রুশ হামলায় বিকল বিদ্যুৎকেন্দ্র, ভয়ঙ্কর শীতের অপেক্ষায় ইউক্রেইন

শীতকাল শুরু হওয়ায় ইউক্রেইনের অনেক এলাকার তাপমাত্রা এরই মধ্যে হিমাঙ্কের নিচে নেমে গেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2022, 09:05 AM
Updated : 22 Nov 2022, 09:05 AM

রাশিয়ার একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেইনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা প্রায় পঙ্গু হয়ে পড়ায় রাজধানী কিইভসহ একাধিক এলাকার বাসিন্দাদেরকে পুরোপুরি বিদ্যুৎবিহীন কিংবা সামান্য বিদ্যুৎ নিয়েই পুরো শীতকাল কাটিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।

শীতের কারণে এসব এলাকার তাপমাত্রাও এরই মধ্যে হিমাঙ্কের নিচে নেমে গেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশবাসী, বিশেষ করে কিইভ, দক্ষিণপশ্চিমের ভিনিৎসিয়া, উত্তরের সুমাই এবং কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী ওদেসাসহ রুশ হামলায় তুলনামূলক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর বাসিন্দাদেরকে বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

ইউক্রেইনের একাধিক স্থান থেকে ‍রুশ সেনাদের পিছু হটার পর সাম্প্রতি সপ্তাহগুলোতে মস্কো ইউক্রেইনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র মেরেছে; রাশিয়ার ছোড়া রকেট  ইউক্রেইনের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেক ধসিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি। 

“রুশ সন্ত্রাসীদের হামলায় আমাদের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিগত ক্ষতি এতটাই হয়েছে যে আমাদের জনগণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচেতন থাকতে হবে এবং পুরো দিনজুড়েই বিদ্যুৎ পুনর্বন্টন করা লাগবে।

“চেষ্টা করুন, আপনার ব্যক্তিগত বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করতে,” বলেছেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট।

সোমবার ইউক্রেইনের অন্যতম বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার প্রধান বলেছেন, অন্তত আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত লাখ লাখ ইউক্রেইনীয়কে সম্ভবত নিয়মিত বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় থাকতে হবে। দেশটিতে এখনও অসংখ্য মানুষকে প্রতিদিনই এমন অবস্থা পার করতে হচ্ছে।

কিইভে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ওয়াইএএসএনও-র প্রধান সের্গেই কোভালেনকো বলেছেন, শীতের ভয়াবহ ঠাণ্ডা আসার আগেই মেরামত কাজ শেষ করতে কর্মীরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন।

“গরম কাপড়, কম্বল মজুদ করুন; বিদ্যুৎবিহীন দীর্ঘ অপেক্ষায় আর কী কী বিকল্প জিনিস সহায়তা করতে পারে, তা নিয়ে ভাবুন। বাজে পরিস্থিতিতে পড়ে বাধ্য হয়ে করার চেয়ে এখনই এসব করে ফেলা ভালো,” বলেছেন কোভালেনকো।

দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসনের বাসিন্দারা চাইলে যেখানে নিরাপত্তা ও উষ্ণতার ঘাটতি তুলনামূলক কম এমন এলাকায় চলে যাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে শহরটি ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে রুশ সেনারা খেরসনের গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনাই ধ্বংস করে দিয়েছে, বলছে কিইভ। রুশ সেনারা চলে যাওয়ার পর ইউক্রেইনীয় বাহিনী শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

খেরসনের বাসিন্দা বিশেষ করে বয়স্ক, নারী, শিশু এবং অসুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক টেলিগ্রাম বার্তায় ইউক্রেইনের উপপ্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক বলেছেন, একাধিক উপায়ে শহরটি ছাড়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে বাসিন্দারা।

“আপনারা চাইলে শীতের সময়টা দেশের অন্যত্র তুলনামূলক নিরাপদ অঞ্চলে চলে যেতে পারেন,” লিখেছেন তিনি।

কয়েকদিন আগে রুশ বার্তা সংস্থা তাসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আলোচনায় বসতে কিইভের অনাগ্রহের প্রতিক্রিয়াতেই ইউক্রেইনজুড়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে রাশিয়ার হামলা চলছে বলে জানিয়েছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।

সোমবার সন্ধ্যায় ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোইলাক বলেছেন, রুশ সেনারা এখন নিপ্রো নদীর উল্টোপাশ থেকে খেরসনে টানা গোলাবর্ষণ করে চলছে।

খেরসন ছাড়ার পর রুশ সেনারা নদীর পূর্ব পাশে ঘাঁটি গেড়েছে।

“কোনো সামরিক যুক্তি নেই। তারা কেবল স্থানীয়দের ওপর প্রতিশোধ নিতে চাইছে,” বলেছেন তিনি।

মস্কো তাদের ভাষায় ইউক্রেইনকে উগ্র-জাতীয়তাবাদীদের হাত থেকে রক্ষা এবং রুশ ভাষাভাষীদের বাঁচাতে সেখানে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’চালাচ্ছে বলে দাবি করে আসছে, এ ‘অভিযানে বেসামরিকদের লক্ষ্য করে উদ্দেশ্যমূলক হামলার’ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে তারা।

কিইভ এবং পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার কর্মকাণ্ডকে ‘আগ্রাসন চালানোর লক্ষ্যে বিনা উসকানিতে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ’ হিসেবে অভিহিত করছে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে খেরসনের কাছের দনবাস শিল্পাঞ্চলে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। খেরসন থেকে সরানো সেনাদের কিছু অংশ মস্কো দনবাসে পাঠিয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।

সোমবার ইউক্রেইনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রুশ সেনারা দোনেৎস্কের বাখমুত ও আভদিভকায় অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং কাছাকাছি শহরগুলোতে বোমাবর্ষণ করছে।

সোমবার রাশিয়া ও ইউক্রেইন জাপোরিজিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অন্তত ডজনখানেক বিস্ফোরণের জন্যও একে অপরকে দায়ী করেছে।

চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেইনে সেনা পাঠানোর অল্প কিছু সময় পর থেকেই ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণে আছে, যদিও কেন্দ্রটি নিপ্রোর নদীর এমন এক পাশে অবস্থিত যার বেশিরভাগ অংশ ইউক্রেইনীয় বাহিনীর দখলে।

কেন্দ্রটিতে বার বার গোলা হামলা হওয়ার কারণে ১৯৮৬ সালের চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনার মতো বড় ধরনের পারমাণবিক বিপর্যয় ঘটার মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে বলে ভাষ্য জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের।

কাদের ছোড়া গোলায় এ পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে তা যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।

আরও পড়ুন:

Also Read: ইইউ নিষেধাজ্ঞার আগে রাশিয়ার ডিজেল নিতে ইউরোপের হুড়োহুড়ি

Also Read: জাপোরিজিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র ‘পারমাণবিক দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে’