যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনী প্রচারের সময়ই ট্রাম্প চীনের তৈরি পণ্যগুলোতে ৬০% পর্যন্ত চড়া আমদানি শুল্ক আরোপের অঙ্গীকার করেছেন।
Published : 08 Nov 2024, 06:42 PM
যুক্তরাষ্ট্রে নবনির্বাচিত রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের আমলে চীন ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নতুন নতুন পদক্ষেপের প্রকাশ ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প আগেই তার নির্বাচনী প্রচারের সময় চীনের তৈরি পণ্যগুলোতে ৬০% পর্যন্ত চড়া আমদানি শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আর এখন ট্রাম্পের বিজয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দেশকে একটি প্রযুক্তি ‘পাওয়ার হাউজ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া, বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও বাড়তেও পারে।
সম্পত্তির মূ্ল্য পতন, ক্রমবর্ধমান সরকারি ঋণ, বেকারত্ব কোভিড মহামারীর পর থেকে চীনের প্রবৃদ্ধি শ্লথ করে দিয়েছে।
তাই এ বিষয়ে চীনের আইনসভার নির্বাহী সংস্থা ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের (এনপিসি) স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ ঘোষণা আসার ঝুঁকি আগের চেয়ে বেশি।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে চীনা পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন।
চীন বিশ্লেষক বিল বিশপ বলেছেন, “আমি মনে করি আমাদের এটিই বিশ্বাস করা উচিত- ট্রাম্প যখন শুল্ক সম্পর্কে কথা বলেন, তখন তিনি বোঝাতে চান চীন বাণিজ্য চুক্তি থেকে সরে গেছে। কারণ তিনি মনে করেন, চীন এবং কোভিডের ফলেই তিনি ২০২০ সালের নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি।”
তবে ২০২১ সালে ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ছাড়ার পরেও চীনের ওপর ওয়াশিংটনের চাপ কমেনি। কারণ, বাইডেন প্রশাসন ওই পদক্ষেপগুলো জারি রেখেছিল এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে তা বাড়িয়েছিল।
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের প্রথম ঢেউয়েই চীন হিমশিম খেয়েছিল, তবে এবার দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা এখন আরও বেশি নাজুক।
দুই বছর আগে আকস্মিকভাবে কঠোর কোভিড বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের পর থেকে মহামারীর আগের অর্থনৈতিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য লড়াই করছে চীন।
ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পরিবর্তে বরং চীন হতাশাজনক অর্থনৈতিক সংবাদের নিয়মিত মূল কেন্দ্র হয়ে উঠছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এখন আশা করছে, ২০২৪ সালে চীনা অর্থনীতি ৪ দশমিক ৮ শতাংশ প্রসারিত হবে, যা বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রার নিম্নস্তর ৫% পর্যায়ে।
আগামী বছর চীনের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি আরও ৪ দশমিক ৫ শতাংশ কমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ।
কিন্তু কয়েক দশকের অতি দ্রুত প্রবৃদ্ধির শেষে দেশটির নেতারা যে পুরোপুরি অসতর্ক ছিলেন তা নয়। ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, তারা দেশকে দ্রুত প্রবৃদ্ধি থেকে উচ্চমানের উন্নয়নের পর্যায়ে রূপান্তরের পরিকল্পনা করেছেন।
শব্দটি তখন থেকে চীনা কর্মকর্তারা বারবারই উন্নত উৎপাদন এবং সবুজ শিল্প চালিত অর্থনীতিতে বদলে ফেলার কথা বোঝাতে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু কিছু অর্থনীতিবিদ বলছেন, চীন সহজেই সমস্যা থেকে বের হয়ে যেতে পারে না।
মরগান স্ট্যানলি এশিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান স্টিফেন রোচ বলেন, ১৯৯০-এর দশকে জাপান কয়েক দশক ধরে অর্থনীতিতে যে স্থবিরতার মধ্য দিয়ে গেছে, চীন এখন সেই ধরনের স্থবিরতায় পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
তিনি বলেন, এ পরিণতি এড়াতে চীনের উচিত রপ্তানি ও বিনিয়োগ-নেতৃত্বাধীন প্রবৃদ্ধি থেকে সরে আসা।
রোচ আরও বলেন, এতে যে কেবল আরও টেকসই প্রবৃদ্ধি হবে তাই নয়, বরং বাণিজ্য নিয়ে উত্তেজনা এবং চীনের বহিরাগত ধাক্কার মুখে পড়ার ঝুঁকিও কমাবে।
আরও শক্তিশালী এই অর্থনৈতিক মডেল ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ফেরার ফলে সৃষ্ট হুমকি মোকাবেলায় চীনের জন্য সহায়ক হতে পারে।