প্রায় দুইশ বছর আগের এক রেকর্ড ভেঙে গেল লিজ ট্রাসের বিদায়ে।
Published : 20 Oct 2022, 08:39 PM
এমন এক রেকর্ড গড়ে বিদায় নিচ্ছেন লিজ ট্রাস, যা ভাঙতে চাইবেন না কেউ।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ৪৫ দিনের মধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন তিনি।
আর এর মধ্য দিয়ে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ের প্রধানমন্ত্রীর খাতায় তার নাম উঠে গেছে সবার উপরে।
বিবিসি জানিয়েছে, এতদিন যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে স্বল্পকালীন প্রধানমন্ত্রীর তালিকায় শীর্ষ স্থানে ছিলেন জর্জ কানিং। তিনি ১৮২৭ সালে মারা যাওয়ার আগে ১১৯ দিন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
টোরি দলের নেতা কানিংয়ের সেই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন একই দলের লিজ ট্রাস।
সঙ্কট সামাল দিতে না পেরে বৃহস্পতিবার ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাস।
দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা এবং গভীরভাবে বিভক্ত কনজারভেটিভ পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর বরিস জনসনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন ট্রাস।
বৃহস্পতিবার ডাউনিং স্ট্রিটে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাস বলেন, ব্রেক্সিটের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার সুবিধা নিতে কর কমিয়ে, উচ্চ প্রবৃদ্ধির অর্থনীতি গড়ার একটি লক্ষ্য তার ছিল তার।
“কিন্তু আমি স্বীকার করে নিচ্ছি, আমি এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে অপারগ, যে জন্য কনজারভেটিভ পার্টি আমাকে নির্বাচিত করেছিল।”
ট্রাস জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং এক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন নেতৃত্ব পেতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
৬ সপ্তাহেই বিপর্যয়, লিজ ট্রাসের পদত্যাগ
যার রেকর্ড ভেঙেছে ট্রাসের বিদায়ে, সেই কানিংয়ের দায়িত্বকালও নির্ঝঞ্ঝাট ছিল না, এমনটাই বলা হয়েছে যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে।
তারা লিখেছে, রক্ষণশীল দলের জর্জ কানিং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন এবং মন্ত্রিসভার আরেক সদস্যের সঙ্গে হাতাহাতি করেছেন, এমনকি ‘ডুয়েল’ও লড়েছেন। সে তুলনায় ট্রাস যথেষ্ট স্বস্তিতে ও সম্মান নিয়ে মন্ত্রিসভা পরিচালনা করেছেন।
কানিংয়ের মতো ট্রাসও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব সামাল দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদে এসেছিলেন।
যুক্তরাজ্যের আরেক প্রধানমন্ত্রী স্যার ডগলাস-হোমও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বছর পূর্ণ করতে পারেননি। তিনি ৩৬৩ দিনের জন্য ক্ষমতায় ছিলেন।
যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে স্বল্প মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী হলেও বিশ্বে সবচেয়ে কম মেয়াদের সরকার প্রধানদের তালিকায় ট্রাস এখনও পিছিয়ে আছেন।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন বলছে, ইতিহাসে সবচেয়ে ক্ষণস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানের রেকর্ডটি জার্মানির চ্যান্সেলর জোসেফ গোয়েবলসের।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের খবরে হিটলার ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল আত্মহত্যা করার পরই চ্যান্সেলর হন গোয়েবলস। কিন্তু পর দিন ছয় সন্তানকে বিষ খাইয়ে হত্যার পর তিনি ও তার স্ত্রী বিষপানে আত্মহত্যা করেন।
বিশ্বে প্রেসিডেন্টদের তালিকায় সবচেয়ে কম মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার একটি রেকর্ড উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসনের। যুক্তরাষ্ট্রের নবম প্রেসিডেন্ট হ্যারিসন ছিলেন তার সময়ে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। ১৮৪১ সালে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নেওয়ার ৩২ দিন পর তার মৃত্যু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় প্রথম মারা যাওয়া প্রেসিডেন্ট তিনি। ওই বছর ৪ মার্চ তিনি শপথ নেন এবং ৪ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়।
ইতিহাসবিদদের মতে, মেক্সিকোর পেদ্রো লাসকুরাইন সম্ভবত সবচেয়ে কম সময় ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্টদের একজন। ১৯১৩ সালে এক সেনা অভ্যুত্থানে জেনারেল ভিকটোরিয়ানো হুয়েরতা ক্ষমতা দখলের পর লাসকুরাইনকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেন। অবশ্য তাকে ক্ষমতায় বসানোর মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যেই ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতি বনে যান সামরিক অভ্যুত্থানের নেতা জেনারেল ভিকটোরিয়ানো।