত্রী মেগান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় তাদের দুই সন্তান- প্রিন্স আর্চি ও প্রিন্সেস লিলিবেটের দেখভালের জন্য থেকে যাচ্ছেন। মেগান যাচ্ছেন না, তার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে যে রাজ্যাভিষেকের দিনটি আর্চির চতুর্থ জন্মদিনেই পড়েছে।

প্রিন্স অ্যান্ড্রু কি থাকছেন?

রাজ পরিবারের সদস্য হিসেবে চার্লসের ছোট ভাই অ্যান্ড্রু এই রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে যেহেতু তার রাজকীয় দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তাই এ অভিষেক অনুষ্ঠানে সম্ভবত তিনি কোনো আনুষ্ঠানিক ভূমিকায় থাকছেন না।

অতিথি হিসেবে আর কারা আমন্ত্রণ পেয়েছেন?

রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের তালিকা নিয়ে জল্পনা চলছেই। রাজপ্রাসাদের পক্ষ থেকে সাধারণত আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রিতদের তালিকা প্রকাশ করা হয় না। সাধারণত আমন্ত্রিত অতিথিরা নিজেরাই তাদের আমন্ত্রণ পাওয়ার কথা প্রকাশ করেন।

সিএনএন জানিয়েছে, সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশগুলোর রাষ্ট্র প্রধান ও সরকার প্রধানরা আমন্ত্রণ পেয়ে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন সেদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন রাজ পরিবারের সদস্যদেরও অতিথি হিসেবে লন্ডনে উপস্থিত হতে দেখা যাবে।

রানি দ্বিতীয় এলিবাবেথের অভিষেকের সঙ্গে এবারের অভিষেকের পার্থক্য কী?

আগেই জানানো হয়েছে, এবারের রাজ শোভাযাত্রার পথ হবে সংক্ষিপ্ত। আরেকটি বড় পার্থক্য হচ্ছে এবার অতিথি তালিকাও ছোট হচ্ছে। আগেরবার, অর্থাৎ ১৯৫৩ সালে আট হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যার জন্য অ্যাবিতে আলাদা করে অতিথিদের বসার জায়গা বানাতে হয়েছিল। এবার অতিথির সংখ্যা দুই হাজার, অর্থাৎ গতবারের চার ভাগের এক ভাগ।

রাজ্যাভিষেক উপলক্ষে আর কী আয়োজন থাকছে?

করোনেশন অনুষ্ঠানের পরদিন, অর্থাৎ ৭ মে, ‘করোনেশন বিগ লাঞ্চ’ এর অংশ হিসেবে ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রান্তে কয়েক হাজার অনুষ্ঠান হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরমধ্যে লায়নেল রিচি, কেটি পেরি ও টেইক দ্যাট উইন্ডসর প্রাসাদে ওই দিন সন্ধ্যায় ‘করোনেশন কনসার্ট’ মাতাবেন।

রাজা ও রানির দাতব্য প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষদের মধ্যে থেকে বাছাইকৃতরা এই কনসার্টে দর্শনার্থী হিসেবে প্রবেশ করতে পারবেন।

এছাড়া রাজ্যাভিষেক উপলক্ষ্যে ব্রিটেনবাসী সোমবার বিশেষ ছুটি উপভোগ করবেন।