বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আবহাওয়া প্রতিবেদন বলছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি হল ইতিহাসের উষ্ণতম জানুয়ারি।
Published : 06 Feb 2025, 10:51 PM
২০২৪ সাল ইতিহাসের উষ্ণতম বছরের তকমা পেয়েছিল। তবে ২০২৫ সাল হয়ত উষ্ণতম বছর নাও হতে পারে বলে আশা করছিলেন জলবায়ু বিজ্ঞানীরা। যদিও বছরটি ইতিহাসের সবচেয়ে গরম তিনটি বছরের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা প্রবল বলেই আশঙ্কা ছিল তাদের।
এখন দেখা যাচ্ছে, সে আশঙ্কাই সত্য হচ্ছে। দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে নতুন বছরের প্রথম মাস শেষে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আবহাওয়া প্রতিবেদন। তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম মাস।
শিল্প বিপ্লবের আগে, অর্থাৎ ১৮৫০ সালের আগের সময়ের তুলনায় এ বছরের জানুয়ারিতে গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস এ পরিসংখ্যান দিয়েছে। তাদের হিসাবমতে, এবছরের জানুয়ারি মাসের তাপমাত্রা প্রায় ০ দশমিক ১ সেলসিয়াস ডিগ্রি নিয়ে গতবছরের জানুয়ারির রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপ আরও স্পষ্ট হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের গতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।
২০২৪ সালের জুলাই থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছিল। এর আগে, মহাসাগরের উপরিতলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল, যা আবহবিদদের ভাষায় ‘এল নিনো’ পরিস্থিতি হিসেবে পরিচিত।
এই অবস্থায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে। ২০২৪ সালের শুরু থেকেই এর ভয়াবহ প্রভাব দেখা গেছে।
তবে জুলাইয়ের পর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে, যখন প্রশান্ত মহাসাগরের উপরিতল ঠান্ডা হতে শুরু করে। এই পরিবর্তনকে ‘লা নিনা’ বলা হয়, যা সাধারণত বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার বিভিন্ন প্যাটার্নে পরিবর্তন আনে।
সাধারণত ‘লা নিনা’ পরিস্থিতি তৈরি হলে গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে যায়। যদিও প্রশান্ত মহাসাগর জুলাই থেকেই ঠান্ডা হতে শুরু করেছিল, পুরোপুরি ‘লা নিনা’ পরিস্থিতি দেখা যায় ডিসেম্বরের দিকে।
এরপরও জানুয়ারির গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। আর এতেই ধাঁধাঁয় পড়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারের ‘লা নিনা’ যথেষ্ট শক্তিশালী হয়নি, ফলে এর প্রত্যাশিত প্রভাবও দেখা যায়নি। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের গভীরতর সংকেত বহন করছে, যা ভবিষ্যতের আবহাওয়া পূর্বাভাসকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
২০২৫ সালের জানুয়ারির আবহাওয়া নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্টিং (ইসিএমআরডব্লুএফ) এবং কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সি-থ্রিএস)।
তাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ দাবানল দেখা গিয়েছিল, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা এবং উত্তর আমেরিকার কিছু অঞ্চলে।
অস্ট্রেলিয়া এবং ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলের প্রভাব ছিল মারাত্মক, যা বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল থেকে বাতাসে প্রায় ৯০ লাখ মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড মিশেছে।
এই ধরনের দাবানল এবং তা থেকে নিঃসৃত গ্রিনহাউস গ্যাস পরিবেশে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও তীব্র করছে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক কর দিয়ে বলেছেন, এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাইকে লড়তে হবে।
সূত্র: দ্যা গার্ডিয়ান/বিবিসি