পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে নামানোর চেষ্টা করলেও নগ্ন ওই নারী বনেট থেকে সরতে আপত্তি জানান। তাকে গ্রেপ্তারে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে থাকা এক পুরুষ কর্মকর্তাকে ইতস্ততও করতে দেখা গেছে।
Published : 06 Feb 2025, 12:49 PM
ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মাশহাদে পুলিশের গাড়ির বনেটে পুরোপুরি বস্ত্রহীন এক নারীর পদচারণা ও চিৎকার চেঁচামেচির ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল হয়ে গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার হওয়া ভিডিওর ফুটেজে ওই নারীকে ব্যস্ত রাস্তার মাঝে পুলিশের গাড়ির বনেটে দাঁড়িয়ে সশস্ত্র পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করতে দেখা যাচ্ছে। একটু পর তিনি উইন্ডশিল্ডেও চড়ে বসেন।
পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে নামানোর চেষ্টা করলেও নগ্ন ওই নারী বনেট থেকে সরতে আপত্তি জানান। তাকে গ্রেপ্তারে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে থাকা এক পুরুষ কর্মকর্তাকে ইতস্ততও করতে দেখা গেছে, বলা হয়েছে ইউরোনিউজের এক প্রতিবেদনে।
এনডিটিভি লিখেছে, নারীটির এমন কর্মকাণ্ডের কারণ কী, তার কারণ স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, ইরানে নারীদের পোশাক পরিধান নিয়ে একের পর এক এক নিপীড়নমূলক আইনের প্রতিবাদ জানাতেই নগ্ন শরীরে পুলিশের গাড়ির ওপর উঠে যান এই তরুণী।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ ওই নারীর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, কেউ আবার তাকে ইরানের নিবর্তনমূলক আইনবিরোধী প্রতিবাদের প্রতীক অ্যাখ্যা দিচ্ছেন।
এ ধরনের ঘটনা ইরানে নতুন নয়। এর আগে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নারীর অন্তর্বাস পরে ঘোরাফেরার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে তুমুল তর্ক-বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল।
মেহরাবাদ বিমানবন্দরে এক মোল্লার সঙ্গে এক নারীর বাকবিতণ্ডার ভিডিও-ও অনলাইনে ঝড় তুলেছিল। ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, ওই নারী মোল্লার পাগড়ি খুলে ফেলেন এবং চিৎকার করে বলেন, “তাহলে এখন তোমার সম্মান থাকল?”
ইরানজুড়ে নারীদের এমন প্রতিবাদের পক্ষে অনেকেই সংহতি জানাচ্ছেন।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এই নারীদের সাহস সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ী। এটা উৎপীড়নের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বার্তা। আশা করছি তারা অত্যাচার-নির্যাতন থেকে মুক্তি পাবে।”
“এটা বিশুদ্ধ সাহস,” মন্তব্য অপর এক ব্যবহারকারীর।
আরেকজন বলেছেন, “ইরানি নারীদের এমন প্রতিবাদ ও দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে মনপ্রাণ দিয়ে আছি, আশা করছি তারা এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবে।”
ইরানের বাধ্যতামূলক হিজাব আইনে জনসমক্ষে নারীদের শরীর ও চুল ঢেকে রাখতে হয়। এই আইন ঘিরে কয়েক দশক ধরেই বিতর্ক চলছে।
এ কঠোর পোশাক বিধি না মানলে দেশটির নারীদের জেল-জরিমানাসহ কঠোর সব সাজার মুখোমুখি হতে হয়।
অনেক ইরানিই এখন নীতি পুলিশের বৈধতা এবং তাদের আইনের প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এমনকী কট্টরপন্থি অনেক নেতা ও আইনপ্রণেতারাও নীতি পুলিশের সমালোচনা করছেন, যা দেখাচ্ছে ইরানের সমাজের ভেতরেও বাধ্যতামূলক হিজাব পরা নিয়ে বিভেদ প্রকট আকার ধারণ করেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে ইরানের আইনপ্রণেতারা ‘সতীত্ব ও হিজাব’ বিলে অনুমোদন দিয়েছিলেন, যাতে চুল, হাত-পা প্রদর্শন করলে নারীদের জন্য কঠোর সাজা ও জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক নানান মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার সংগঠনের তুমুল প্রতিবাদের মুখে বিলটির কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।